দুর্গাপুরের কয়লা ব্যবসায়ী রাজু ঝা খুনে বিস্ফোরক তথ্য প্রকাশ্যে এল। গরু পাচারের অন্যতম কিংপিন আব্দুল লতিফের গাড়িতেই নৃশংসভাবে খুন হন রাজু ঝা। খুনের আগে ওই গাড়িতে চেপেই রাজু-ব্রতীনের সঙ্গে এসেছিলেন লতিফও। পুলিশকে লেখা অভিযোগপত্রে বিস্ফোরক এই তথ্য জানিয়েছেন শেখ আব্দুল লতিফের গাড়িচালক নূর হোসেন। লতিফের গাড়িচালকের লেখা সেই চিঠিই এবার হাতে এসেছে ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলার। ওই দিন ঠিক কী ঘটেছিল? শক্তিগড় থানার পুলিশকে লেখা চিঠিতে সব 'তথ্য' বিশদে জানিয়েছেন লতিফের গাড়িচালক শেখ নূর হোসেন।
শক্তিগড় থানার পুলিশকে লেখা চিঠিতে লতিফের গাড়িচালক নূর হোসেন জানিয়েছেন, প্রতিদিনের মতো ১ এপ্রিল সকাল ৮ টায় আব্দুল লতিফের বাড়িতে তিনি গিয়েছিলেন। ওই দিন আনুমানিক বেলা দেড়টা নাগাদ লতিফকে ইলামবাজার থেকে গাড়িতে চাপিয়ে দুর্গাপুরের দিকে তিনি রওনা দেন। দুর্গাপুরের ভিড়িঙ্গি মোড় থেকে গাড়িতে তোলা হয় ব্রতীন মুখোপাধ্যায়কে। এই ব্রতীন রাজু ঝার ঘনিষ্ঠ বলে জানা গিয়েছিল। এরপর দুর্গাপুর সিটি সেন্টারে এসে পৌঁছোয় গাড়ি। সেখানেই রাজু ঝা দাঁড়িয়েছিলেন বলে জানিয়েছেন লতিফের গাড়িচালক।
আরও পড়ুন- বাম-কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে বিজেপিও, সোসাইটির ভোটে খড়কুটোর মতো উড়ে গেল তৃণমূল!
লতিফ এবং ব্রতীন দুজনেই গাড়ি থেকে নেমে রাজু ঝা'য়ের ফরচুন হোটেলে ঢুকে যান বলে জানিয়েছেন নূর হোসেন। এরপর সন্ধেয় লতিফ-ব্রতীনের পাশাপাশি গাড়িতে উঠে পড়েন রাজু ঝাও। সন্ধে ৬.১০ নাগাদ ওই দিন তাঁরা কলকাতার দিকে রওনা দিয়েছিলেন বলে জানান তিনি। শক্তিগড়ের ল্যাংচা হাবে রাজু ঝায়ের কথামতোই সন্ধে ৭-৩৫ নাগাদ গাড়ি দাঁড় করানো হয়েছিল। ওখানে রাজু ছাড়া সকলেই গাড়ি থেকে নেমে গিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন লতিফের গাড়িচালক। সকলেই ঝালমুড়ি কিনে ফের গাড়িতে উঠে পড়েন বলে জানান তিনি।
আরও পড়ুন- ‘রামচন্দ্রকে উৎসর্গ করে যে কোনওদিন শোভাযাত্রা বের হতেই পারে’, টুইট শুভেন্দুর
এরপর ব্রতীন মুখোপাধ্যায় নূর হোসেনকে গুটখা কিনতে বলায় গাড়ি থেকে নেমে পড়েন তিনি। এরপরেপই ঘটে যায় ভয়াবহ সেই ঘটনা। পুলিশকে লেখা চিঠিতে লতিফের গাড়িচালক লিখেছেন, 'আমি গাড়ির দিকেই আসছিলাম। দেখি তিনজন লোক গাড়িতে গুলি করছে। আমি চিৎকার করে লোকজন ডাকা শুরু করি। এসময় নীল রঙের একটি গাড়ি চেপে কিলাররা কলকাতার দিকে পালিয়ে যায়। ওই সময় থেকেই মালিককে আর দেখতে পাইনি। এই সময় পুলিশ আসে। পুলিশ এলে আমি গাড়ি চালিয়ে অনাময় হাসপাতালে যাই। সেখানেই ডাক্তাররা রাজু ঝাকে মৃত ঘোষণা করে।'
আরও পড়ুন- ‘ভোটব্যাঙ্ক ঠিক রাখতে আক্রমণ-মিথ্যা মামলা’, তৃণমূলকে তুলোধনা শুভেন্দুর
রাজু ঝা খুনের পরপরই সোশ্যাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। সেই ভিডিওতেই দেখা গিয়েছিল গরু পাচারকারীদের অন্যতম কিংপিন আব্দুল লতিফকে। যে গাড়িতে রাজু ঝা খুন হয়েছিলেন সেই সাদা গাড়ির সামনে ফোনে কথা বলতে দেখা গিয়েছিল সাদা জামা-নীল প্যান্ট পরিহিত এক ব্যক্তিকে। ওই ব্যক্তিই আব্দুল লতিফ বলে দাবি। বীরভূম জেলা তৃণমূল সভাপতি অনুব্রত মণ্ডল ঘনিষ্ঠ এই লতিফ। রাজু ঝা খুনে লতিফের ভূমিকা এখন আতসকাঁচের নীচে। ঘটনার পর থেকে কোনও খোঁজ নেই তাঁর। তবে কি পরিকল্পনা করেই রাজু ঝাকে খুন করা হয়েছিল? খুনের পিছনের আসল কারণ কি? সবটাই এখনও ধোঁয়াশা।