কেষ্টগড় বীরভূমের মল্লারপুরের সভায় এমএলএ ফাটাকেষ্টর কায়দাতেই দলীয় কর্মীদের মনোরঞ্জনের চেষ্টা করলেন রাজ্য বিজেপি নেতা তথা ড্যান্স দুনিয়ার মহাগুরু মিঠুন চক্রবর্তী। নিমিতলায় দলের প্রকাশ্য সাংগঠনিক সভার মঞ্চ থেকে তিনি এমএলএ ফাটাকেষ্টর কায়দায় চটজলদি ফল দেওয়ার মতই কর্মীদের সমস্যা মেটানোর চেষ্টা করলেন।
আশ্বাস দিলেন রাজ্যে বিজেপি ক্ষমতায় এলে কর্মীরা তো বটেই, স্থানীয় বাসিন্দাদেরও যাবতীয় সমস্যা ঘুচে যাবে। তবে, আলাদা করে কোনও দায়িত্ব নেওয়া নয়। কর্মীদের বাড়ি না-পাওয়া, আর অন্যান্য সমস্যার জন্য স্থানীয় বিজেপি নেতাদেরই সমাধানের জাদুকর হিসেবে সভায় কর্মীদের সামনে তুলে ধরলেন মহাগুরু।
তার মধ্যেই মঞ্চের সামনে দাঁড়িয়ে থাকা এক কর্মী ছুড়ে দিলেন অস্বস্তিকর প্রশ্ন, 'দেশের উন্নতি হচ্ছে কোথায়?' নানা কায়দায় সেই প্রশ্ন এড়িয়ে বিষয়টিকে দেশ থেকে রাজ্যস্তরে নিয়ে এলেন মহাগুরু। সেখান থেকে স্থানীয় নেতাদেরস্তরে। যেন, এই স্থানীয় নেতারাই বিজেপির রাজ্য নেতা। যাঁরা সমস্যায় পড়লেন, তাঁদের বোঝালেন, এই স্থানীয় নেতারা না-পারলে, তবেই যেন স্থানীয় বাসিন্দারা মহাগুরু বা মিঠুন চক্রবর্তী অর্থাৎ তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন।
ঘটনার সূত্রপাত ঘটে, সভায় মঞ্চের সামনে উপস্থিত এক মহিলার বক্তব্যকে ঘিরে। তিনি মহাগুরুকে বলেন, 'স্যার আমরা ২২ বছর ধরে ভাড়া বাড়িতে থাকছি। আবাস যোজনায় বাড়ি পাইনি।' জবাবে এমএলএ ফাটাকেষ্টর কায়দায় মিঠুন চক্রবর্তী মঞ্চ থেকে বলেন, 'আপনার ভাড়া দেওয়ার দিন শেষ।' এই ভাড়া দেওয়ার দিন শেষ করতে ওই মহিলাকে কী করতে হবে, তা দেখাতে গিয়ে মিঠুন দেখিয়ে দেন মঞ্চে উপস্থিত স্থানীয় বিজেপি নেতাদের।
সভাস্থলের সামনে উপস্থিত ওই মহিলাকে জানান, মঞ্চে উপস্থিত স্থানীয় বিজেপি নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। তাঁরা কিছু করে দিতে না-পারলে, তবে যেন ওই মহিলা তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তবে, কীভাবে ওই মহিলা মহাগুরুর সঙ্গে যোগাযোগ করবেন, সভায় সেটা খোলসা করেননি সদ্য রাজ্য বিজেপির পদ প্রাপ্ত এই নেতা।
মধ্যে তাঁর কথা চলাকালীন সভার নীচে জটলা থেকে লাগাতার কথাবার্তা চলতে থাকায়, মিঠুনের কণ্ঠস্বর বারবার চাপা পড়ে যেতে থাকে। এরপরই অভিনেতার স্বভাবসিদ্ধ ভঙ্গিমায় তাঁকে বলতে শোনা যায়, 'ও-ই'। সভামঞ্চ থেকেই তাঁকে বলতে শোনা গেল, 'হঠা না ইয়ার।' নিজের বাড়ি না-থাকার কথা যে মহিলা জানিয়েছিলেন, তিনি আপ্লুত হয়ে মঞ্চের কাছাকাছি চলে আসার চেষ্টা করেন। মিঠুন চক্রবর্তীকে প্রণাম করার চেষ্টা করেন।
আরও পড়ুন- ভাঁওতা দিয়ে টাকা নিয়ে বেপাত্তা ছিলেন নেতা, দেখা পেতেই বেদম প্রহার জনতার
সেসব দেখে মিঠুন মঞ্চ থেকেই মাইক হাতে বলতে শুরু করেন, 'এখানে আসবেন না। পড়ে যাবেন। অনেক পুলিশের ব্যবস্থা আছে।' ওই মহিলা জানান, সমস্যা মিটে যাওয়ার আশ্বাস পাওয়ায় তিনি মহাগুরুকে প্রণাম করতে চাইছেন। তা দেখে মিঠুন মঞ্চ থেকে বলা শুরু করেন, 'আমাকে প্রণাম করতে হবে না। আমি এসব করতে আসিনি ভাই। কাঁদবেন না, একদম কাঁদবেন না।'
এরপরও সভায় চলতে থাকে, কর্মীদের সঙ্গে মিঠুনের এরকম হাসি-কান্নাজোড়া আলাপচারিতা, সংলাপ। সভামঞ্চের সামনে উপস্থিত এক স্কুলপড়ুয়া জানায়, মল্লারপুরে বালি মাফিয়াদের লাগামছাড়া দৌরাত্ম্য চলে। বালি মাফিয়াদের গাড়ি নিয়ন্ত্রণহীনভাবে চলাচল করে। তাই তাদের স্কুলে যাতায়াতে অসুবিধা হয়। উপায় বাতলাতে গিয়ে মিঠুন ছাত্রছাত্রীদের রাস্তার ওপর ব্যাগপত্র নিয়ে বসে পড়ার পরামর্শ দেন।