ভারতে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে করোনার তৃতীয় ঢেউ। আর এই মারণ ভাইরাস থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে টিকা করণে। তবে দেশ তথা তথা বিদেশেও কয়েকটি ক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, যে টিকা নেওয়ার পরেও করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন মানুষ। সম্প্রতি সৌরভ গাঙ্গুলি থেকে শুরু করে বাবুল সুপ্রিয়, অরূপ বিশ্বাস সহ অনেকেই করোনার দুটি ডোজ নেওয়ার পরও এই মারণ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। জানা গিয়েছেন সম্প্রতি হরিয়ানার ৬৩ জন ওমিক্রন পজিটিভ রোগীর ক্ষেত্রে ৫৮ জনই করোনার দুটি ডোজ নিয়েছিলেন। কাজেই ভ্যাকসিন নিলেও কিন্তু সংক্রমণের আশঙ্কা থেকেই যাচ্ছে। এক্ষেত্রে ভ্যাকসিন নেওয়ার পর কোন কোন দিকে বিশেষ নজর রাখা উচিত অথবা কেনই বা ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও মানুষ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন সেই বিষয়ে নিজেদের মতামত জানালেন বিশেষজ্ঞরা।
ভ্যাকসিন নেওয়া হয়ে গেলেও কেন হচ্ছে করোনা?
এই বিষয়ে বিশিষ্ট ভাইরোলজিষ্ট অমিতাভ নন্দী বলেন, ‘ভ্যাকসিন নেওয়ার উদ্দেশ্য আমাদের বুঝতে হবে। প্রথমে ভ্যাকসিনকে সুরক্ষা কবচ হিসাবে সামনে খাঁড়া করা হয়েছিল। কিন্তু ভ্যাকসিন নেওয়ার পর থেকেই এর কার্যকারিতা সম্পর্কে আমাদের সামনে অন্য তথ্য সামনে এলো। বলা হল, ভ্যাকসিন নেওয়ার পরও আমাদের কোভিড প্রোটোকল মেনে চলতে হবে আর তারপর থার্ড ওয়েভে কাতারে কাতারে মানুষ করোনার নয়া প্রজাতিতে আক্রান্ত হচ্ছেন। এর প্রধান যে কারণ, তা হল ভ্যাকসিন রোগের বিরুদ্ধে যে পরিমাণ অ্যান্টিবডি তৈরি করবে বলে ভাবা হয়েছিল তা করতে সেটি সম্পূর্ণ ভাবে ব্যর্থ’।
ভ্যাকসিন আনার ক্ষেত্রে তাড়াহুড়া করা এর অন্যতম প্রধান কারণ বলে মনে করছেন তিনি। তাঁর মতে কিছু সুরক্ষা পাওয়া গেলেও করোনা সংক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য ভ্যাকসিন পুরোপুরি ব্যর্থ। কারণ ওমিক্রন নয় অনেকেই ডেল্টা ভাইরাসেও ফের আক্রান্ত হচ্ছেন। ডাক্তার নন্দী বলেন, যে কোন ভ্যাকসিনের লক্ষ থাকে দুটি, একটি সুরক্ষা অন্যটি, তার পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া। এখানে দেখা যাচ্ছে টিকার কার্যকারিতা রোগের রিরুদ্ধে লড়াইয়েই সীমাবদ্ধ। সংক্রমণ ঠেকাতে নয়'।
অপর দিকে চিকিৎসক মানস গুমটা জানাচ্ছেন, ‘ভ্যাকসিন একটি বুস্টার হিসেবে কাজ করে, যা জ্বর বা অন্যান্য উপসর্গ থেকে শরীরকে রক্ষা করতে সাহায্য করে। অর্থাৎ এটি সাহায্যকারী হিসেবে কাজ করে। কিন্তু ভ্যাকসিন নেওয়ার পর সচেতন থাকার ক্ষেত্রে ক্ষেত্রে কোনোভাবেই ঢিলেমি দেওয়া চলবে না’।
পাশাপাশি এই প্রসঙ্গে চিকিৎসক সৌম্যজিত গুহ জানাচ্ছেন, ভ্যাকসিন শরীরে একটা মাত্রা পর্যন্ত শক্তি দেয়। এটি দ্বিতীয়বার সংক্রমণের একটি কারণ বটে। এর কারণ হিসেবে ওই চিকিৎসক জানাচ্ছেন, ‘শরীর অনুসারে সকলের ইমিউনিটি ক্ষমতা আলাদা আলাদা। ভ্যাকসিন অনেকদিন আগে নেওয়া হলে সেক্ষেত্রে সেটির কার্যকারিতা কিছুটা কমতে পারে। ফলে শরীরে ভাইরাসের সংক্রমণ ঘটতে পারে। তবে ভ্যাকসিন নিলে সংক্রমণের আশঙ্কা অনেকটাই কমে যায় বলেও জানাচ্ছেন তিনি’।
প্রখ্যাত চিকিৎসক ইন্দ্রনীল চৌধুরি জানিয়েছেন, "করোনা ভ্যাকসিন নিলেও আবার করোনা হবে এই আশঙ্কা ভুল। আর এই আশঙ্কার উপর ভর তরে যদি ভ্যাকসিন না নেন তাহলে তা অনুচিত। ভ্যাকসিন নিলে সংক্রমণ ও মৃত্যুর ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায় বলে জানাচ্ছেন তিনি। কিন্তু ভ্যাকসিন নেওয়ার পরে অ্যান্টিবডি তৈরি হওয়া পর্যন্ত সময়কাল খুব গুরুত্বপূর্ণ। এই সময়ে কোভিড বিধির যথাযথ পালন বাঞ্ছনীয়। তার পরও মেনে চলতে হবে যথাযথ কোভিড বিধি। না হলেই বিপদ।
ভ্যাকসিন নেওয়া কতটা জরুরি?
কারও কারও মনে প্রশ্ন রয়েছে, করোনা থেকে বাঁচতে কতটা সাহায্য করছে ভ্যাকসিন? এক্ষেত্রে কোনও কোনও বিশেষজ্ঞ মনে করছেন, ভ্যাকসিনের একটি ডোজ নেওয়ার ২ সপ্তাহ পর সেটি কাজ করতে শুরু করে। এর ফলে ৫০-৬০ শতাংশ সুরক্ষিত হওয়া যায়। আবার কেউ কেউ বলছেন ভ্যাকসিনের নিয়ে প্রায় ৮৫ শতাংশ আর দ্বিতীয় ডোজ নেওয়ার পর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৯৫ শতাংশে। এই নিয়ে চিকিৎসক সমাজ মনে করছেন, ভ্যাকসিন নেওয়া মানে করোনা থেকে সুরক্ষা নয়। ভ্যাকসিন নেওয়া মানে একটা সুরক্ষা বলয় তৈরি করা যাতে ভবিষ্যতে করোনা হলে তা প্রাণঘাতী না হয়ে উঠতে পারে।
ভ্যাকসিন নেওয়ার পর কী করা উচিত?
যাঁরা ভ্যাকসিন নিচ্ছেন তাঁদের অনেককেই দেখা যাচ্ছে আর সঠিক ভাবে মাস্কের ব্যবহার করছেন না। ভ্যাকসনি অ্যান্টিবডি তৈরি করতে ২ সপ্তাহ সময় নেয়। কিন্তু তা সত্ত্বেও প্রত্যেকেরই কোভিড গাইডলাইন মেনে চলা উচিত। আর ভাইরাস প্রবেশও করে নাক দিয়েই। তাই ভ্যাকসিন নেওয়ার পরেও মাস্ক ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।