নতুন করে করোনা আছড়ে পড়ায়, বেসামাল বিশ্বের একাধিক দেশ। এর মাঝেই উদ্বেগ বাড়িয়ে বিট্রেনে খোঁজ মিলেছে করোনার নতুন XE প্রজাতি। এবার ভারতেও কি ঢুকে পড়ল করোনার এই নয়া স্ট্রেন? আবারও কি একটা ঢেউয়ের কবলে পড়তে পারে দেশ? চলছে চুলচেড়া বিশ্লেষণ।
এর মাঝেই গতকাল বৃহন্মুম্বই পুরসভার তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়, অতি সংক্রামক XE ভ্যারিয়েন্টের খোঁজ মিলল ভারতে। মুম্বইয়ে আক্রান্ত এক মহিলা। প্রাথমিকভাবে জানা গিয়েছে, ওই মহিলা মুম্বইয়ের বাসিন্দা নন। তিনি দক্ষিণ আফ্রিকার বাসিন্দা। কিছুদিন আগেই দক্ষিণ আফ্রিকা থেকে এদেশে এসেছেন। BMC সূত্রের খবর, মঙ্গলবার মুম্বইয়ের মোট ২৩০ জন করোনা আক্রান্তের নমুনা জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য পাঠানো হয়েছিল। যাদের মধ্যে ২২৮ জনের শরীরে করোনার সাধারণ স্ট্রেন ধরা পড়েছে। একজনের শরীরে হদিশ মিলেছে করোনার কাপ্পা স্ট্রেনের। আরেকজন রোগীর শরীরে এই অতিসংক্রামক XE ভ্যারিয়েন্টের হদিশ মিলেছে।
যদিও এই খবর অস্বীকার করেছে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য মন্ত্রক। সরকারি এক সূত্র বলছে মুম্বইয়ের করোনা আক্রান্ত ওই রোগিণী নাকি করোনার নয়া ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তই নন। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানাচ্ছে, ওই রোগিণীর জিনোম সিকোয়েন্সিং-য়ের নমুনাতে XE- ভ্যারিয়েন্টে অস্তিত্ব পাওয়া যায় পুরো বিষয়টি'র উপর স্বাস্থ্যমন্ত্রকের তরফে কড়া নজরদারি চালানো হচ্ছে বলে খবর। যদিও বৃহন্মুম্বই পুরসভা তাদের দাবিতেই অনড় রয়েছে। আর মাঝেই উঠেছে প্রশ্ন! কতটা সংক্রামক এই XE ভ্যারিয়েন্ট? এর মারণ ক্ষমতাই বা কতটা? এই বিষয়ে IE Bangla-এর তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল শহরের বিশিষ্ট চিকিৎসকদের সঙ্গে! নয়া এই ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে কী জানাচ্ছেন তারা আসুন জেনে নেওয়া যাক।
প্রথমেই জেনে নেওয়া যাক কী এই XE ভ্যারিয়েন্ট?
আবারও নতুন স্ট্রেনের সন্ধান! আবারও বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সাবধানবাণী। ওমিক্রনের চেয়েও কয়েকগুণে সংক্রামক ভাইরাসের হদিশ মিলেছে যুক্তরাজ্যে। নয়া এই ভ্যারিয়েন্টের নাম ‘XE’। এযাবৎ যে কটি করোনা প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে তাদের মধ্যে সবচেয়ে সংক্রামক এই ভাইরাস জানিয়েছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। ইতিমধ্যেই করোনায় কাবু এশিয়া-ইউরোপের একাধিক দেশ। তার মাঝেই নয়া স্ট্রেনের খবরে কপালে চিন্তার ভাঁজ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের। তাদের অনেকের ধারণ অনেক দেশেই করোনা সংক্রান্ত নিয়মকানুন শিথিল করা হয়েছে ফলে নয়া স্ট্রেন মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়তে পারে মানুষের মধ্যে। আর এই নয়া স্ট্রেনের হাত ধরেই আসতে পারে পরবর্তী করোনা ঢেউ। BA’1 এবং BA.2 একসঙ্গে চরিত্র বদল করেই করোনার নয়া রূপ ‘XE’-র সৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে হু। সেই সঙ্গে হু এর তরফে জানান হয়েছে নয়া এই প্রজাতির সংক্রমণ ক্ষমতা বি.এ.২ প্রজাতির থেকেও ১০ গুণ বেশি। চলতি বছরের জানুয়ারিতে নয়া এই প্রজাতির সন্ধান মেলে।
