'ফটাস জল', সাধের এই তৃষ্ণা মেটে শুধুই বাংলার এই প্রান্তে

বছরের পর বছর ধরে এই জেলার ঐতিহ্যের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে গিয়েছে বিশেষ এই কোল্ড ড্রিংকটি। লক্ষাধিক মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই কারবারের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।

বছরের পর বছর ধরে এই জেলার ঐতিহ্যের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে গিয়েছে বিশেষ এই কোল্ড ড্রিংকটি। লক্ষাধিক মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই কারবারের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন।

author-image
Nilotpal Sil
New Update
you can get fatas jol only various part of south 24 pargana district

বছরের পর বছর ধরে এই জেলার ঐতিহ্যের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে গিয়েছে বিশেষ এই কোল্ড ড্রিংক। ছবি: নীলোৎপল শীল।

এ তৃষ্ণার যেন জুড়ি মেলা ভার! গোটা বাংলায় কেবল এতল্লাটে এলেই মিটবে এমন তৃষ্ণা। দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলা ছাড়া গোটা রাজ্যের আর কোথাও বিশেষ এই কোল্ড-ড্রিংকের দেখা মেলে না। বছরের পর বছর ধরে দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে রয়েছে এই ফটাস জলের নাম। কয়েক দশক ধরে এজেলার ঐতিহ্যের সঙ্গে অকৃত্রিম এক বন্ধনে যেন জড়িয়ে গিয়েছে এই 'ফটাস জল'।

Advertisment

'ফটাস জল', এই জলের সঙ্গে বিশাল এক 'আবদার' জড়িয়ে রয়েছে। কেউ-কেউ একে সোডা ওয়াটারও বলে থাকেন। শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার প্রায় প্রতিটি স্টেশনে ট্রেন দাঁড়ালেই চোখে পড়বে এই ফটাশ জলের স্টল। ট্রেনেও বহু হকার এই জল নিয়ে নিত্যদিন ওঠেন। বিক্রি-বাট্টাও মন্দ হয় না। জানা গিয়েছে, শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায় সেই কয়লার ইঞ্জিন ছোটার সময় থেকেই এতল্লাটে ফটাশ জলের কারবারের শুরু।

সাধারণ জলের সঙ্গে 'কার্বন ডাইঅক্সাইড' দ্রবীভূত করে তৈরি হয় এই 'সোডা ওয়াটার, তবে এতল্লাটে এই বিশেষ পানীয়টি 'ফটাশ জল' নামেই বেশি পরিচিত। এই পানীয় মূলত কাঁচের বোতলে ভরেই বিক্রি হয়। ওপেনার দিয়ে বিক্রেতারা বোতলের মুখটি দ্রুত খোলেন, তাতেই পটকা ফাটার মতো একটি আওয়াজ হয়। জানা গিয়েছে, বোতলের মুখ খুলতে গিয়ে এমন আওয়াজের জন্যই এই পানীয়ের নাম হয়েছে 'ফটাস জল'।

publive-image
শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার বারুইপুর স্টেশনে ফটাশ জলের স্টল।
Advertisment

শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার বালিগঞ্জ, ঢাকুরিয়া, যাদবপুর, সোনারপুর, মল্লিকপুর, বারুইপুর-সহ প্রায় সব স্টেশনেই দেখা মিলবে এই ফটাস জলের। স্টেশনে বিক্রির পাশাপাশি ব্যাগ-ভর্তি ফটাশ জল নিয়ে হকাররা উঠে পড়েন ট্রেনে-ট্রেনেও। প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস দশা থেকে রেলযাত্রীকে একরাশ মুক্তির স্বাদ এনে দিতে নামমাত্র খরচে এই ফটাশ জলের জুড়ি মেলা ভার।

শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখার বহু রেল স্টেশনের ধার ঘেঁষেই রয়েছে এই ফটাশ জলের কারখানাগুলি। সোনারপুর, বারুইপুর, মগরাহাট, হোঁটর থেকে শুরু করে নানা জায়গায় রয়েছে এই জলের কারখানা। কম-বেশি লক্ষাধিক মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে এই কারাবারের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। তবে কতটা বিজ্ঞানসম্মতভাবে এই ফটাস জল তৈরি হয় তা নিয়ে কিন্তু প্রশ্ন রয়েছে।

publive-image
গরমের হাঁসফাঁস দশা থেকে এক ঝটকায় একটু রিফ্রেশ হয়ে নেওয়া। ফটাশ জলে গলা ভেজাচ্ছেন এক যুবক।

জল করাখানাগুলি থেকে কেট-ভর্তি করে এই 'ফটাস জল' চলে যায় স্টেশনে-স্টেশনে। স্টেশনের উপরে থাকা হকাররা এই জল বিক্রি করেন রেলযাত্রী ও অন্যদের। তবে স্টেশন ছাড়াও দক্ষিণ ২৪ পরগনার বিভিন্ন জায়গায় পাড়ার ছোট দোকানগুলিতে গেলেও ফটাস জলের খোঁজ মিলবে। দামও সাধ্যের মধ্যেই। বহুজাতিক সংস্থাগুলির ঠাণ্ডা পানীয়ের দাম পড়ে ন্যূনতম ১৫ টাকা। সেখানে ৫ টাকাতেই মেলে 'ফটাস জল'। আগে এর দাম আরও কম ছিল। স্বভাবতই দিনআনা-দিনখাওয়া মানুষের কাছে এই জলের চাহিদা বিপুল।

বছর খানেক আগেও ২টাকাতেই মিলত এই জল। তবে এখন সব কিছুরই দাম বাড়ার জেরে এর দামও বেড়েছে। বোতল পিছু 'ফটাস জল' এখনও ৫ টাকাতেই মেলে। তবে ফটাশ জল শুধু খেলে দাম পড়বে ৫ টাকা। সেই জলে আবার লেবু মিশিয়ে খেতে গেলে আরও পাঁচ টাকা অর্থাৎ মোট ১০ টাকা খরচ করতে হবে।

বারুইপুর স্টেশনের এক ফটাস জলের বিক্রেতা আনসার লস্কর। ভ্যাপসা গরমে তাঁর কারবারও জমে উঠেছে ভালোই। স্টেশনের পাশে থাকা জল কারখানা থেকে তিনি ফটাশ জল তোলেন। এখনও দাম নাগালে বলেই ব্যবসা টিকে রয়েছে বলে মত তাঁর। আনসার বলেন, ''গরমে জলের ব্যবসা বেড়েছে। বোতল প্রতি আড়াই টাকা করে কেনা পড়ে। সেই জলই পাঁচ টাকায় বিক্রি হয়।'' অর্থাৎ লাভ ফিফটি-ফিফটি।

ব্যগভর্তি ফটাশ জল নিয়ে ট্রেন-ট্রেনে বিক্রি করেন মোক্তার মোল্লা। মগরাহাটের এই বাসিন্দা তাঁর ব্যবসা সম্পর্কে বলতে গিয়ে দারুণ এক কাহিনী শোনালেন, তিনি বললেন, ''শক্তপোক্ত ব্যাগে আমরা ফটাশ জল নিয়ে উঠি। অনেক বোতলের মুখ খোলার সময় তেমন আওয়াজ হয় না। আওয়াজ না হলে কেউ জল খেতে চায় না। তাঁরা ভাবেন, এই জলের পাওয়ার তেমন নেই।'' জলের 'পাওয়ার' বলতে মোক্তার ঠিক কী বলতে চেয়েছেন তা অবশ্য স্পষ্ট করেননি। তবে ক্রেতাদের একটি বড় অংশের নজর যে জলের গুণগত মানের চেয়েও বোতল খোলার আওয়াজে, তা অবশ্য মোক্তারের কথাতেই স্পষ্ট হয়েছে।

Sealdah cold drinks Local Train South 24 Pgs