প্রেসিডেন্ট পালিয়েছেন। বিভিন্ন রাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতেরা সেদেশ ছেড়েছেন। ফের তালিবানদের দখলে কাবুল সহ গোটা আফগানিস্থান। কার্যত বিনা যুদ্ধেই একের পর এক শহরের কর্তৃত্ব গিয়েছে জঙ্গি গোষ্ঠীর হাতে। তালিবান নেতৃত্বাধীন নতুন সরকারেরও ঘোষণা সময়ের অপেক্ষা মাত্র। এই পরিস্থিতিতে তালিবানিরাজ ঘিরেই আফগানিস্থানজুড়ে আতঙ্ক জোড়াল হয়েছে। অতীতের স্মৃতি মনে করেই আঁতকে উঠছেন সেদেশের গণতন্ত্রপ্রেমী বাসিন্দারা। চোখে মুখে আতঙ্ক। বিশেষ করে নতুন প্রজন্মের মহিলারা। আবারও নাগরিকদের মৌলিক অধিকারের জলাঞ্জলি। থাকবে না মেয়েদের স্বাধীনতা। ক্রমশ স্বাধীনসত্বায় অভ্যস্থ আফগান মহিলাদের এখন শুধু বলছেন, "আর ভয়ঙ্কর অতীতে ফিরতে চাই না।"
তালিবানদের জালাবাদ দখল সম্পন্ন হতেই আশঙ্কা গভীর হচ্ছিল। এই বুঝি কাবুলের কর্তৃত্বও গেল জঙ্গি গোষ্ঠীর হাতে। কয়েক ঘন্টার মধ্যেই কাবুলবাসীর আশঙ্কা সত্যি হল। তালিবানদের কব্জায় এল কাবুল। কারোর চোখে বিস্ময়, কেউ আবার অতীত মনে করেই শিউরে উঠছেন। নতুন প্রজন্মের মহিলারা মাথা চাপড়াচ্ছেন। কেমন সেই ঘটনা? রইল তারই বিবরণ।
আরও পড়ুন- কব্জায় কাবুল, ‘যুদ্ধ শেষ’-এর ঘোষণা তালিবানের
তালিবানদের কাবুল জয়ের কয়েক ঘন্টা আগে রবিবার দুপুরে কাল্লাই ফাতুল্লা অঞ্চলের একটি স্কুলে ছুটি ঘোষণা করা হয়। প্রধান শিক্ষক স্কুলের শিক্ষিকাদেরও দ্রুত চলে যেতে বলেন। কারণ ৬২ বছর বয়সী প্রধান শিক্ষক অতীত থেকে শিক্ষা নিয়েছেন। তিনি জানেন যে, তালিবানরা নারী শিক্ষার বিরোধী এবং চায় না মেয়েরা বাড়ির বাইরে বেড়িয়ে কাজ করুক। দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে প্রধান শিক্ষক বলেছেন, "এখানে যেসব মেয়েরা পড়ায় তাঁদের বেশিরভাগেরই বয়স ২৫ থেকে ৩৫-এর মধ্যে। প্রায় ২০ জন শিক্ষিকা রয়েছে। ওঁরা আমার মেয়ের মতো। ওঁদের জীবন বিপন্ন হোক- এমন কোনও কিছুই আমি চাইবো না।"
তালিবাররা কাবুলের দরজায় কড়া নাড়ছে। এই খবর ছড়িয়ে পড়তেই ভয়ের সঙ্গেই শহরবাসীর মধ্যে ব্যস্ততা বাড়ে। বিভিন্ন ব্যাংক থেকে টাকা তোলার ভিড় লক্ষ্য করা যায়। মেয়েদের বিউটি পার্লারের ঝাঁপ বন্ধ করে দেওয়া হয়। অবস্থা যে জটিল হতে চলেছে তার ইঙ্গিত জোড়াল হয়।
১৯৯০ সালে তালিবানরাজের কথা বলতে থাকেন কাবুলের বয়ঃজেষ্ঠ মহিলারা। তালিবান আমলে মহিলাদের কোনও স্বাধীনতা ছিল না। মৌলিক অধিকার কার্যত ধ্বংস হয়েছিল। শিক্ষার অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়। সে এক ভয়াবহ স্মৃতি। যা শুনে শিউরে উঠছে কাবুলের নবপ্রজন্ম। বেসরকারি স্কুলের এক শিক্ষিকা দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেন, "আমরা সেই ভয়ঙ্কর স্মৃতিরক কথা কানে শুনেছি, দেখিনি। আমরা সেই ভয়ঙ্কর যুগে আর ফিরতে চাই না। শিক্ষকতা না করে ঘরে বসে রয়েছি- এ কথা ভাবলেই ভয় করছে।"
অতঙ্কিত ৩১ বছরের আফগান মডেল সাবানা নুরি। তাঁর কথায়, "তালিবান শাসনে দুর্বিসহ দিন কেটেছে মহিলাদের। বিগত ২০ বছর ধরে আমরা স্বাধীন আফগানিস্থানে বেড়ে উঠেছি। ভাবতেই পারছি না যে তালিবানরা ফের ফিরছে। শাসন ক্ষমতা দখল করছে। আমরা কোনও মতেই সেযুগে ফিরতে রাজি নই।"
রবিবারই আফগানিস্থানের প্রেসিডেন্ট প্রসাদের দখল নিয়ে জেহাদি তালিবানরা। সূত্রের খবর, কোনও অন্তর্বর্তী সরকার চায় না তালিবানরা। ক্ষমতার সম্পূর্ণ হস্তান্তর চায় তারা। শীঘ্রই আফগানিস্তান ইসলামিক আমিরশাহি ঘোষণা করা হবে। আপাতত আফগান রাজধানীজুড়ে শুধুই রুদ্ধতা। সে দেশের অবস্থা এখন গারদে বন্দি দশা বলেই মনে করছেন আফগানরা। মানুষ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য, টাকা মজুতে ব্যস্ত।
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন