তালিবানি জমানায় সঙ্গীত চর্চা এখন নিষিদ্ধ আফগানিস্তানে। আফগানদের শিল্প-সংস্কৃতির সঙ্গে যুগ যুগ ধরে জড়িয়ে রয়েছে সঙ্গীত। কিন্তু তালিবানের রক্তচক্ষু এড়িয়ে সে সব আর সম্ভব নয়। আফগানিস্তানের জাতীয় সঙ্গীত প্রতিষ্ঠানের পড়ুয়া-শিক্ষকরা তাই দেশ ছেড়ে বিভুঁইয়ে এসে সঙ্গীতচর্চায় মন দিয়েছেন। বিদেশেই সঙ্গীত স্কুল গড়ার কথা ভাবছেন তাঁরা।
সোমবার পড়ুয়া-শিক্ষকরা পরিবার-সহ পর্তুগালে চলে আসেন। ইউরোপের দেশ তাঁদের আশ্রয় দিয়েছে। আর পর্তুগালেই নতুন করে স্কুল তৈরি করতে চাইছেন তাঁরা। ২৭৩ জনের সেই গ্রুপে ১৫০ জন সঙ্গীত-পড়ুয়া রয়েছে। কাতারের দোহা হয়ে পর্তুগালের লিসবনে পৌঁছন তাঁরা। ছসপ্তাহ ধরে পাঁচবার এয়ারলিফটের মাধ্যমে সবাই পর্তুগালে এসে পৌঁছন।
প্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা এবং অধিকর্তা ডা. আহমেদ সরমস্ত জানিয়েছেন, "পর্তুগালে সবাই চলে আসায় প্রথম এবং একমাত্র কর্তব্য সবাইকে প্রাণে বাঁচানোর কাজ এবার শেষ হল। সবাই এবার স্বাধীন।" বিভিন্ন দেশের সরকার এবং কর্পোরেট সংস্থা, বিশিষ্ট ব্যক্তিরা আর্থিক সাহায্য করে সঙ্গীতজ্ঞদের এই গ্রুপকে উদ্ধার করেছেন। সরমস্তের কথায়, এবার থেকে সঙ্গীতজ্ঞরা সাহস এবং সমাধানের প্রতীক হবেন। তালিবানদের অত্যাচার, জুলুমের বিরুদ্ধে তাঁদের সংগ্রাম শুধুমাত্র আফগান শিল্পীরাই নয়, বরং গোটা আফগান জাতির জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।
গত ১৫ আগস্ট থেকে কয়েক লক্ষ আফগান দেশ ছেড়েছেন। তাঁদের মধ্যে সঙ্গীত শিল্পী, ক্রীড়াবিদ, সাংস্কৃতিক জগতের মানুষ, সাধারণ নাগরিক তালিবানের হাত থেকে পালিয়ে বেঁচেছেন। আফগান মহিলা ফুটবল দলও পর্তুগালে আশ্রয় নিয়েছে। এই মুহূর্তে রোনাল্ডোর দেশে ৭৬৪ জন আফগান আশ্রয় নিয়েছেন।
আরও পড়ুন হিজাব পরায় শিক্ষিকাকে বদলি করল স্কুল, ক্ষুব্ধ পড়ুয়া-অভিভাবকরা, শুরু আন্দোলন
গত দুই দশকে পপ সঙ্গীত আফগানিস্তানে বহু জনপ্রিয় হয়। কিন্তু বহু সঙ্গীতশিল্পী তালিবান জমানায় নিজেদের প্রাণসংশয়ে ছিলেন। শরিয়া আইন প্রতিষ্ঠার জেরে তালিবান জমানায় সঙ্গীতের আর কোনও জায়গা নেই। ২০১০ সালে আফগানিস্তান জাতীয় সঙ্গীত প্রতিষ্ঠান তৈরি হওয়ার পর থেকে এটি নয়া আফগানিস্তানের প্রতীক হয়ে ওঠে। যেখানে ছেলে-মেয়ে উভয়েই শিক্ষাগ্রহণ করে। সেইসঙ্গে আমেরিকা-ইউরোপে সঙ্গীতানুষ্ঠানও করেছে।
কাবুলে সেই সঙ্গীত স্কুল এখন তালিবান দখলে। তাদের ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট আটকে দেওয়া হয়েছে। অফিস ভাঙচুর করা হয়েছে বলে জানিয়েছে প্রাক্তন আধিকারিকরা। এখন পর্তুগালেই স্কুল ফের শুরু করার কথা ভাবছেন পড়ুয়া-শিল্পীরা। লিসবনই এখন আফগান শিল্পীদের ফের সুর নিয়ে বাঁচার আশ্রয় দিচ্ছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন