বড়দিনের আগে রাজ্য সরকারি কর্মীদের 'নতুন বছরের উপহার' দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। বৃহস্পতিবার বিকেলে পার্ক স্ট্রিটের অ্যালেন পার্কে বড়দিনের উৎসবের সূচনা মঞ্চ থেকে ডিএ বৃদ্ধির ঘোষণা করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের ১৪ লাখ কর্মী ও পেনশনভোগীদের জন্য ১লা জানুয়ারি থেকে ৪ শতাংশ বর্ধিতহারে ডিএ বৃদ্ধির ঘোষণা করেন তিনি। যা আদতে লোকসভা ভোটের আগে মুখ্যমন্ত্রীর 'লালিপপ' এবং আদালতের কড়া প্রশ্ন এড়াতে 'কৌশলী' পদক্ষেপ বলে দাবি করেছেন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অদিকারী।
মুখ্যমন্ত্রী বর্ধিত ডিএ ঘোষণার পরই নিজের এক্স হ্যান্ডেলে প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। কেন মমতার ঘোষণা 'লালিপপ' ও 'কোশলী' সোশাল মিডিয়াবার্তায় তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন বিরোধী দলনেতা।
শুভেন্দু লিখেছেন, 'পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী রাজ্য সরকারী কর্মচারীদের জন্য মহার্ঘ ভাতা ৪ শতাংশ বৃদ্ধির ঘোষণা করেছেন। অল ইন্ডিয়া কনজিউমার প্রাইস ইনডেক্সের ১২ মাসের গড় শতাংশ বৃদ্ধির উপর ভিত্তি করে কেন্দ্রীয় সরকার পর্যায়ক্রমে কেন্দ্রীয় সরকারি কর্মচারীদের জন্য বছরে দু'বার মহার্ঘ ভাতা সংশোধন করে। ডিএ বৃদ্ধির সংশোধন সাধারণত প্রতি বছর ১লা জানুয়ারি এবং ১লা জুলাই থেকে কার্যকর হয়।'
বিরোধী দলনেতার দাবি, 'সুতরাং, কেন্দ্রীয়হারে ডিএ-এর তুলনায় বর্তমানে ৪০ শতাংশ ব্যবধানের যে হ্রাস দেখানো হচ্ছে তা অপ্রয়োজনীয়। বিষয়টি একই থাকবে, কারণ কেন্দ্রীয় সরকারী কর্মচারীদের জন্য ফের ডিএ বৃদ্ধির ঘোষণা হবে ২০২৪ সালের ১লা জানুয়ারি। ওইদিন থেকেই যা কার্যকর হবে। সম্ভবত ৪ শতাংশ হারেই ডিএ বাড়ানো হবে। ফলে কেন্দ্র ও রাজ্যের ডিএ-এর হার ৪০ শতাংশ থেকে কমে যাচ্ছে- সেই প্রচার বন্ধ করা হোক।'
এরপরই শুভেন্দুর অধিকারী লিখেছেন, 'সুতরাং, এই ক্ষুদ্র পরিমাণ বৃদ্ধি আসন্ন লোকসভা নির্বাচনের আগে পশ্চিমবঙ্গের সরকারি কর্মচারীদের জন্য নিছক একটি ললিপপ এবং আইন আদালতে আসন্ন আইনি লড়াইয়ের সময় কঠিন প্রশ্নগুলি এড়াতে একটি কৌশল। তার বেশিও না কমও না।'
এ দিন মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, 'এর আগে আমরা ১২৫ শতাংশ ডিএ ঘোষণা করেছিলাম। তার পর পে কমিশন হয়েছে। চার রকমের পে স্কেল রয়েছে এখন। নতুন পে স্কেলে ৬ শতাংশ হারে মহার্ঘ ভাতা ইতিমধ্যে দেওয়া হচ্ছে। আজ বড়দিনের বিকেলে ঘোষণা করছি যে ৪ শতাংশ হারে আরও এক কিস্তি ডিএ ১ জানুয়ারি থেকে দেওয়া হবে। রাজ্য সরকারি কর্মচারী, অধিনস্ত রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা, স্কুল কলেজের শিক্ষক-কর্মচারী মিলিয়ে ১৫ লক্ষ কর্মচারী এর সুবিধা পাবেন।'
এই বৃদ্ধির পরও রাজ্যের ডিএ-এর সঙ্গে কেন্দ্রীয় ডিএ-এর ৩৬ শতাংশ পার্থক্য থাকছে। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার পর যা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন বর্ধিত ডিএ-অর দাবিতে আন্দোলনরত সংগ্রামী যৌথমঞ্চের পদাধিকারীরা। এক্ষেত্রে বৃহস্পতিবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, 'কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষেত্রে ডিএ বাধ্যতামূলক। কিন্তু রাজ্য সরকারের ক্ষেত্রে তা নয়। রাজ্যে ডিএ ঐচ্ছিক।'
মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের ডিএ বৃদ্ধির ঘোষণায় সন্তুষ্ট নয় বর্ধিতহাকে ডিএ-এর দাবিতে আন্দোলনরত সরকারি কর্মীদের সংগ্রামী যৌথমঞ্চ। পুরোটাই মমতার 'ভিক্ষা' বলে দাবি মঞ্চের। আইন ও আন্দোলনের মাধ্যমেই কেন্দ্রীয়হারে ডিএ আদায়ের দাবিতেই অনড় আন্দোলনকারীরা।