রাজধানীর বুকে কাফে চালাচ্ছেন অ্যাসিড আক্রান্তেরা! কাফের নাম Sheroes’ Hangout, ঠিক একেবারেই যেন তারই হুবহু অনুকরণ। শ্যামনগরের কমলপুরে ম্যাশআপ নামের ক্যাফে চালাচ্ছেন উত্তম- সুনীতা। বছর খানেক আগেই ভালবেসে বিয়ে করেন দু’জন-দুজনকে। অ্যাসিড আক্রান্ত সুনীতারও মুখে ২১টা অস্ত্রোপচার হয়েছে। এখনও এক চোখে আলো ফেরেনি। তাতে কী! সমাজের বাঁকা নজর এড়িয়ে অ্যাসিড আক্রান্ত সুনীতার পাশে থাকার সংকল্প নিয়েছেন উত্তম।
সংসার চালাতে মেন রাস্তার ধারেই একটা ছোট দোকান ভাড়া নিয়ে গড়ে তুলেছেন তাঁদের সাধের রেস্তোরাঁ। বর্ধমান থেকে প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দূরে পানাগড়ে আদি বাড়ি উত্তমের। ছোটবেলায় গ্রামে যাত্রা দেখার ভিড়ে চাপা পড়ে আজও ডান পা ঠিক মত মুড়তে পারেন না। উত্তমের কথায়, 'কে নিখুঁত বলুন তো? ভালবেসে একসঙ্গে লড়াই চালিয়ে যাওয়াটাই সত্যিকরের চ্যালেঞ্জ'। হ্যাঁ...... তেমনটাই তো কলকাতায় এসে জীবনযুদ্ধের ‘বাজিগর’দের বার্তা দিয়ে গেছেন খোদ শাহরুখ খান!
লড়াকুদের জীবনে এক বিশেষ ভূমিকাও রয়েছে শাহরুখের। অ্যাসিড আক্রান্তদের সঙ্গে সবসময় কাজ করে চলেছে শাহরুখের প্রতিষ্ঠান মীর ফাউন্ডেশন। শুধু তাঁদের সঙ্গেই নয়, বরং নারীদের পাশে রয়েছে এই প্রতিষ্ঠান। তাঁদের শক্তি জোগাতে যেমন সাহায্য করে তেমনই বিপদ থেকে উদ্ধারও করে। শুধু মীর ফাউন্ডেশনের কর্ণধার হিসেবে নয়, বরং একজন মানুষ হিসেবে হাজির হয়েছিলেন তিনি। কী বলেছেন সুনীতাকে? পাশে থাকার অঙ্গীকারের পাশাপাশি 'মন্নতে' লাঞ্চের জন্য আমন্ত্রণও জানিয়েছেন। শাহরুখ জীবনে এগিয়ে চলার বার্তা দিয়েছেন। আর সেই বার্তাকেই সামনে রেখে জীবনের সকল 'চ্যালেঞ্জকে ফুঁ' দিয়ে উড়িয়ে এখন ডানা মেলে উড়ে চলাই লক্ষ্য সুনীতার। পাশে যে রয়েছেন ভালবাসার 'একটা শক্ত হাত'।
দুজনের আলাপ প্রসঙ্গে সুনীতা বলেন, “ফেসবুকে আলাপ। প্রথমে কথাবার্তা, তারপর প্রেমের প্রস্তাব। প্রথমে সেভাবে ভরসা হয়নি। ধীরে ধীরে ভাললাগা থেকে ভালবাসা….! অবশেষে পরিণতি। পরিবার না মানায় আজ দুজনকে ঘর ভাড়া নিয়ে থাকতে হচ্ছে। লড়াই চালিয়ে যেতে হচ্ছে পেটের তাগিদে। তাতে কী ভালবাসার মত একজন মানুষকে তো পেয়েছি। ও পাশে থাকলে যে কোন মুশকিল'ই আসান হয়ে যাবে”।
পড়ুন আরও প্রিমিয়াম স্টোরি মুসলিম শিল্পীর হাতে তৈরি রামের মূর্তি, অযোধ্যার মন্দির সাজিয়ে তুলতে প্রাণপাত জামালউদ্দিনের
অন্যদিকে সুনীতাকে জীবনে পেয়ে উত্তম বলেন, “ প্রথম থেকেই ওকে জানার একটা ইচ্ছা থেকেই ওর প্রতি টান, সেই থেকে ভাললাগা, ভালবাসা, বিয়ে........। ওকে পাশে পেয়ে যেন 'যুদ্ধ জয়ের অনুভূতি'। আগামী দিনে 'স্বপ্নের প্রতিটি মুহূর্ত' ওকে উপহার দিতে চাই। আমাদের মধ্যে কেউই নিখুঁত নই, তবে আমাদের মধ্যে যে মানসিকতার মিল রয়েছে তা হয়তো আর পাঁচজনের মধ্যে খুঁজে পাওয়া যাবে না, সেটাই আমাদের এক করেছে আজ"।
পড়ুন আরও প্রিমিয়াম স্টোরি Premium: নুন আনতে পান্তা ফুরোয়, বাংলার মঙ্গল কামনায় পায়ে হেঁটেই রামমন্দির রওনা দিনমজুরের
বাড়ির পাশেই ম্যাশআপ ক্যাফে চালান এই দম্পতি। চাইনিজ থেকে বিরিয়ানি কী নেই সেখানে! সন্ধ্যে নামলেই মানুষের ঢল নামে। আর হাজারো মানুষের ভালবাসা-আশীর্বাদকে সঙ্গে নিয়ে 'সুখী আগামী' গড়ার লক্ষে প্রাণপাত করছেন এই দম্পতি। তাদের কথায়, 'এভাবেও যে একসঙ্গে ভাল থাকা চায়, সেই বার্তাই সমাজকে আমরা দিতে চাই। বিশেষ করে সেই সব মেয়েরা যারা অ্যাসিড হামলার শিকার তারা বাড়িতে বসে না থেকে এগিয়ে আসুন, বাইরের জগতে পা বাড়ান'। একটা সুন্দর জীবন আপনারও অধিকার....! "