শক্তি উপাসনার অন্যতম প্রধান আরাধ্য দেবী মহিষাসুরমর্দিনী দেবী দুর্গা। দুর্গোৎসবকে ঘিরে বাংলায় মৃতশিল্প বিকশিত হয় ঠিকই। তা বলে বাংলার কৃষ্টি ও সংস্কৃতির সঙ্গে সম্পৃক্ত দারুশিল্প বা কাঠের শিল্পকর্ম দুর্গোৎসবে স্থান পাবে না, সেটাও বোধ হয় হওয়ার নয়। বাংলার পূর্ব বর্ধমান জেলার প্রখ্যাত কাষ্ঠশিল্পী সুরঞ্জন সরকারের হাতে তৈরি কাঠের দুর্গা প্রতিমা এবছর পূজিত হবে মালয়েশিয়ায়।
আর কিছু দিনের মধ্যেই প্রতিমাটি সুদূর মালয়েশিয়ায় পড়ি দেবে। তার আগে প্রতিমাটি একবার চাক্ষুষ করতে শিল্পী সুরঞ্জন সরকারের বাড়িতে দেবী দুর্গার ভক্তদের ভিড় উপচে পড়ছে। শিল্পী সুরঞ্জন সরকারের বাড়ি কাটোয়া মহকুমার আকাইহাট গ্রামে। কাঠের শিল্পকর্ম তৈরিতে তাঁর নাম ডাকও যথেষ্ট রয়েছে। প্রায় চল্লিশ বছর ধরে তিনি কাঠের নানা নজরকাড়া আসবাবপত্র তৈরির কাজ করে চলেছেন। বিদেশের ক্রেতারাও তাঁর তৈরি আসবাবপত্র কিনে নিয়ে গিয়েছেন। তবে এই প্রথম কাষ্ঠশিল্পী সুরঞ্জন সরকার তৈরি করলেন কাঠের দুর্গা প্রতিমা।
তিন মাস ধরে অক্লান্ত পরিশ্রম করে ২৫ সিএফটি-র গামার কাঠের উপর খোদাই করে ৭ ফুট ২ ইঞ্চি উচ্চতার অপূর্ব দুর্গা প্রতিমাটি তৈরি করেছেন তিনি। প্রতিমায় দেবীর বাহন সিংহ এবং অসুরও রয়েছেন। শিল্পীর নিপুণ হাতের দক্ষতায় অপরূপ সৌন্দর্য্য ফুটে উঠেছে দুর্গা প্রতিমার রূপে। যার নকশা ও কারুকার্য দেখে চোখ ফেরানো দায়। দুর্গা প্রতিমা ছাড়াও গণেশ মূর্তি এবং রাধাকৃষ্ণ মূর্তিও সুরঞ্জনবাবু তৈরি করেছেন। সেগুলিও অসাধরণ শিল্প নৈপুণ্যতায় ভরপুর।
আরও পড়ুন- শুভেন্দু’কে কলকাতা পুলিশের নোটিস! বিধানসভায় তুলকালাম বিজেপি’র
শিল্পী সুরঞ্জন সরকার জানান, তাঁর ভাই কর্মরত রয়েছেন মালয়েশিয়ায়। ভাইয়ের পরিচিত সেখানকার অবাঙালি ব্যবসায়ী দেবী দুর্গার ভক্ত। বাড়িতে পুজো করবেন বলে তিনিই কাঠের দুর্গা প্রতিমা তৈরির বরাত দেন। গণেশ ও রাধাকৃষ্ণের মূর্তির বরাতও মালয়েশিয়া থেকেই পেয়েছেন। শুধু বরাত দেওয়াই নয়, তিনটি মূর্তির জন্য দুই লক্ষ টাকাও ইতিমধ্যে হাতে পেয়েছেন বলে সুরঞ্জনবাবু জানান।
তিনি বলেন, “আগে কাঠের অন্য দেব-দেবীর মূর্তি তৈরি করেছি। কিন্তু দেবী দুর্গার প্রতিমা কখনও তৈরি করিনি। এবারই প্রথম তৈরি করলাম। তিন মাস আগে দুর্গা প্রতিমা তৈরির বরাত আসার পরেই দিন রাত এক করে কাজ শুরু করেছিলাম। দুর্গা, গণেশ ও রাধাকৃষ্ণের মূর্তি তৈরির কাজ সম্পূর্ণ হয়ে গিয়েছে। তিনটি মূর্তি আগামী সেপ্টেম্বরে মালয়েশিয়া পাড়ি দেবে।”
আরও পড়ুন- যাদবপুরকাণ্ডে বিস্ফোরক প্রবল চর্চায় থাকা সেই ‘আলু’, কী বললেন?
জেলার এক শিল্পীর এহেন কীর্তিকে কুর্ণিশ জানিয়েছেন পূর্ব বর্ধমানের বাসিন্দা তথা রাজ্যের মন্ত্রী স্বপন দেবনাথও। তাঁর কথায়, “বাংলার হস্তশিল্প, কুটিরশিল্প,ও মৃতশিল্পের খ্যাতি এখন দেশ ছাড়িয়ে বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে। কাটোয়ার প্রখ্যাত কাঠশিল্পী সুরঞ্জন সরকারের হাত ধরে সেই খ্যাতি নতুন মাত্রা পেল।”