মঙ্গলবার থেকে ফের রাজ্যজুড়ে শুরু হতে চলেছে দুয়ারে সরকার শিবির। ঠিক তার আগেই জাতীয়পুরস্কারপ্রাপ্ত জনপ্রিয় পশ্চিমবঙ্গ সরকারের এই উদ্যোগ ঘিরেই বিতর্ক দানা বেঁধেছে। 'দুয়ারে সরকার' শিবিরকে 'প্রহসন' বলে কটাক্ষ করলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। কেন তাঁর এই প্রতিবাদ? জবাবে যুক্তির ডালি সাজিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী।
এক প্রেস বিবৃতিতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মস্তিষ্কপ্রসূত 'দুয়ারে সরকার' শিবিরের নানা দিক নিয়ে সরব হয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। রাজ্যের দাবি, রাজ্যজুড়ে কয়েক হাজার শিবিরের মাধ্যমে সরকার মানুষের দুয়ারে গিয়ে পৌঁছায়। ওই শিবির থেকেই রাজ্যবাসী সরকারি সব প্রকল্পের সুবিধার জন্য নাম নথিভুক্ত করতে পারেন। কিন্তু শুভেন্দুর যুক্তি, 'দুয়ারে সরকার নামকরণ হল প্রহসন মাত্র। সরকার দুয়ারে আসছে না, মানুষকে ক্যাম্পের বাইরে লাইনে দাঁড় করিয়ে দিচ্ছে ঘন্টার পর ঘন্টা। প্রোলভন দেখিয়ে মানুষকে বিড়ম্বনায় ফেলা হচ্ছে।' তাঁর মতে, স্থানীয় প্রশাসনের দফতরগুলি থেকেই এই সুবিধা প্রদান করা যেত। তাহলে বছরের নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত সরকারি সুবিধার জন্য মানুষকে অপেক্ষা করতে হত না। বিরোধী দলনেতার দাবি, স্থানীয় প্রশাসনের দফতরগুলি দুর্নীতির আখড়া বলেই সেখান থেকে নাগরিক পরিষেবা দেওয়া সম্ভব নয়।
লক্ষ্মীর ভান্ডারে নাম নথিভুক্ত করা যায় দুয়ারে সরকারের শিবির থেকে। লক্ষ্মীর ভান্ডার মমতা সরকারের আমলের ইতিমধ্যেই অত্যন্ত জনপ্রিয় প্রকল্প। কিন্তু এতেও খুঁত ধরেছেন শুভেন্দু অধিকারী। বিরোধী দলনেতার প্রশ্ন, সরকারি বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী- ২০২২ সালের ১লা জানুয়ারি পর্যন্ত লক্ষ্মীর ভান্ডারে নাম নথিভুক্ত করতে পারেন ২৫ বছর বয়সী মহিলারা। তারপর বহু মহিলার বয়স ২৫ পেরিয়েছে। কিন্তু, এখনও নাম নথিভুক্তকরণের জন্য বয়সের ঊর্ধ্বসীমা কেন ২০২২ সালের ১লা জানুয়ারি পর্যন্তই রয়ে গিয়েছে। নন্দীগ্রামের বিধায়কের দাবি, কোষাগারে অর্থের টানেই এই অবস্থা।
মৎসজীবী ক্রেডিট কার্ডও আসলে কেন্দ্রীয় প্রকল্প কিষান ক্রেডিট কার্ডের নামকরণ মাত্র বলে দাবি করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। তাঁর যুক্তি, ব্যাঙ্কের মাধ্যমে লোনের জন্য কোনও কৃষক বা মৎসজীবী আবেদন করতে পারেন। ব্যাঙ্কই অনুমোদনের জন্য সঠিক কর্তৃপক্ষ। কিন্তু, রাজ্য সরকার এতে এক্তিয়ার বহির্ভুতভাবে হস্তক্ষেপ করছে নিজের কতৃত্ব বজায় রাখার জন্য। ফলে, দুয়ারে সরকার প্রকল্পের ঋণের জন্য নাম নথিভুক্তের সংখ্যা ও ব্যাঙ্কের ঋণ অনুমোদনের সংখ্যায় বিপুল ফারাক ধরা পড়েছে। আসলে রাজ্য সরকার প্রেরিত ঋণের আবেদনের আলাদা করে কোনও গুরুত্ব নেই।
আর্টিসান ক্রেডিট কার্ড প্রদানের রাজ্য সরকারি উদ্যোগও আসলে কেন্দ্রীয় সরকারকে হেয় প্রতিপন্ন করার মমতা প্রশানের সুপরিকল্পিত চাল বলে দাবি করেছেন শুভেন্দু অধিকারী। এছাড়া, এগ্রি ইনফ্রা ফান্ড স্কিম, স্বনির্ভর গোষ্ঠী ক্রেডিট লিঙ্কেজ, বিদ্যুতের নয়া সংযোজক ও বিল পরিশোধের আবেদনেও বড় দুর্নীতি রয়েছে বলে প্রেস বিবৃতিতে কটাক্ষ করেছেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা।
শুভেন্দুকে পাল্টা নিশানা করে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ বলেছেন, 'মানুষের উৎসাহ দেখে বিজেপি ভয় পাচ্ছে। তাই মাথা ঘুরে গিয়েছে শুভেন্দু অধিকারীর। মানুষের সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন হলে যা উচিত শুভেন্দু সেটাই বলছেন।'