/indian-express-bangla/media/media_files/2025/09/01/1000212707-2025-09-01-17-25-41.jpg)
Crime news : কান্নায় ভেঙে পড়েছে পরিবার।
পুকুর পাড়ে নিজের বৌদিকে কোদাল দিয়ে কুপিয়ে খুন করার অভিযোগ উঠলো দেওরের বিরুদ্ধে। আর এই ঘটনার পর ক্ষিপ্ত গ্রামবাসীরা অভিযুক্তকে বাড়ির খুঁটির সঙ্গে বেঁধে গণপিটুনি দেয় বলে অভিযোগ। পরে ঘটনার খবর পেয়ে ওই এলাকায় পৌঁছায় পুলিশ। ক্ষিপ্ত জনতার হাত থেকে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় পুলিশ।
সোমবার সকাল দশটা নাগাদ চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি ঘটেছে আদিবাসী অধ্যুষিত হবিবপুর থানার মঙ্গলপুরা গ্রাম পঞ্চায়েতের জামালপুর এলাকায়। খুনের ঘটনায় ব্যবহৃত রক্তমাখা কোদালটিও উদ্ধার করেছে পুলিশ। এই খুনের ঘটনার পিছনে বৌদিকে কুপ্রস্তাব দেওয়া এবং ডাইনি সন্দেহ করার বিষয় জড়িত থাকতে পারে বলে অনুমান তদন্তকারী পুলিশকর্তাদের।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত গৃহবধুর নাম সুনিতা মুর্মু (২৮) । তার স্বামীর নাম নাইপ কিসকু। তিনি পেশায় কৃষক। তাদের কোনো সন্তান নেই। ধৃতের নাম সঞ্জীব কিস্কু। সে অবিবাহিত । একই বাড়িতে বৃদ্ধ মায়ের সঙ্গে আলাদা থাকে সঞ্জীব। এদিন সকালে বাড়ির পাশের একটি পুকুরে বাসন ধোঁয়ার কাজ করছিলেন ওই গৃহবধূ। সেই সময় আচমকা কোদাল নিয়ে বৌদির ওপর অতর্কিত হামলা চালায় দেওর সঞ্জীব। গলায় এবং মাথায় কোদালের জোরালো কোপের কারণেই রক্তাক্ত অবস্থায় পুকুরপাড়ে লুটিয়ে পড়ে ওই গৃহবধূ । তড়িঘড়ি স্থানীয়রা আহতকে উদ্ধার করে নিকটবর্তী হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা মৃত বলে ঘোষণা করে। আর এই ঘটনার পরই ক্ষিপ্ত গ্রামবাসীরা অভিযুক্ত সঞ্জীবকে গণপিটুনি দিয়ে বাঁশের খুঁটিতে বেঁধে রাখে।
মৃত গৃহবধূর স্বামী নাইপ কিস্কু জানিয়েছেন , ঘটনার সময় আমি বাড়ি থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে জমিতে কৃষি কাজ করছিলাম। গ্রামবাসীরা আমাকে এই বিষয়টি জানায়। এরপর বাড়িতে ছুটে আসি। দেখি রক্তমাখা অবস্থায় পুকুর পাড়ে বউ পড়ে রয়েছে। গ্রামবাসীরা ভিড় করেছেন। তড়িঘড়ি গ্রামবাসীদের সহযোগিতা নিয়ে স্ত্রীকে নিকটবর্তী সরকারি হাসপাতালে নিয়ে যায়। কিন্তু সেখানে চিকিৎসকের স্ত্রীকে মৃত বলে জানিয়ে দেয়।
মৃতের স্বামী নাইপ কিসকু'র অভিযোগ, "বৌদির প্রতি সঞ্জীবের আচরণ ভালো ছিল না। মাঝেমধ্যেই স্ত্রীকে উত্যক্ত করতো। দেওরের কুপ্রস্তাবে সাড়া দেয় নি আমার স্ত্রী । আর এতেই আমার স্ত্রীকে ডাইনি বলে মিথ্যা রটানোর চেষ্টা করছিল গ্রামবাসীদের কাছে। তবে ভাই যে এরকমভাবে যে আমার স্ত্রীকে ভাই খুন করে ফেলবে ভাবতেই পারিনি।"
প্রাথমিক তদন্তের পর পুলিশ জানিয়েছে, ধৃত সঞ্জীব এবং তার দাদা নাইপের মধ্যে বনিবনা ছিল না। ধৃত সঞ্জীবের বৃদ্ধ মা দীর্ঘদিন ধরে অসুস্থ রয়েছে। এরফলে নাকি বৌদিকে ডাইনি সন্দেহ করত সঞ্জীব। কুপ্রস্তাবে রাজি না হওয়ায় এবং ডাইনি বলে রটানো সবটাই এই ঘটনার ক্ষেত্রে উঠে আসছে। যদিও এখনই এই খুনের ঘটনার বিষয়ে পরিষ্কার করে কিছু বলা যাচ্ছে না।
মৃতের পরিবারের সঙ্গে কথা পুলিশ জানতে পেরেছে, ধৃত সঞ্জীব আংশিক মানসিক ভারসাম্যহীন। তার কাজের গতিবিধি রয়েছে সন্দেহজনক । নিজের বৌদিকে সে অনেক ভাবে সন্দেহের চোখে দেখতো। পারিবারিক বিবাদ তো এই ঘটনার পিছনে জড়িত রয়েছেই। পাশাপাশি অশালীন আচরণের প্রতিবাদ করা অথবা ডাইনি সন্দেহে খুন করা এসব ঘটনা যুক্ত থাকতে পারে।
হবিবপুর থানার পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের স্বামী নাইপ কিসকু তার ভাই সঞ্জীবের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট থানায় খুনের লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছে। অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পুরো বিষয়টি নিয়ে তদন্ত শুরু করা হয়েছে।