পুলিশ অফিসারের পরিচয় দিয়ে পরিযায়ী শ্রমিকদের কাছ থেকে টাকা ও মোবাইল ছিনিয়ে নেওয়ার অভিযোগ মালদহের এক যুব তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে। অভিযোগ পেয়ে ওই যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ৷ যুব তৃণমূলের ওই নেতার বিরুদ্ধে আগেও একাধিক অপরাধমূলক মামলা রয়েছে বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে৷
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মালদহ জেলা যুব তৃণমূলের এই নেতার নাম প্রিয়ার্ঘ সাহা ওরফে আকাশ সাহা৷ তার বাড়ি মালদহ শহরের ২ নম্বর গভর্নমেন্ট কলোনি এলাকায়। জেলা যুব তৃণমূল নেতা হিসেবে খুবই পরিচিত মুখ আকাশ। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার রাতে বেঙ্গালুরু থেকে ট্রেনে পাঁচ জন পরিযায়ী শ্রমিক মালদহ টাউন স্টেশনে এসে পৌঁছোন। ওই পাঁচ পরিযায়ী শ্রমিকের বাড়ি উত্তর দিনাজপুর জেলায়। মালদহ টাউন স্টেশন থেকে পায়ে হেঁটেই গাড়ি ধরার জন্য ওই পাঁচ শ্রমিক রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন। সেই সময় বাইকে চেপে ওই যুব তৃণমূল নেতা ও তার সাগরেদরা লাঠি নিয়ে তাঁদের পথ আটকায়।
ইংরেজবাজার থানার পুলিশ অফিসারের পরিচয় দিয়ে পাঁচ জনের মোবাইল এবং নগদ কিছু টাকা ছিনতাই করে নেওয়া হয় বলে অভিযোগ। তবে থানায় না নিয়ে গিয়ে রাস্তাতেই ছেড়ে দেওয়া হয় ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের। এতেই সন্দেহ হয় ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের৷ ইংরেজবাজার থানায় গিয়ে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করেন তাঁরা। শ্রমিকরা জানতে পারেন ভুয়ো পুলিশের খপ্পরে পড়েছিলেন তাঁরা৷ তাঁদের মোবাইল ও টাকা ছিনতাই করা হয়েছে৷
আরও পড়ুন- পাহাড় বেয়ে ছুটতে তৈরি টয় ট্রেন, পুজোয় ডেস্টিনেশন দার্জিলিং
এরপরেই ইংরেজবাজার থানার পুলিশের পরামর্শে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেন তাঁরা। তবে অভিযোগকারীরা অভিযুক্তদের চিনতেন না। ওই রাতেই ঘটনার তদন্ত শুরু করে পুলিশ। বিভিন্ন সূত্র ধরে আকাশ সাহা নামে যুব তৃণমূলের ওই নেতার হদিশ মেলে৷ মালদহ শহরের গৌড় রোড এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয় আকাশকে৷ পুলিশ জানিয়েছে, অভিযোগকারী ওই পাঁচজন পরিযায়ী শ্রমিকের বক্তব্য অনুযায়ী ধৃত ওই যুবককে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করা হয়। এরপর বিভিন্ন সূত্র ধরে শুরু হয় তদন্ত।
শনিবার গভীর রাতে গৌড় রোড এলাকা দিয়ে অভিযুক্ত ওই যুবক একটি গাড়ি নিয়ে ফিরছিল। সেই সময় তাকে আটকে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই সমস্ত ঘটনা সামনে আসে। তবে পুলিশ ধরতেই শাসকদলের নাম করে যুব আকাশ নামে ওই যুবক শাসানি দিতে শুরু করে৷ তবে হুমকি এড়িয়ে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে পুলিশ৷ পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ধৃত ওই যুব তৃণমূল নেতার এক শাগরেদ আনসার শেখ সেখান থেকে পালিয়ে যায়।
ইংরেজবাজার থানার আইসি আশিস দাস জানিয়েছেন, অভিযোগকারী ওই পরিযায়ী শ্রমিকদের বক্তব্য অনুযায়ী তদন্ত শুরু হয়৷ ইংরেজবাজার থানার দুই পুলিশ অফিসারের নাম করেই আকাশ এবং তার এক শাগরেদ আনসার শেখ ওই পাঁচ পরিযায়ী শ্রমিকদের কাছ থেকে মোবাইল ও টাকা ছিনতাই করেছে বলে অভিযোগ। আকাশকে গ্রেফতার করা হয়েছে। অন্য আরও এক অভিযুক্তকে এখনও ধরা যায়নি৷ শাসকদলের নাম করে পুলিশকেই হুমকি দিচ্ছিল ওই যুবক৷
এদিকে, এই ঘটনা প্রসঙ্গে তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা বিধায়ক রহিম বক্সি জানিয়েছেন, দলের নাম ভাঙিয়ে কে কী করেছে তা তিনি বলতে পারবেন না। তবে এই ধরনের বিষয়কে দল কখনই বরদাস্ত করবে না বলে জানিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি অভিযুক্ত ওই যুবক দলের যুব সংগঠনের সঙ্গে জড়িত নয় বলেও দাবি রহিম বক্সির।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে বিজেপির জেলা সভাপতি গোবিন্দ চন্দ্র মন্ডল বলেন, ‘‘তৃণমূলের মধ্যে ভুয়ো পুলিশ অফিসারের পরিচয় দিয়ে অপরাধমূলক কাজ ঘটানো হচ্ছে। এদিনের ঘটনায় তা প্রমাণ হয়ে গিয়েছে৷ আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাচ্ছি।’’
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন