রাজভবন-নবান্ন সংঘাত এখন বঙ্গ রাজনীতি নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। ২০১৯ সালে বাংলায় সাংবিধানিক প্রধান পদের দায়িত্বে এসে জগদীপ ধনখড় সংঘাত বিতর্কে যে নয়া মাত্রা যোগ করেছিলেন তা ছাপিয়ে যাচ্ছে সিভি আনন্দ বোসের জমানায়। বুধবার নবান্নে বসে যা নিয়ে মুখ খুলেছেন খোদ মুখ্যমন্ত্রী। পশ্চিমবঙ্গে রাজ্যপালের অতি সক্রিয়তা নিয়ে এদিন বলতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জগদীপ ধনখড়ের আমলের সঙ্গে বর্তমান অবস্থার তুলনা করেন।
পঞ্চায়েত ভোটের সময় রাজভবনে 'পিস রুম' খুলে চমকে দিয়েছিলেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। সম্প্রতি তাঁর উদ্যোগ আমনে–সামনে কর্মসূচি। এবার রাজভবনে রাজ্যপালের নেতৃত্বে খোলা হল 'অ্যান্টি কোরাপশন সেল'। মমতা সরকারের বিরুদ্ধে এখানে অভিযোগ জমা পড়বে। রাজ্যপাল সমান্তরাল প্রশান চালাতে চাইছেন বলে ইতিমধ্যেই সরব শাসক দল তৃণমূল। বুধবার বিকেলে নবান্নে এই 'অ্যান্টি কোরাপশন সেল' নিয়ে মন্তব্য করেছেন মুখ্যমন্ত্রী।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, 'রাজ্যপাল নাকি স্পেশাল সেল করেছেন! এটা রাজ্যপালের কাজ নয়। ধনখড় যখন ছিলেন তখনও অনেক বিষয়ে আমরা একমত হতাম না, কিন্তু তিনি এটা করেননি। ইনি তো দেখছি বিজেপি যা বলে দিচ্ছে তাই করছেন।'
সংঘাত চরমে পৌঁছলেও কেন রাজ্যপাল হিসাবেসিভি আনন্দ বোসের থেকে জগদীপ ধনখড়কে 'ভালো' বললেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়? রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, দুর্গাপুজোর কার্নিভাল থেকে, করোনার সময় নানা বিষয়ে, রাজনৈতিক হিংসা, মা ক্যান্টিন, বিধানসভার অধিবেশন শুরু সহ একাধিক ইস্যুতে রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড় মমতা সরকারের সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন রাজ্যপাল জগদীপ ধনখড়। প্রবল অসুন্তষ্ট মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূলের তরফেও ধনখড়-কে বিভিন্ন সময় কড়া আক্রমণ করা হয়েছে। মমতা একাধিকবার বলেছেন, 'ভুলে যাবেন না আপনি (রাজ্যপাল ধনখড়) মনোনীত এবং আমি মানুষের ভোটে নির্বাচিত।'
কিন্তু সে সময় মাঝে মধ্যেই দেখা গিয়েছে সৌজন্যের বাতাবরণ। মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়ির কালীপুজোতে দেখায় গিয়েছিল সস্ত্রীক ধনখড়কে। এমনকী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছ থেকে ভাইফোঁটা নিতেও চেয়েছিলেন প্রাক্তন রাজ্যপাল। অর্থাৎ তাঁদের মধ্যে পারস্পারিক সৌজন্য ছিল।
২০২২ সালের নভেম্বরে বাংলার রাজ্যপালের কুর্সিতে বসেন সিভই আনন্দ বোস। এর পরের বেশ কয়েক মাস -আনন্দ বোস-মমতা সৌজন্য দেখা গিয়েছে। রাজ্যপালের বাংলা শিক্ষার হাতেখড়ির অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। হাতেখড়িতে 'জয় বাংলা' স্লোগান নিয়ে বিজেপির রোষে পড়েন বোস। তারপরই থেকেই অবস্থার বদল ঘটে। দিল্লি যান রাজ্যপাল। এরপরই প্রথমে তাঁর ব্যক্তিগত সচিব পদ থেকে নন্দিনী চক্রবর্তীকে সরিয়ে দেন আনন্দ বোস। এরপর রাজভবন-নবান্ন সংঘাত চওড়া হতে থাকে। রাম নবমীতে হিংসা বিধ্বস্ত অঞ্চলে যাওয়া, রাজ্য নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ, পঞ্চায়েত ভোটে হিংসা নিয়ে রাজ্যপালের একাধিক পদক্ষেপে সোচ্চার হয় মুখ্যমন্ত্রী। সরব হয় তৃণমূলও। এরপর রাজভবনে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস অ্যান্টি কোরাপশন সেল সংঘাতের আগুনে ঘি ঢালে। এ নিয়ে এদিন মমতা অভিযোগের সুরে বলেন, 'রাজ্যপালকে আমরা শ্রদ্ধা করি। উনি রাজ্য সরকারের যেটা অধিকার সেখানে আননেশেসারি ইন্টারফেয়ার করছেন। এক্সপার্ট কমিটি তৈরি করার কাজটা তো সরকারের। উনি শুনছি কেরালা থেকে কাউকে ডেকে নিয়ে এসে ভিসি করে দিচ্ছেন। তার একাডেমিক কি যোগ্যতা?'
সিভি আনন্দ বোস রাজ্য প্রশানের মতই সমান্তরাল ব্যবস্থা চালু করেছেন বলে অভযোগ তৃণমূলের। যা ধনখড়ের আমলে ছি না। সেই অবস্থার কথাই তুলে ধরেছেন মুখ্যমন্ত্রী।