প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগার, রাজ্য কাঁপানো শিক্ষা থেকে রেশন দুর্নীতি মামলায় ধৃত মন্ত্রীদের এখন ঠাঁই এখানেই। প্রেসিডেন্সির হাইপ্রোফাইল সেল পয়লা বাইশ। সেখানেই এখন পড়শি পার্থ চট্টোপাধ্যায় ও জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক। শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ধৃত পার্থ গত প্রায় ১ ভচর ৪ মাস পয়লা বাইশের একটি কুঠুরিতে বন্দি। জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে রেশন দুর্নীতিতে গ্রেফতার করেছে ইডি। কালীপুজোর দিন তাঁর জেল হেফাজত মঞ্জুর হয়। সেদিনই তাঁকে প্রেসিডেন্সি জেলে নিয়ে যাওয়া হয়। বনমন্ত্রীর ঠিকানা এখন সেই পয়লা বাইশেই। এই সেলেজুড়ে রয়েছে কঠোর নিরাপত্তা। মূলত হাইপ্রোফাইল বন্দিদের এই সেলে রাখা হয়ে থাকে। কিন্তু, পার্থ থেকে জ্যোতিপ্রিয়, সেলে থাকতে প্রবল অনিহা তাঁদের। সেল থেকে বেরোতে কাতর বায়না ধরেন শারীরিক অসুস্থতার। কেন এই অবস্থা?
প্রেসিডেন্সি সংশোধনার সূত্রে খবর, শুধু মন্ত্রী বা দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত প্রভাবশালীরাই নন, বাঘা বাঘা দাগী অপরাধীরাও সেলে থাকতে ডরায়! কেন? এমন কী রয়েছ ওই পয়লা বাইশ সেলে?
জেলের শীর্ষ আধিকারিকদের মতে, মন্ত্রী থাকালানী যে নিরাপত্তার ঘেরাটোপ ছিল পার্থ-বালুদের অতি প্রিয়, সেই অতিরিক্ত নিরাপত্তাই এখন তাঁদের প্রবল মাথা ব্যথার কারণ। সেলে যেকোনও বন্দিকে একা রাখা হয়। পার্থ চট্টোপাধ্যায় বা জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক তাঁরাও সেলে রয়েছেন একা। নির্দিষ্ট কয়েক ঘন্টা ছাড়া কারোর মুখ দেখার উপায় নেই। দরজা বন্ধ, একটি ঘুলঘুলি যুক্ত ঘরে দিনের বেশিরভাগ সময় একাই কাটাতে হয়। অর্থাৎ একাকিত্ব চেপে ধরার প্রবল সম্ভাবনা তৈরি হয়। সেখান থেকে মানসিক চাপ বাড়ে।
আরও পড়ুন- বড়মার মন্দিরে পুজো দেবেন অভিষেক, নৈহাটিতে প্রশাসনিক তৎপরতা তুঙ্গে
মন্ত্রি থাকাকালীন বিলাবহুল জীবন অতিবাহিত করেছেন পার্থ চট্টোপাধ্যায়, জ্যোতিপ্রিয় মল্লিকরা। কিন্তু সেলে খাট বিছানা পাওয়াটা স্বপ্নের মত। থাকে না কোনও গদি। জেল থেকে পাওয়া কম্বলেই মাটিতে শুয়ে দিন-রাত কাবার করতে হয় হেভিওয়েট বন্দিদের। সেলের কুঠুরিতেই সারতে হয় শৌচকর্ম।
প্রেসিডেন্সি জেল কর্তৃপক্ষের দাবি, প্রতিদিন সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে খুলে দেওয়া হয়সেলের দরজা। সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ ফের সেলে ফিরে আসতে হয় বন্দিদের। আবার বিকেল ৩টে নাগাদ বেরোনোর অনুমতি মেলে। ফিরতে হয় সূর্যাস্তের সঙ্গে সঙ্গেই। এরপর প্রায় ১২ ঘন্টা সেলেই বন্দি দশায় কাটাতে হয় পার্থ-বালুদের। এই পরিস্থিতিতে তাই সেলই যেন বিভিষিকা তাঁদের কাছে। প্রায়ই আর্জি জানান তাঁদের থাকার ব্যবস্থা ওয়ার্ডে করতে। কারণ সেখানে অন্য বন্দিদের সঙ্গেই থাকা-খাওয়ার সুযোগ রয়েছে। কোনও ছোট্ট ঘরে নয়, বন্দি থাকাতে হয় বড় এলাকায়। ফলে একাকিত্ব গ্রাসের সম্ভাবনা কম।
এদান্তি অবস্য সব জেলেই থাকে ভিডিয়ো কনফারেন্সে রুম। সেখানে সার দিয়ে লাগানো রয়েছে ভিডিও মনিটর। যে সময় বন্দি ঘর বা ওয়ার্ডের বাইরে থাকেন, তার মধ্যে যে কোনও সময় বাড়ি লোকেদের সঙ্গে ভিডিয়োর মাধ্যমে কথা বলার সুযোগ পান। তবে এ জন্য রয়েছে নির্দিষ্ট পদ্ধতি। তাই অনেক বন্দির পরিবারই তা ব্যবহার করতে পারেন না।