/indian-express-bangla/media/media_files/2025/04/20/IG7xnw2DffhyfqkEjC9P.jpg)
হুইলচেয়ারে কলকাতার অলিগলিতে খাবার ডেলিভারি, জীবন যুদ্ধে হার না মানা এ কাহিনীতে গায়ে কাঁটা দেবে
Subhashish Mandal Deliver Food On wheelchair: ভয়াবহ দুর্ঘটনার কবলে পড়ে দুটি পা হারিয়ে স্রেফ ইচ্ছাশক্তিতে ভর করেই জীবন যুদ্ধে জয়ী বছর ২৭-এর শুভাশিস মণ্ডল। হুইলচেয়ারে চেপে কলকাতার অলিগলিতে প্রতিদিন খাবার ডেলিভারি করে নিজের এক আলাদা পরিচিতি তৈরি করেছেন শুভাশিস। তার এই লড়াই, ইচ্ছাশক্তিকে কুর্নিশ জানিয়েছেন সাত থেকে সাতাশি।
দুর্ঘটনায় মেরুদন্ডে গুরুতর চোট পেয়ে হারিয়ে ফেলেছিলেন হাঁটার ক্ষমতা। দুর্গাপুরে মেরুদণ্ডের অস্ত্রোপচার ও ভেলোরে দীর্ঘ চিকিৎসা করেও লাভের লাভ কিছুই হয়নি। কয়েক বছর শয্যাশায়ী থেকে ফের ঘুরে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে শুরু হয় শুভাশিসের লড়াই। ২০২৫ সালে তিনি নিজেই নিজের ভাগ্যের চাকা ঘোরাতে শুরু করেন।
শুভাশিস এখন একজন Zomato-র ডেলিভারি পার্টনার। প্রতিদিন সকালে Zomato টি-শার্ট গায়ে নিজের মোটরচালিত হুইলচেয়ারে চেপে কলকাতার অলিগলিতে খাবার পৌঁছে দেন। বেহালার হাজী সাহেব রেস্টুরেন্টের সামনে দাঁড়িয়ে পরবর্তী অর্ডারের জন্য অপেক্ষা করতে করতে তিনি বলেন, “আমি ২০ বছর বয়সে দুর্ঘটনার কবলে পড়ি। তারপর থেকে আর হাঁটতে পারিনি।”
বাঁকুড়ার প্রত্যন্ত গ্রামের কৃষক পরিবারের ছেলে শুভাশিস। জীবনের কঠিন সময়ে তার বন্ধুদের পাশে পাওয়াই যেন ছিল আশীর্বাদস্বরূপ। “এই হুইলচেয়ারটি আমার বন্ধুরা আমাকে উপহার দিয়েছে। ওদের সাহায্য ছাড়া আজ আমি জীবনের মূল স্রোতে ফিরতে পারতাম না", জানান শুভাশিস।
শুভাশিসের জীবন বদলে দিয়েছে একটি বিশেষ ডিজাইনের হুইলচেয়ার, যা তৈরি করেছে IIT মাদ্রাজের কিছু ছাত্রছাত্রী। এই হুইলচেয়ারের সৌজন্যেই আজ সে নির্বিঘ্নে রাস্তায় চলাফেরা করে এবং জীবনের সঙ্গে লড়াই জারি রেখেছে।
শুভাশিসের গল্প শুধু একজন মানুষের নয়, এটি এক অনুপ্রেরণার গল্প— যেখানে অদম্য ইচ্ছাশক্তি, বন্ধুত্ব এবং প্রযুক্তি মিলেই গড়ে তুলেছে জীবনের নতুন দিশা।
ধনুকভাঙা পণেই গগনচুম্বী সাফল্য, জয়েন্টে দেশের সেরা বাংলার দেবদত্তা, এমন সাফল্যে গর্ব হতে বাধ্য!
শুধু খাবার ডেলিভারিই নয়, শুভাশিস একজন দক্ষ অ্যাথলেটও। সম্প্রতি তিনি মধ্যপ্রদেশের গোয়ালিয়রে অনুষ্ঠিত বিশেষভাবে সক্ষমদের জাতীয় রাগবি টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করেছেন। এখানেই থেমে থাকেননি তিনি। ১৬ই মার্চ কলকাতায় আয়োজিত হুইলচেয়ার ম্যারাথনে অংশ নিয়েছেন তিনি। শুভাশিস বলেন, “আমি Zomato-তে তিন মাস ধরে কাজ করছি। এই সময়ের মধ্যে আমার কলকাতার রাস্তায় চলার বেশ অভিজ্ঞতা হয়ে গেছে।”
বর্তমানে বেহালার বাসিন্দা শুভাশিস ফুটবলের বিরাট ভক্ত, নিয়মিত শরীরচর্চা করেন এবং প্রতিদিন জীবনকে উপভোগ করেন নিজের মতো করে। তার কথায়, “আমি জানি, হয়তো আর কখনোই হাঁটতে পারবো না। কিন্তু সেই ব্যর্থতা আমাকে থামিয়ে রাখতে পারবে না। নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে আজ আমি উপার্জনের ক্ষমতা অর্জন করেছি, যেটা আমার কাছে বিরাট পাওনা ।”
Zomato-তে প্রতিদিন গড়ে ১০টি অর্ডার ডেলিভারি করেন শুভাশিস। দিনে প্রায় ৫০০ টাকা রোজগার করেন তিনি। তার শিফট শুরু হয় সকাল ৭টা থেকে ১১টা এবং সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১১টা পর্যন্ত। শুভাশিসের এই সংগ্রাম কাহিনী সমাজের সকলের কাছে এক অনুপ্রেরণা। তিনি প্রমাণ করে দিয়েছেন, শরীর নয়, মনই মানুষের সবচেয়ে বড় শক্তি।