Advertisment

ডিএম-এর মারের পর 'হারিয়ে' গেলেন বিনোদ সরকার, পুলিশি হাতের অভিযোগ পরিবারের

"রাত হলে আমাদের বাড়িতে আসেন ফালাকাটা থানার পাঁচজন পুলিশকর্মী। আমাদেরকে এফআইআর-এর বিষয়টি মিটিয়ে ফেলার অনুরোধ করেন তাঁরা। বলা হয়, এফআইআর তুলে নিলে আমার ভাইপোকে চাকরি দেওয়া হবে।"

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

আলিপুরদুয়ারের জেলাশাসক নিখিল নির্মল কাণ্ডে এলো নয়া মোড়। স্থানীয় সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল থেকে চাঞ্চল্যকরভাবে উধাও হলেন নির্মলের স্ত্রী নন্দিনী কৃষ্ণনের বিরুদ্ধে ফেসবুকে কুমন্তব্য করার দায়ে অভিযুক্ত বিনোদ সরকার। কিন্তু আরও চাঞ্চল্যকরভাবে খুঁজে পাওয়া গেল তাঁকে। অভিযোগ, হাসপাতাল থেকে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার "অছিলায়" পুলিশ বাইকে চাপিয়ে তাঁকে নিয়ে যায় ফালাকাটার মানবাধিকার কর্মী সুকুমার ঘোষের বাড়িতে। সেখানে ছ'ঘন্টা বসিয়ে রাখা হয় তাঁকে। দেখা করতে দেওয়া হয় নি পরিবারের কাউকে, কিন্তু ফালাকাটা থানার আইসি সৌম্যজিৎ রায় তাঁর সঙ্গে দেখা করেন বলে ওই বাড়িতে বসেই সংবাদ মাধ্যমের কাছে দাবী করেন বিনোদ।

Advertisment

পুলিশের হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর বিনোদকে ফালাকাটা থানায় পুলিশের উপস্থিতিতেই বেধড়ক মারধর করেন নির্মল ও নন্দিনী, যার ফলে নির্মলকে দশদিনের বাধ্যতামূলক ছুটিতে পাঠানো হয়েছে, এবং আপাতত জেলা ছাড়া তিনি। গায়েব করে দেওয়া হয়েছে বিনোদকে, মঙ্গলবার দাবি করেন তাঁর পরিবার। এই ঘটনার জেরে নতুন করে চাঞ্চল্য ছড়ায় ফালাকাটায়।

publive-image বিনোদের পরিবারের দায়ের করা এফআইআর-এর প্রতিলিপি

অভিযোগ, সোমবার জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর মঙ্গলবার বেলার দিকে শারীরিক সমস্যা নিয়ে ফালাকাটা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি হন বিনোদ। চিকিৎসকরা পরীক্ষার জন্য ডে কেয়ার সেন্টারে রাখেন তাঁকে, এবং তাঁর পরিবারকে বলা হয় পরে আসতে। বিকেলে তাঁর সঙ্গে দেখা করতে গেলে তাঁকে খুজে পান নি বলে জানান তাঁর পরিবারের সদস্যরা।

আরও পড়ুন: মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী, নিখিল নির্মলকে শাস্তি দিন

হাসপাতালের সুপার চন্দন ঘোষ সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের বলেন, "আমরা তাঁকে ইসিজি সহ অন্যান্য পরীক্ষার জন্য ডে কেয়ারে রাখি। এরপর তাঁকে বিভিন্ন ডাক্তার ও সাইকিয়াট্রিস্টরা দেখেন। তবে তেমন কিছু সমস্যা না থাকায় তাঁকে আমরা রিলিজ করে দিই।"

