তালিবান আগ্রাসনে জর্জরিত আফগানিস্তানের নানান প্রদেশ। দেশের উত্তর থেকে দক্ষিণ সর্বত্রই নিজেদের আয়ত্বে আনতে ক্রমাগত যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে তারা। এবার তিনটি প্রাদেশিক রাজধানী-সহ উত্তর সেনা সদর নিজেদের দখলে এনেছে তালিবান গোষ্ঠী। আফগান বাহিনীর সঙ্গে ক্রমাগত যুদ্ধও করতে পারেনি কোনও সুরাহা।
উত্তর-পূর্বে বাদাখশান এবং বাঘলান প্রদেশের রাজধানী এবং পশ্চিমে ফারাহ প্রদেশের পতন দেশের কেন্দ্রীয় সরকারের উপর আগাম চাপ বাড়িয়ে তুলছে প্রতিনিয়ত। তার সঙ্গে কুন্দুজের একটি প্রধান ঘাঁটি হারানোর বিষয়টি সৃষ্টি করেছে এক আশাতীত পরিস্থিতি। আফগান প্রেসিডেন্ট আশরাফ ঘানি বালখ প্রদেশে এসেছেন। এই প্রদেশটি ইতিমধ্যেই তালিবান-নিয়ন্ত্রিত এলাকা দ্বারা বেষ্টিত। নৃশংসতা ও দুর্নীতির অভিযোগের সঙ্গে জড়িত যুদ্ধবাজদের থেকে আফগান যোদ্ধাদের ফিরিয়ে আনার জন্য যথেষ্ট চেষ্টায় লিপ্ত তিনি।
রাজধানী কাবুল যদিও বা এখনও পর্যন্ত তালিবান আক্রমণের সম্মুখীন সেইভাবে হয়নি। তারপরেও তালিবানদের গতি এবং আগ্রাসন ক্রমশই প্রশ্ন তুলছে দেশের নিরাপত্তার প্রতি। আফগান বাহিনীর অবিরাম যুদ্ধও দেশের পরিস্থিতি সামাল দিতে ক্রমশই ব্যর্থ হয়েছে। তালিবান আক্রমণের মোকাবিলা করতে না পেরে অনেক যোদ্ধাই যুদ্ধক্ষেত্র ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছেন বলে জানা গেছে। প্রশ্ন উঠছে, সাধারণ মানুষের নিরাপত্তা নিয়ে। সাধারণ মানুষের দূর্বিসহ পরিস্থিতি ক্রমশই ঊর্ধ্বমুখী। মার্কিন সেনা প্রত্যাহার প্রায় সম্পূর্ণ, তারা বিমান হামলা চালিয়ে কিছুটা পরিস্থিতি আয়ত্বে এনেছিলেন বটে তবে স্থল অভিযানে তারা কোনওরকম অংশগ্রহণ করেনি।
পশ্চিমাঞ্চলীয় ফারাহ প্রদেশের একজন সংসদ সদস্য হুমায়ুন শহিদজাদা জানান, তাঁর প্রদেশের রাজধানীও এবার তালিবানদের দখলে। প্রতিবেশী নিমরোজ প্রদেশও সাম্প্রতিক দিনগুলোতে তালিবানদের এক সপ্তাহ ব্যাপী যুদ্ধ অভিযানের পর তারা দখল করে নেয়। আফগান যোদ্ধাদের রক্তাক্ত লাশ তারা টেনে নিয়ে যাওয়ার সঙ্গে স্লোগান দিতে থাকে “ঈশ্বর মহান”! হাতে এম-১৬ রাইফেল এবং রাজধানীর রাস্তায় খোঁজ মেলে হাম্ভিস ও ফোর্ড পিকআপ ভ্যানের। বাদাখশানের সাংসদ হুজাতউল্লাহ খেরাদমান্দ বলেন, তালিবানরা তার প্রদেশের রাজধানী ফৈজাবাদ দখল করেছে। বাঘলানের রাজধানী পলি-খুমরিও তালিবান নিয়ন্ত্রণে। গুলাম রাবানির মতে বুধবার কুন্দুজ বিমানবন্দরে আফগান ন্যাশনাল আর্মির ২১৭তম কোরের সদর দফতর তালিবানদের দখলে আসে। আফগান যোদ্ধাদের অনেকেই আত্মসমর্পণ করেছে বিরোধীদের হাতে এবং এই ঘটনা নিঃসন্দেহে দেশের ক্ষেত্রে এক ঝুঁকির বিষয়। কর্তৃপক্ষের আশঙ্কা কোন ওবড় ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
আরও পড়ুন দখলে দেশের উত্তরাঞ্চল! তালিবান আতঙ্কে ত্রস্ত আফগানিস্তান
স্থানীয় বাসিন্দাদের সুত্রে জানা গেছে, নারীদের উপর নিপীড়ন মূলক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে তালিবানরা। তার সঙ্গে পুড়িয়ে দিয়েছে স্কুল এবং কিছু এলাকায় প্রতিহিংসামূলক হত্যার খবর পাওয়া গেছে। মার্কিন শান্তিদূত জালমে খলিলজাদ জানান, জোর করে তালিবানরা ক্ষমতায় এলেও আন্তর্জাতিক স্তরে তাদেরকে সরকার হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া কোনওভাবেই হবে না।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন