শনিবার পশ্চিমবঙ্গে আসছেন এনডিএ-র রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মু। এ রাজ্যের সাংসদ ও বিধায়কদের থেকে ভোট প্রার্থনা করবেন তিনি। একই কারণে বিভিন্ন রাজ্যে ঘুরছেন বিরোধীদের প্রার্থী যশবন্ত সিনহাও। এ রাজ্যের শাসক দল তৃণমূলের সমর্থন রয়েছে যশবন্তের দিকেই। ভোটের আর্জি জানাতে বাংলায় কবে আসবেন তিনি? সূত্রের খবর, ১৮টি বিরোধী দলের প্রার্থী হলেও এ রাজ্যে আসছেন না যশবন্ত সিনহা। যা নিয়েই জোর শোরগোল পড়েছে।
কেন বাংলায় প্রচারে নেই সিনহা? চড়ছে কৌতুহল। জল্পনাও বাড়ছে। সূত্রের খবর, সময়ের অভাবেই এই সিদ্ধান্ত হয়েছে। তবে, যশবন্ত সিনহার রাষ্ট্রপতি পদে লড়াইয়ের জন্য ভোট ভিক্ষায় এ রাজ্যে না আসাকে তেমন গুরুত্ব দিচ্ছে না তৃণমূল। জোড়া-ফুলের নেতাদের কথায়, 'এ নিয়ে হইচইয়ের কিছু নেই। ওনাকে নানা রাজ্যে যেতে হচ্ছে, ফলে সময় কম। বাংলার বেশিরভাগ সাংসদ, বিধায়কদের ভোটও তাঁর দিকেই যাবে। ফলে এখানে এসে সময় নষ্টের কোনও মানে হয় না।'
বিরোধীদের রাষ্ট্রপতি পদে একজোটে প্রার্থী দেওয়া নিয়ে উদ্যোগী ছিলেন খোদ তৃণমূল নেত্রী। শরদ পাওয়ার, গোপাল কৃষ্ণ গান্ধী নির্বাচনী লড়াইয়ের প্রস্তাব ফেরালে যশবন্ত সিনহাতেই সায় দেয় বিরোধীদের ১৭ টি দল। যশবন্তও বৃহত্তর জাতীয় স্বার্থের প্রেক্ষিতে লড়াইয়ে রাজি হন। ইস্তফা দেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সহ-সভাপতির পদ থেকে। বিরোধীদের প্রার্থী ঘোষণার রাতেই এনডিএ শিবিরের হয়ে জে পি নাড্ডা আধিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি দ্রৌপদী মুর্মুর নাম ঘোষণা করেছিলেন।
অঙ্কের হিসাবে দ্রৌপদীর জয় স্রেফ সময়ের অপেক্ষা। কিন্তু, রাষ্ট্রপতি ভোট নিয়ে শাসক-বিরোধী লড়াই তাৎপর্যবাহী। কেন বিরোধী দলগুলি আদিবাসীর রাইসিনার লড়াইকে সমর্থন করছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তোলে বিজেপি। কড়া আক্রমণ করে তৃণমূল সহ সব বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলিকে। শুরু হয় টানাপোড়েন।
আরও পড়ুন- ট্রাম্পকার্ড দ্রৌপদী মুর্মু, গেরুয়া চালে আশঙ্কার দোলাচলে মমতা!
এরপরই গত শুক্রবার আচমকা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলে বসেন, 'দ্রৌপদী মুর্মুর জয়ের সম্ভাবনাই বেশি। আগে থেকে যদি বিজেপি জানাত যে একজন তফশিলি, আদিবাসী মহিলাকে তাঁরা প্রার্থী করছে, তাহলে আমরাও ভেবে দেখতাম। বৃহত্তর স্বার্থে বিরোধী ১৬-১৭টা দল বসে সিদ্ধান্ত নিতে পারতাম। সর্বসম্মতিতে একজন প্রার্থী হলে, তা দেশের পক্ষে ভাল হতো। এ পি জে আব্দুল কালামও আগে হয়েছেন। কিন্তু বিজেপি ফোনে কেবল আমাদের মতামত জানতে চেয়েছিল। ওদের মতামত জানায়নি। বৃহত্তর স্বার্থে, সর্বসম্মত প্রার্থী আমি সর্বদা পছন্দ করি। কিন্তু যেহেতু আমরা ১৭-১৮টা দল একসঙ্গে বসে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, তাই সকলে না বললে আমি একা ফেরাতে পারি না। আদিবাসী, দলিতরা আমাদের সঙ্গেই আছেন।'
মমতার এই বক্তব্য ঘিরেই শোরগোল পড়ে যায়। আদিবাসী ভোটব্যাঙ্ক শঙ্কাতেই কী তাঁর এই উক্তি ছিল তাঁর, তা নিয়ে জল্পনা বাঁধে। এরমধ্যেই আবার জানা যাচ্ছে যে, বাংলায় আসছেন না যশবন্ত সিনহা। তাহলে কী সচেতনভাবেই বিরোধী রাষ্ট্রপতি প্রার্থীর প্রচার থেকে দলকে দূরে রাখতে চাইছেন তৃণমূল নেত্রী?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এরাজ্যের জঙ্গলমহল মূলত আদিবাসী অধ্যুষিত। এছাড়া উত্তরবঙ্গের কিছু অংশ ও রাজ্যের সর্বত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষজন। ১৯শের লোকসভা বা ২১শের বিধানসভায় এইসব অঞ্চলে ভোটে ভাল ফল করেছে গেরুয়া দল। তাই রাষ্ট্রপতি পদে আদিবাসী প্রার্থী কে পুঁজি করে এরাজ্যেও বাজিমাত করতে চাইছে বিজেপি। গত লোকসভায় পশ্চিমের জঙ্গলমহল ও উত্তরবঙ্গই বিজেপিকে এরাজ্যে লোকসভা নির্বাচনে ২ থেকে ১৮ সাংসদ পেতে সাহায্য করেছিল। উত্তরবঙ্গে একটি মাত্র লোকসভার আসন কম পেলেও জঙ্গলমহলে সবকটি কেন্দ্রেই জয়ী হয়েছিল বিজেপি। বিধানসভা নির্বাচনে সেই সাফল্য কিছুটা ম্লান। মোদী সরকারের হ্যাটট্রিকে ২০২৪-কে পাখির চোখ করেছে পদ্ম বাহিনী। তাই রাষ্ট্রপতি পদে মহিলা আদিবাসী প্রার্থী হওয়ায় বিজেপি জঙ্গলমহল ও উত্তরবঙ্গে সংগঠন মজবুত করতে ময়দানে নেমে পড়েছে।
তাই আগ্রাসী পথে যশবন্তকে সমর্থন না করে মোদী সরকারের বিরোধীতাকেই বড় করে তুলে ধরতে চাইছে তৃণমূল। কৌশলে এই ইস্যুতে দূরত্ব বাড়াচ্ছে জোড়া-ফুল শিবির।