জেলাশাসকের স্ত্রীকে কটূক্তি করার দায়ে ফালাকাটার বিডিও-র তরফে লিখিত অভিযোগ পেয়ে গত রবিবার ফালাকাটা থানার পুলিশ তুলে নিয়ে যায় বিনোদকে। এরপরে পুলিশের সামনে তাঁকে নির্মল শুধু মারধরই করেন না, প্রাণে মারার হুমকিও দেন। গোটা ঘটনার ভিডিওটি উল্কাগতিতে ছড়িয়ে পড়ে গণমাধ্যমের পাশাপাশি সামাজিক মাধ্যমেও। নিন্দার ঝড় ওঠে রাজ্য জুড়ে। এরপরে কড়া নিরাপত্তায় সোমবার বিনোদকে আলিপুরদুয়ার আদালতে তোলা হলে বিচারক তাঁকে ১,০০০ টাকার বন্ডে জামিন দেন।

আদালত থেকে জামিন পেয়ে সম্ভবত শারিরীক ও মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন বিনোদ। আত্মীয়রা বাড়ি ফিরতে বলেন তাঁকে, কিন্তু রাতে তাঁর উপর ফের প্রশাসনিক অত্যাচার হতে পারে, এই আশঙ্কায় বাড়ি না ফিরে বিকেলেই আলিপুরদুয়ারের জটেশ্বর এলাকায় এক আত্মীয়ের বাড়ি চলে যান তিনি বলে খবর পরিবার সূত্রে।

বিনোদের কাকা রতন সরকার জানান, "আমরা জেলাশাসকের বিরুদ্ধে ফালাকাটা থানায় লিখিত অভিযোগ করব, এই বিষয়ে পরিবার ও এলাকাবাসীদের সাথে দফায় দফায় আলোচনা করে এফআইআর করতে যাই। থানায় তা জমাও নেওয়া হয়, কিন্তু আমরা রিসিভড কপি পাই নি। কারণ তাতে আধিকারিকের নাম রয়েছে।

"এরপরে রাত হলে আমাদের বাড়িতে আসেন ফালাকাটা থানার পাঁচজন পুলিশকর্মী। আমাদের এফআইআর-এর বিষয়টি মিটিয়ে ফেলার অনুরোধ করতে থাকেন তাঁরা। বলা হয়, এফআইআর তুলে নিলে আমার ভাইপোকে চাকরি দেওয়া হবে। এইভাবে আমাদের ক্রমাগত প্রলুব্ধ করতে থাকেন। কিন্তু আমরা তাতে সাড়া দিই নি। রাত সাড়ে এগারোটা নাগাদ ওঁরা চলে যান। আজ বেলার দিকে আমাদেরকে রিসিভড কপি দেওয়া হয়।"

আরও পড়ুন: ডিএম নিখিল নির্মলের বিরুদ্ধে আদালতে যাবেন, বললেন বিনোদ

বিনোদের আরেক কাকা মৃত্যুঞ্জয় সরকার জানান, "মারধরের ঘটনার পর থেকে গায়ে ব্যথা হওয়ার পাশাপাশি মানসিকভাবেও ভেঙে পড়েছে আমার ভাইপো। তাই আজ বেলার দিকে আমরা তাকে ফালাকাটা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ভর্তি করাই। এরপর আমরা বাইরে আসি। বিকেলে তার সাথে দেখা করতে এলে দেখি সে উধাও। হাসপাতালের কেউ কিছু জানাতে পারছে না। আমাদের সন্দেহ হয়, পুলিশ তাকে গায়েব করে দিয়েছে।"

কেন এ ধরনের সন্দেহ? উত্তরে রতনবাবু বলেন, "পুলিশ চাইছিল আমরা আধিকারিকদের বিরুদ্ধে যে লিখিত অভিযোগ করেছি, তা আমার ভাইপোর চাকরির বিনিময়ে তুলে নিই। কিন্তু আমরা রাজি হই নি। এইভাবে তাকে চাপে ফেলে মামলা তুলে নিতে বাধ্য করলে কিন্তু আমরা এর শেষ দেখে ছাড়ব।"

north bengal government of west bengal
Advertisment