Advertisment

সংক্রান্তিতে বর্ধমানের আকাশজুড়ে ঘুড়ির মেলা, নেপথ্যের কারণ জানলে আবাক হবেন

বিশ্বকর্মা পুজোর পাশাপাশি বর্ধমানে ঘুড়ি ওড়ে মকরন সংক্রান্তিতে!

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Why do kites fly in Makar Sankranti in Burdwan

শহরজুড়ে ঘুড়ির পসরা। ছবি- প্রদীপ চট্টোপাধ্যায়

বিশ্বকর্মা পুজোর দিন ঘুড়ি ওড়ানোর রেওয়াজ রয়েছে পশ্চিম বাংলায়। কিন্তু মকর সংক্রান্তির দিন সারা দেশের পাশাপাশি বর্ধমানের বাসিন্দারাও বিশেষ একটি ধর্মীয় বিশ্বাসকে আঁকড়েই ঘুড়ি ওড়ান। এই বিশ্বাসের নেপথ্যে রয়েছে, বিষ্ণুর সপ্তম অবতার শ্রী রামচন্দ্র। দেশের হিন্দু সম্পদায়ের মানুষজন বিশ্বাস করেন, ভগবান রামচন্দ্র মকর সংক্রান্তির দিন আকাশে ঘুড়ি উড়িয়ে ছিলেন। কথিত আছে রামচন্দ্রের ওড়ানো ওই ঘুড়ি ইন্দ্রলোকে গিয়েছিল।সেই বিশ্বাস থেকেই মকর সংক্রান্তির দিন দেশে ঘুড়ি ওড়ানোর প্রচলন শুরু হয়। যা আজও জারি বর্ধমানে।

Advertisment

মকর সংক্রান্তির দিন সকলা থেকে শুধু ঘুড়িতে ছেয়ে যায় বর্ধমানের আকাশ। শুধু শহর বর্ধমান নয়, দামোদরের তীরে থাকা সদর ঘাট সহ জেলার গ্রামীন এলাকার বাসিন্দারাও রবিবার ঘুড়ি ওড়ানোয় মাতেন। যার রেশ সোমবারও অব্যাহত ছিল। কোথাও দেখা যায় ঘুড়ি কাটা যাওয়ায় কাউকে হতাশা প্রকাশ করতে। আবার কোথাও অন্যের ঘুড়ি কাটতে পেরে 'ভো কাট্টা' ধ্বনিতে উল্লাসে মেতে ওঠার ছবি।

একসময় মকর সংক্রান্তির অনেক আগে থেকেই শুরু হয়ে যেত ঘুড়ি ওড়ানোর সুতোয় মাঞ্জা দেওয়া।

চাইনিজ মাঞ্জা সুতো বাজারে আসার পর থেকে সেই সব এখন লাটে উঠেছে। সাবেকি ঘুড়ি ছাড়াও

বাজার ছেয়েছে হাল ফ্যাশানের ঘুড়িতে।

ঘুড়ি ওড়ানো নিয়ে বর্ধমানবাসীর উচ্ছাসের অন্ত নেই। তার পরিপ্রেক্ষিতেই আর কয়েক দিনের মধ্যে রাজার শহর বর্ধমানের সুভাষপল্লী সহ সদরঘাটে দামোদরের দুই পাড়ে হতে চলেছে ঘুড়ির মেলা। শহর বর্ধমানের বাসিন্দা ঈশা মণ্ডল, কৌস্তভ রায়চৌধুরী বলেন, 'কোভিডের কারণে গত দু’বছর সেই অর্থে সবাই ঘুড়ি ওড়াতে পারেনি। কোভিডের প্রভাব ফিকে হওয়ায় এই বছর বহু মানুষ ইচ্ছে মতো ঘুড়ি উড়িয়েছেন,

আনন্দ করেছেন। ঘুড়ির মেলা হলে বর্ধমানবাসী আরও বেশি আনন্দ করতে পারবেন।'

ইতিহাস বিদ সর্বজিৎ যশ অবশ্য বর্ধমানবাসীর মকর সংক্রান্তিতে ঘুড়ি ওড়ানোয় মাতোয়ারা হওয়ার সঙ্গে ধর্মীয় বিশ্বাসের চাইতেও বর্ধমানের রাজ আমলে ইতিসাসকেই মান্যতা দিয়েছেন। তিনি বলেন, টরাজা মহতাব চাঁদের আমলের শেষ দিকে শহর বর্ধমানে ঘুড়ি ওড়ানোর প্রথা শুরু হয়। আগে রাজবাড়িতে ঘুড়ি ওড়ানো হত। তারপর মকর সংক্রান্তির দিন দামোদরের সদরঘাটে ময়ূরপঙ্খী মেলা হতো। সেই মেলায় জেলার দক্ষিণ দামোদর এলাকার বাসিন্দারা গরুর গাড়িকে ময়ূরের মত সাজিয়ে নিয়ে আসতেন। ময়ূরপঙ্খী মেলায় গানের লড়াই হত। মুলত রাধা-কৃষ্ণ নিয়েই গান হতো। যে শিল্পী ভালো গান করে রাজার মন জয় করতেন, তাঁকে রাজা পুরস্কার দিতেন। তবে রাজ আমলের অবলুপ্তির সঙ্গেই সেসব বন্ধ হয়ে গিয়েছে। রয়ে গিয়েছে মকর সংক্রান্তিতে ঘুড়ি ওড়ানোর চল।'

বিজ্ঞান মনস্ক ব্যক্তিরা আবার মনে করেন, ঘুড়ি ওড়ানো নিয়ে মানুষের বিশ্বাসের সঙ্গে সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে বিজ্ঞানও। তাদের মতে, মকর সংক্রান্তির দিন ফাঁকা জায়গায় রোদের মধ্যে যদি ঘুড়ি ওড়ানো হয়, তাহলে একজন ব্যক্তি সূর্য থেকে শক্তি পেয়ে থাকেন। শীতকালে সূর্যের উত্তাপ স্বাস্থ্যের পক্ষেও উপকারী। এ ছাড়া ঘুড়ি ওড়ানোর সময় যে কোন মানুষ মস্তিষ্কের ব্যবহারের সঙ্গেই শারীরিক কসরৎও হয়ে তাকে।

East Burdwan kites burdwan
Advertisment