কাঁথির যে অধিকারী বাড়ি নিয়ে তাঁর বক্তব্যে বারবার কটাক্ষ করেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, রবিবার কোজাগরী লক্ষ্মীপুজোর সন্ধ্যায় সেই কটাক্ষের পালটা জবাব দিলেন রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। তৃণমূল সুপ্রিমো তথা বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে রামায়ণের 'পূতনা রাক্ষসী'র সঙ্গে তুলনা করেন শুভেন্দু। কখনও আবার মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে তুলনা করলেন উত্তর কোরিয়ার শাসক কিম জং উনের সঙ্গে। বাংলার মুখ্যমন্ত্রীকে বললেন 'লেডি কিম'। এই প্রসঙ্গে শুভেন্দু বলেন, 'রাজনীতির বাইরেও যে সামাজিক, ধর্মীয়, পারিবারিক, আত্মিক সম্পর্ক। সেই সম্পর্কটা পশ্চিমবাংলায় মমতা ব্যানার্জির মত একজন লেডি কিম তুলে দিয়েছেন। এই পূতনা রাক্ষসীর হাত থেকে রাজ্যকে বাঁচাব।'
রবিবার কাঁথির অধিকারীদের বাড়ি শান্তিকুঞ্জে পৌঁছন রাজ্য বিজেপির সভাপতি সুকান্ত মজুমদার। গৃহকর্তা তথা সাংসদ শিশির অধিকারীর সঙ্গে সাক্ষাতের জন্যই তিনি শান্তিকুঞ্জে এসেছেন বলে জানান রাজ্য বিজেপির সভাপতি। দরজার বাইরে থেকে তাঁকে স্বাগত জানান বিজেপি বিধায়ক তথা রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। সেই সময় সাংবাদিকরা সুকান্ত মজুমদারের আচমকা আসার কারণ জিজ্ঞাসা করেন।
জবাবে শুভেন্দু অধিকারী বলেন, 'এর মধ্যে কোনও রাজনীতি নেই। উনি আমার মা-বাবার সঙ্গে দেখা করতে এসেছেন। উনিও তাঁদের ছেলের মত। সেই জন্যই এসেছেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তো এই বাড়ি থেকে গিয়েই মুখ্যমন্ত্রী হয়েছেন। ২০০৭ সালের ১৪ মার্চ নন্দীগ্রামে গুলি চলে। ২০০৮ সালের ১৩ মার্চ তিনি এই বাড়ির ছাদে ছিলেন। নন্দীগ্রাম আন্দোলন না-হলে তিনি তিনি দিদি থেকে দিদিমা হতেন। কোনওদিন মুখ্যমন্ত্রী হতে পারতেন না।'
এতেই না-থেমে শুভেন্দু বলেন, 'সেই মমতা ব্যানার্জিই এখন এই বাড়িতে সিআইডি, পুলিশ পাঠাচ্ছেন। বাড়ির সামনে-পিছনে সিসিটিভি ক্যামেরা বসিয়েছেন। ভাটাংশুর মত ভাইপোর কোম্পানির ছেলেমেয়েরা আছে। আমার বাবার বয়স ৮৪, মায়ের ৭৫। নার্সের নজরদারিতে থাকেন। এই বাড়ির সামনে দিয়ে মিছিল করে, স্লোগান দিয়ে তাঁদের বিব্রত করছে।'
অতি সম্প্রতি কাঁথি পুরসভার প্রাক্তন চেয়ারম্যান ও শুভেন্দু অধিকারীর ভাই সৌমেন্দুকে ১০ ঘণ্টা ধরে নানা দুর্নীতির অভিযোগে জিজ্ঞাসাবাদ করেছে পুলিশ। তার পরই রাজ্য বিজেপি সভাপতিকে দেখা গেল কাঁথির শান্তিকুঞ্জে ছুটে আসতে। এই প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে রবিবার শুভেন্দু বলেন, 'আমি তো বলেছিই, সুদ-সহ আসল ফেরত পাবেন।'
আরও পড়ুন- উদ্ধবদের চালেই বাতিল হয়েছে তির-ধনুক প্রতীক, অভিযোগ ক্ষুব্ধ শিণ্ডে গোষ্ঠীর
লক্ষ্মীপুজো উপলক্ষে আলোর মালায় সেজে ওঠা অধিকারী বাড়ির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার বলেন, 'মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যাঁদের হাত ধরে বাংলা থেকে বাম শাসনকে উৎখাত করতে পেরেছিলেন, তাঁদের অন্যতম শিশির অধিকারী। তাঁর মত রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে দেখা করা, বিজয়ার প্রণাম করা আমার কাছে সৌভাগ্যের ব্যাপার।'
শুভেন্দুর বক্তব্য সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হওয়ার পর পালটা মুখ খোলেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, 'সুকান্ত এতদিন বিজেপি করার পর এখন লোক চিনছেন। শুভেন্দু-শিশির সবাই দলবদলু। শুভেন্দু সাংসদ হয়েছেন মমতা ব্যানার্জির দয়ায়। দিব্যেন্দু সাংসদ হয়েছেন মমতা ব্যানার্জির দয়ায়। সৌমেন্দু চেয়ারম্যান হয়েছিলেন মমতা ব্যানার্জির দয়ায়। আর, সুকান্তবাবু যাঁর সম্পর্কে এত কথা বলছেন, সেই শিশির অধিকারীও মন্ত্রী হয়েছেন মমতা ব্যানার্জির দয়ায়। ওঁদের এতই ক্ষমতা যে বিজেপির মঞ্চে বসেও তৃণমূলের প্রতীক ছাড়তে পারছেন না।'