বাড়ছে ভাড়া, সঙ্গে পাল্লা দিয়ে অতলগামী হচ্ছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা। ট্রেনে সুরক্ষা কঠোর করতে যতই রেলমন্ত্রক বারবার নির্দেশ পাঠাক, একের পর এক ঘটনা স্পষ্ট করে দিচ্ছে, যাত্রীদের নিরাপত্তাহীনতার মান কোথায় এসে দাঁড়িয়েছে।
শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার ক্যানিং লাইনের মহিলা কামরার কথা এখানে বিশেষভাবে বলা জরুরি। মহিলা কামরায় মোবাইল হাতানোর ঘটনা নিত্যকার। তা নিয়ে আর আলোচনাও হয় না। এখন শুরু হয়েছে চলন্ত ট্রেনের মহিলা কামরা লক্ষ্য করে বাইরে থেকে হামলা। কখনও সেই হামলায় উড়ে আসছে বড় বড় পাথর। আবার কখনও উড়ে আসছে কাচের বোতল। কখনও আহত হচ্ছেন যুবতী, তো কখনও প্রৌঢ়া। কারোর হাতে আঘাত লাগছে, তো কারোর কপালে সেলাই পড়ছে।
আখছার এই ধরনের ঘটনার কথা শুনে শুনে স্পষ্টতই অভ্যস্ত হয়ে গেছে রেল পুলিশ। তাই অভিযোগ শোনার পর দু-একদিন নড়েচড়ে বসলেও কয়েকদিন পর থেকেই আবার যথা পূর্বং তথা পরং। কিন্তু সোমবার রাতের ক্যানিং লোকালের মহিলা কামরায় কাচের বোতল ছুড়ে তরুণীর উপরে আক্রমণের ঘটনায় যাত্রীরা এক প্রকার আতঙ্কিত। অবস্থা এমন দাঁড়িয়েছে যে বহু নিত্যযাত্রী মহিলাই রাতে ওই কামরায় উঠতে চান না। আর যাঁরা অনিয়মিত যাতায়াত করেন, তাঁরা ওই কামরায় উঠে মাঝেমধ্যেই হামলার শিকার হচ্ছেন।
আরও পড়ুন: গোপন অস্ত্র তৈরির কারখানা: সুন্দরবনের কুলতলি যেন মিনি মুঙ্গের!
এমনই হামলার শিকার হয়েছেন ক্যানিং থেকে কলকাতার দিকে আসা এক মহিলা, যিনি সোমবার রাতে সোনারপুর জিআরপি থানায় অভিযোগ জানিয়েছেন। কলকাতার একটি শপিং মলে কাজ করেন ওই মহিলা, ক্যানিংয়ের তাঁতকল এলাকায় বাপের বাড়ি। সোমবার রাতে বাবা-মার সঙ্গে দেখা করে গড়িয়ার তেঁতুলবেড়িয়া এলাকায় মেসবাড়িতে ফিরছিলেন ওই যুবতী। তাঁর অভিযোগ, তিনি সন্ধ্যার পর ক্যানিং থেকে শিয়ালদহগামী আপ ক্যানিং লোকালের মহিলা কামরায় উঠেছিলন। জানলার ধারেই বসেছিলেন। ঘুটিয়ারি শরিফ স্টেশন ছেড়ে ট্রেন বেরোনো মাত্রই লাইনের ধার থেকে চলন্ত ট্রেন লক্ষ্য করে কাচের বোতল উড়ে আসে। বোতলের আঘাতে তাঁর হাত ও শরীরের বিভিন্ন জায়গায় কেটে যায়। ঘটনায় ওই যুবতী স্বাভাবিকভাবেই আতঙ্কিত।
অবধারিত প্রশ্ন উঠেছে রেল পুলিশের তৎপরতা নিয়ে। সিভিক ভলান্টিয়ার এবং পর্যাপ্ত রেল পুলিসকর্মী থাকতেও রাতের মহিলা কামরা কেন আতঙ্কের ব্যাপার হয়ে উঠেছে মহিলা যাত্রীদের কাছে? ওই শাখার রেল যাত্রীদের অভিযোগ, রাত হলেই বিদ্যাধরপুর থেকে তালদি পর্যন্ত বিভিন্ন স্টেশনের রেল লাইনের ধারে চলে মদের আসর। কোন কোন জায়গায় রেল লাইনের ধারেই চোলাই মদের ঠেকও রয়েছে। আর সেখান থেকেই মদ্যপরা চলন্ত ট্রেনর মহিলা কামরাকে লক্ষ্য করে পাথর ও বোতল ছুঁড়ে হামলা চালাচ্ছে। রেল পুলিস সব জেনেশুনেও দর্শকের ভূমিকায় রয়েছে বলেও অভিযোগ রেল যাত্রীদের।