স্কেটিং করে উত্তর ২৪ পরগনার শ্যামনগর থেকে বিদেশে পাড়ি বছর ১৩-এর দুই কিশোর-কিশোরীর! আর তাতেই এল আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। শ্যামনগরের দীপঙ্কর দে পেশায় স্কেটিং ও ক্যারাটে প্রশিক্ষক। এর আগে তিনি নিজেই স্কেটিং করে পাড়ি দিয়েছিলেন নেপালে। এবার গত ফেব্রুয়ারিতে তার দুই ছাত্র-ছাত্রীকে নিয়ে স্কেটিং করে ভুটান পাড়ি দেন দীপঙ্কর। গীতাংশার এই বিরাট কৃতিত্বের জেরেই নাম ওঠে ইন্টারন্যাশানাল বুক অফ রেকর্ড-এ।
জানা গিয়েছে যে অতিমারি পর্বে টানা দু’বছর বন্ধ ছিল প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। সেই রপ্ত করে নিয়েছিলেন স্কেটিং। ইতিমধ্যেই বছর ৪৮-এর দীপঙ্কর নাম তুলেছে এসেছে ইন্ডিয়া বুক অফ রেকর্ড, এশিয়া বুক অফ রের্কড, ইন্টারন্যাশনাল বুক অফ রেকর্ড এবং ওয়ার্ল্ড ওয়াইড বুক অফ রেকর্ড-এ। তার পরই নিজের দুই ছাত্র-ছাত্রীকে নিয়ে নতুন লক্ষ্যে চলে কঠোর প্রশিক্ষণ।
মাত্র ১২ দিনে ৮২৬ কিলোমিটার দীর্ঘ পথ পেরিয়ে অবশেষে লক্ষ্যভেদ। মাত্র ১৩ বছরেই দুর্দান্ত এই সাহসিকতার জন্য ইতিমধ্যেই মিলেছে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি। বছর ১৩-এর গীতাংশা দুগার, এবং রুদ্র সরকার তাদের এই বিরাট কীর্তির জন্য নাম তুলেছে ইন্টারন্যাশনাল বুক অফ রেকর্ড-এ।
বিশ্বরেকর্ড গড়েই ক্ষান্ত নন দীপঙ্কর ও তার খুদে দুই ছাত্র-ছাত্রী। এবারের লক্ষ্য পাকিস্তান ও চিন। তার জন্য চলছে অনুশীলনও। টুরিস্ট কম থাকায় কোন অসুবিধা পড়তে হয়নি তাদের। তবে বেশ কিছু জায়গায় রাস্তা খারাপ থাকায় সমস্যায় পড়তে হয় তাদের। কিন্তু মনের জোরকে সম্বল করে স্কেটিং করে ভুটানের পৌঁছায় তারা। বাংলা থেকে স্কেটিং করে ভুটান যাওয়ার এই রেকর্ড কেউ ভাঙতে পারবেন না বলেই আশাবাদী দীপঙ্কর।
কীভাবে এমন অসম্ভবকে সম্ভব করলেন দীপঙ্কর ও তার দুই ছাত্র-ছাত্রী? দীপঙ্কর বলেন, “লক্ষ্যটা অনেক আগে থেকে নিয়েছি। তার জন্য ১১ মাস ধরে চলে কঠোর প্রশিক্ষণ। খারাপ রাস্তা, পিচের রাস্তায় দিনরাত চলত প্রশিক্ষণ। আর যেহেতু আমি নিজেই আগে চারটি রেকর্ড করে ফেলেছি তাই কিছুটা সাহস ভিতর থেকে এসেছে। তবুও এত ছোট দুই ছাত্র-ছাত্রীকে নিয়ে দীর্ঘপথ পেরিয়ে লক্ষ্যে পৌঁছান কিছুটা হলেও কঠিন ছিল। তবে ওদের মধ্যে যে সাহস ও ইচ্ছা দেখেছি তাতে আমি মনে করি আগামী দিনে ওরা আরও বড় কিছু অর্জন করবে”।
স্কেটিং এর প্রতিভায় অবাক দুই ছাত্র-ছাত্রীদের অভিভাবকরাও। তাদের কথায়, “আজকের দিনে মোবাইলের মধ্যে না ডুবে থেকে খেলাধুলা করে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবার লক্ষ্য রাখতে হবে ছোট বয়স থেকেই। তার জন্য ছোট থেকেই সঠিক প্রশিক্ষণ একান্ত ভাবেই প্রয়োজন”।
আকাশছোঁয়া সাফল্যে খুশি গীতাংশা এবং রুদ্র দুজনেই। কঠিন এই জার্নি প্রসঙ্গে গীতাংশা জানায়, “সকাল থেকে চলত প্রশিক্ষণ। টানা ১১ মাস প্রশিক্ষণের পরেই আসে এই বিরাট সাফল্য। স্কুল ছুটি থাকলে কখনও কখনও টানা ১২ ঘণ্টা ধরে চলত ট্রেনিং। জার্নিটা নিঃসন্দেহেই কঠিন। পাহাড়ি রাস্তায় অনেক চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে হয়েছে আমাদের। তবে কখনই মনে হয়নি হাল ছেড়ে দিই। বারে বারে বিপদ উপেক্ষা করে এগিয়ে গেছি। তাতেই মিলেছে সাফল্য”। খেলাধুলা ছাড়াও সিনেমা দেখা ও গান শোনা দুটোই দারুণ প্রিয় গীতাংশার।