নয়া এই ভ্যারিয়েন্ট নিয়ে কী বলছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা
ওমিক্রনের থেকেও শক্তিশালী অতি সংক্রামক এই স্ট্রেন নিয়ে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডাঃ যোগীরাজ রায় বলেন, “এখনই আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই। নতুন প্রজাতির খোঁজ মিলেছে। আক্রান্তের সন্ধানও মিলবে। ভাইরাস মিউটেশনের মাধ্যমে একের পর এক রূপ বদল করবে। তবে এভাবে রূপ বদলের সঙ্গে সঙ্গে সংক্রামক ক্ষমতা বাড়ার পাশাপাশি ভাইরাসের মারণ ক্ষমতা কমবে। এর পাশাপাশি আমাদের মনে রাখতে হবে আমরা সকলেই ভ্যাকসিনেটেড। দু’বছর ধরে এই ভাইরাসের অন্যান্য প্রজাতির সঙ্গে লড়াই করে চলেছি। ফলে আমাদের শরীরেও একটা অ্যান্টিবডি তৈরি হয়েছে যা এই ভাইরাসের বিরুদ্ধে আমাদের সুরক্ষা দেবে। তবে আমাদের সচেতন থাকতে হবে। করোনা ভাইরাস কমে যাওয়া, আর চলে যাওয়ার মধ্যে তফাৎ রয়েছে। আমাদের দেশে এখনও রোজই নতুন করে আক্রান্তের সন্ধান মিলছে। কাজেই আমাদের কোভিড প্রোটোকল মাস্ক পরা, স্যানিটাইজেশন এই বিষয়গুলি মাথায় রেখে চলতে হবে। শিশুদের ক্ষেত্রে রিস্ক ফ্যাক্টর প্রায় নেই বললেই চলে। সেই সঙ্গে শিশুদের টিকাদানের কাজও চলছে দ্রুত গতিতে”।
অ্যাসোসিয়েশন অফ হেলথ সার্ভিসেস অফ ডক্টর’স এর সাধারণ সম্পাদক মানস গুমটা বলেন, “ যে কোন মহামারীর ইতিহাস যদি আমরা দেখি তাহলে আমরা দেখব, কোন কোন ক্ষেত্রে চতুর্থ এবং পঞ্চম পর্যায়ে সেই রোগ মানব সভ্যতার ওপর থাবা বসিয়েছে। করোনা ভাইরাসের ক্ষেত্রেও একই বিষয় আমরা দেখতে পাচ্ছি। তবে কটা ঢেউ আমাদের দেশে আছড়ে পড়বে তা সম্পূর্ণ ভাবেই নির্ভর করছে আমাদের নিজেদের ওপর। কারণ এই ভাইরাস রোজই মিউটেশনের মাধ্যমে তার চরিত্র বদল করে একের প এক নতুন রূপ নিয়ে আমদের সামনে হাজির হবে। সেক্ষেত্রে আমাদের হয়ত আগামী কয়েক বছর এমনকি হয়ত সারাজীবন এই করোনা ভাইরাস কে সঙ্গী করেই জীবনে চলতে হবে। তবে আমাদের নিজেদের মধ্যে সাবধানতাটা একান্ত জরুরি। তা না হলে আবারও আমরা এক ঢেউয়ের সাক্ষী থাকতে পারি”।
অন্যদিকে বিশিষ্ট চিকিৎসক পুন্যব্রত গুঁই বলেন, “অতি সংক্রামক এই ভাইরাস নিয়ে আরও কিছুদিন পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। তার পরই সিদ্ধান্তে আসা দরকার। ইতিমধ্যেই করোনার অন্যান্য স্ট্রেন এখনও রয়েছে তার ওপর আরও একটা স্ট্রেন। আমাদের কিছুটা হলেও বাড়তি সতর্কতা মেনে চলতে হবে। তবে আতঙ্ক নয় সতর্ক থাকাটা দরকার। তবে এই নয়া স্ট্রেন সংক্রামক হলেও এই স্ট্রেনের মারণ ক্ষমতা ডেল্টার তুলনায় কম হবে। কারণ যতবার এই ভাইরাস চরিত্র বদল করবে ততই তার মারণ ক্ষমতা কমে যাবে।
বাচ্চাদের ক্ষেত্রে এই ভাইরাস কতটা প্রভাব ফেলতে পারে এই প্রশ্নের উত্তরে গুঁই বলেন, “বাচ্চাদের শরীরে এমনিতেই রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেশি। ওমিক্রনের ক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছে খুব কম সংখ্যক শিশু এই ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল। তাই বাচ্চাদের নিয়ে অযথা চিন্তার এই মুহূর্তে কোন কারণ নেই। এতদিন পরে তারা তাদের নর্মাল লাইফে ফিরেছে, তাদের সেই জীবন আমাদের উপভোগ করতে দিতে হবে”।