Britannia Industries: বাংলার স্বাদ এবং আবেগের সঙ্গে বছরের পর বছর জড়িয়ে রয়েছে ব্রিটানিয়া বিস্কুট। সেই আবেগ এবার ভেঙে চুরমার হয়ে গেল। সোমবার তারাতলায় প্রোডাকশন বন্ধ করল ব্রিটানিয়া। (Britannia Factory Closed)
স্থানীয় সূত্রের খবর, শুক্রবারই এই বিষয়ে নোটিশ দেয় কোম্পানি। এবং বিগত বেশ কিছুদিন ধরেই কোম্পানিতে বন্ধ ছিল উৎপাদন। বন্ধের সময় কোম্পানির স্থায়ী কর্মীর সংখ্যা ছিল ১২২ জন এবং অস্থায়ী কর্মী ছিলেন প্রায় ২৫০ জন। এলাকার বাসিন্দাদের বক্তব্য, ২০১১ সালের পরে তারাতলা শিল্পাঞ্চলে মোট ১৫টি কারখানা বন্ধ হল।
ভারতের অন্যতম শীর্ষ বিস্কুট নির্মাতা সংস্থা ব্রিটানিয়া কলকাতায় তাদের কারখানা বন্ধের ঘোষণা করেছে। এই কারখানাটি মুম্বইয়ের পর ভারতে ব্রিটানিয়ার দ্বিতীয় প্রাচীনতম কারখানা। সংস্থার পক্ষ থেকে এক প্রেস বিবৃতিতে জানানো হয়েছে, তারাতলাতে অবস্থিত কারখানার উৎপাদন বন্ধের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সকল স্থায়ী কর্মীদের স্বেচ্ছাবসরের বিকল্প দেওয়া হয়েছে। সকলেই তা গ্রহণ করেছেন। কোম্পানির আশ্বস্ত করে বলেছে, তারাতলা ইউনিট বন্ধ বা VRS ব্যবসায়িক কার্যক্রমে কোন প্রভাব ফেলবে না। যদিও কেন হঠাৎ এমন সিদ্ধান্ত নিতে হল দেশের সুপ্রতিষ্ঠিত প্রাচীন এই সংস্থাকে সে বিষয়ে মুখে কুলুপ এঁটেছে ব্রিটানিয়া।
তারাতলায় বন্দরের জায়গা লিজে নিয়ে দশকের পর দশক ধরে চলছিল এই ব্রিটানিয়া বিস্কুট কারখানা। ব্রিটানিয়া বিস্কুটের সঙ্গে বাঙালির আবেগ জড়িয়ে আছে। স্বাভাবিকভাবেই এত পুরনো একটি বিস্কুট কারখানা বন্ধ হওয়া যাওয়া নিয়ে চর্চা বাড়ছে রাজ্য-রাজনীতিতে। ঠিক কী কারণে কর্তৃপক্ষ কারখানা বন্ধের মতো সিদ্ধান্ত নিলেন, তা বুঝতে পারছেন না শ্রমিকরাও।
বন্দরের জমিতে ৯৯ বছরের লিজ নিয়ে চলছিল ব্রিটানিয়া কারখানা। ২০১৮ সালে সেই লিজ আরও ৩০ বছর বাড়িয়ে নেয় সংস্থাটি। আর তাই আচমকা কেন কারখানার ঝাঁপ পড়ল তা এখনও স্পষ্ট নয়।
আরও পড়ুন : <TMC Mla Oath Ceremony: তৃণমূলের সায়ন্তিকা, রায়াতদের শপথ নিতে হবে রাজভবনেই, কড়া চিঠি রাজ্যপালের>
সিআইটিইউর সিনিয়র নেতা গৌতম রায় সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে সোমবার জানান, "তারাতলার কারখানায় স্থায়ী কর্মী ছিলেন ১২২ জন। তাঁরা প্রত্যেকে স্বেচ্ছাবসরে রাজি হয়েছেন। তাঁদের আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে ১৩ লক্ষ থেকে ২২ লক্ষ ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত।"
১৫ দিনের উপর কারখানার উৎপাদন বন্ধ ছিল। তাই চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের কাজে আসতে বারণ করা হয়েছে। তাঁদের প্রাপ্য কী হবে, সেই বিষয়ে আলোচনা এখনও বাকি। অস্থায়ী কর্মী রাজু দাসের বক্তব্য, 'বেশ কিছুদিন ধরেই যেহেতু উৎপাদন বন্ধ তাই আমাদের সকলকে কাজে আসতে বারণ করে দেওয়া হয়েছে। অস্থায়ী কর্মীদের কোনও টাকা পয়সা এখনও পর্যন্ত দেয়নি কোম্পানি', বলেই অভিযোগ।পাশাপাশি তিনি বলেন, 'কোপানিতে যারা অস্থায়ী শ্রমিক হিসাবে কাজ করতেন তারা অধিকাংশ র্যাপিডো-জোম্যাটো-সুইগি ডেলিভারির মত পেশাকে আপাতত সংসার চালানোর জন্য বেছে নিয়েছে'।
অপরদিকে স্থানীয় বাসিন্দা মনোজিত মণ্ডল বলেছেন, 'একের পর এক কারখানা তারাতলা শিল্পাঞ্চলে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। সে ব্যাপারে উদাসীন রাজ্যসরকার'। ব্রিটানিয়া কারখানা বন্ধেও রাজ্যসরকারের উদাসীনতাকেই দায়ী করে তিনি বলেছেন, "রাজ্যে সেভাবে নতুন শিল্প নেই। এভাবে একের পর এক কারখানা বন্ধ হতে থাকলে বেকারত্ব চরমে পৌঁছাবে যা এক সময় সামাল দেওয়া মুসকিল হবে। ব্রিটানিয়ার মতো বড় প্রতিষ্ঠান যদি রাজ্যে ঝাঁপ বন্ধ করে দেয় তাহলে ছোট ছোট কারখানায় যারা কাজ করেন তাদের প্রতি মুহূর্তে অনিশ্চিত ভবিষ্যতের মধ্যে থাকতে হবে' বলে উল্লেখ করেন তিনি।
পুরনো কারখানা চালানো ব্রিটানিয়ার জন্য আর লাভজনক নয়
একাধিক মিডিয়া রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে যে এই পুরনো কারখানা চালানো ব্রিটানিয়ার জন্য আর সেভাবে লাভজনক হচ্ছে না। কলকাতায় অবস্থিত এই কারখানাটি প্রায় ১১ একর জুড়ে বিস্তৃত। কলকাতা পোর্ট ট্রাস্ট ২০১৮ সালে কোম্পানির লিজ ৩০ বছর অর্থাৎ ২০৪৮ সাল পর্যন্ত বাড়িয়েছে। এখন পর্যন্ত ব্রিটানিয়া বর্তমানে যেখানে সংস্থার কারখানা রয়েছে সেখানে তাদের ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে কোনও তথ্য দেয়নি।
কারখানা বন্ধ হলে কোম্পানির রাজস্বে কোনো প্রভাব পড়বে না জানিয়েছে সংস্থা
রিপোর্ট অনুসারে কারখানা বন্ধ হয়ে গেলেও কোম্পানির রাজস্বে কোনো প্রভাব পড়বে না বলে জানিয়েছে সংস্থা। । সোমবার, ব্রিটানিয়ার শেয়ার বিএসইতে ০.৩৪ শতাংশ কমে ৫৩১১.৯৫ টাকায় বন্ধ হয়েছে।