রূপকথার গল্পকেও যেন হার মানাবে এ কাহিনী! সাক্ষাৎ মৃত্যু-মুখ থেকে স্বামীকে বাঁচিয়ে এনেছেন স্ত্রী। মেয়ে ও আরও এক সঙ্গী মৎস্যজীবীর প্রাণপণ চেষ্টায় স্বামীর প্রাণ বাঁচিয়েছেন ওই মহিলা। ঠিক যেন অসাধ্য সাধন করে ফেলেছেন দক্ষিণ ২৪ পরগনার প্রত্যন্ত এলাকার এই গৃহবধূ। তাঁর স্বামীই ছিলেন বাঘের মুখের গ্রাস। নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে স্বামীকে ফিরিয়ে একদিকে যেমন ভরপুর স্বস্তির ছাপ, অন্যদিকে জখম স্বামীর দ্রুত আরোগ্য কামনায় বাঁধ মানছে না চোখের জলও।
শুক্রবার সকালে সুন্দরবনের গভীর জঙ্গল কলস ক্যাম্প সংলগ্ন নদীতে কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিলেন কয়েকজন। তখনই জঙ্গলের ঝোপ থেকে ঝাঁপিয়ে পড়ে বিশালকায় বাঘ। বাঘের আক্রমণে গুরুতর জখম হন পাথরপ্রতিমার মৎস্যজীবী দিনু মল্লিক (৫১)। আশঙ্কাজনক অবস্থায় কাকদ্বীপ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন তিনি।
গতকাল রাতে তাঁকে নৌকা করে তাঁকে তড়িঘড়ি নিয়ে আসা হয় পাথরপ্রতিমার মাধবনগর গ্রামীণ হাসপাতালে। শারীরিক অবস্থার অবনতি হওয়ায় রাতেই কাকদ্বীপ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়েছে তাঁকে। আতঙ্কে থাকলেও দিনুকে ফিরে পেয়ে স্বস্তি পরিবারে।
আরও পড়ুন- ভোটের মুখে লাগামছাড়া লঙ্কা-টমেটো-আদা, বাজারে গেলেই হাতে ছ্যাঁকা! নবান্নের বৈঠক
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, দক্ষিণ ২৪ পরগনার পাথরপ্রতিমার জি প্লট পঞ্চায়েতের কৃষ্ণদাসপুরের বাসিন্দা মৎসজীবী দিনু মল্লিক। অভাব অনটনের সংসার। সুন্দরবনের নদীতে সপরিবারে মাছ, কাঁকড়া ও বিভিন্ন জঙ্গলে মধু সংগ্রহ করে কোনওক্রমে চলে তাঁদের সংসার। অন্যান্য দিনের মতো বৃহস্পতিবার সকালে স্ত্রী, মেয়ে ও এক সঙ্গীকে নিয়ে সুন্দরবনের গভীর জঙ্গল কলস ক্যাম্প সংলগ্ন নদীতে কাঁকড়া ধরতে গিয়েছিলেন দিনু।
রাতে সেখানে পৌঁছে তাঁরা নৌকা নোঙর করে ফেলেছিলেন। শুক্রবার সকালে কাঁকড়া ধরার শাবল দিয়ে দিনু কাঁকড়া ধরছিলেন। ঠিক সেই সময়ে জঙ্গল থেকে একটি বাঘ তাঁর উপর ঝাপিয়ে পড়ে। দিনু মল্লিকের ঘাড় কামড়ে টানতে টানতে তাঁকে জঙ্গলের মধ্যে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বিশালকায় বাঘটি।
আরও পড়ুন- বাজিমাত লক্ষ্মীর ভাণ্ডারেই? বিরোধীদের বলে বলে ১০ গোল দিতে অভিনব প্রচারে তৃণমূল
সেই পরিস্থিতিতে হাতে থাকা শাবল দিয়ে প্রাণপণে বাঘের সঙ্গে লড়াই চালাচ্ছিলেন দিনু। এদিকে, স্বামীকে বাঘে টেনে নিযে যাচ্ছে দেখে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন স্ত্রী। দিনুর মেয়ে ও তাঁদের সঙ্গী আর এক মৎস্যজীবীও দিনুকে বাঁচাতে ঝাঁপিয়ে পড়েন। প্রত্যেকের হাতে থাকা শাবল দিয়ে বাঘের উপর লাগাতার পালটা আঘাত চলে। বেশ কিছুক্ষণ ধরে চলে বাঘে-মানুষে এই রুদ্ধশ্বাস লড়াই। সেই লড়াইয়ে শেষমেষ হার মানে দক্ষিণরায়। মুখের গ্রাস ফেলে জঙ্গলে ঢুকে যায় বাঘটি।
নির্ঘাত মৃত্যুর হাত থেকে বাঁচলেও গুরুতর জখম হন দিনু মল্লিক নামে ওই মৎস্যজীবী। তাঁকে কোনওমতে নৌকাতে তোলা হয়। বাঘের দাঁতের কামড়ে গভীর ক্ষত তৈরি হয়েছিল দিনুর কাঁধে, মাথায় ও ঘাড়ে। রক্তক্ষরণ বন্ধে দ্রুত তড়িঘড়ি সেই স্থানগুলোতে কাপড় দিয়ে বেঁধে দিয়েছিলেন তাঁর স্ত্রী, মেয়ে। প্রাণপণে নৌকা বেয়ে রাতেই তাঁরা পৌঁছোন মাধবনগর গ্রামীণ হাসপাতালে। সেখানে দিনু মল্লিকের শারীরিক অবস্থার অবনতি হয়।
আরও পড়ুন- স্কুলের মিটার বক্সে কিলবিল করছে কী? দেখেই আত্মারাম খাঁচাছাড়া হওয়ার জোগাড়!
ওই রাতেই তাঁকে কাকদ্বীপ সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। আপাতত সেখানেই চিকিৎসাধীন রয়েছেন দিনু মল্লিক। হাসপাতালে রয়েছেন তাঁর স্ত্রী ও অন্য সঙ্গীরা। তাঁর স্ত্রী জানিয়েছেন, এখনও ঘুমের মধ্যে আঁতকে উঠছেন দিনু। তাঁর স্ত্রী মেয়েও এখনও সেই রোমহর্ষক ঘটনার কথা ভুলতে পারছেন না।