ভারতের পর এবার প্রতিবেশী ভুটানের জমিতেও দাবি জানাল চিন। ভুটানের সাকটেঙ্গ অভয়ারণ্যকে নিজেদের বলে দাবি করে আন্তর্জাতিক মঞ্চে সরব হয়েছে বেজিং। যদিও সেই দাবি পুরোপুরি উড়িয়ে দিয়েছে ভুটান। প্রতিবেশীর জমি দাবি করেই ক্ষান্ত হয়নি ড্রাগনের দেশ। ভারতকে বার্তা দিয়ে চিন বলেছে, দুই দেশের সীমান্ত বিরোধে যেন তৃতীয় পক্ষ হস্তক্ষেপ না করে।
বিশ্বজুড়ে পরিবেশ সংক্রান্ত প্রকল্পগুলিতে আর্থিক সাহায্য করতে ভার্চুয়াল বৈঠকের আয়োজন করে গ্লোবাল এনভায়রনমেন্ট ফেসিলিটি কাউন্সিল। বৈঠকে ভারতের পাশাপাশি ভুটান, বাংলাদেশ, মলদ্বীপ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার হয়ে প্রতিনিধিত্ব করেন ভারতের আইএএস অফিসার অপর্ণা সুব্রহ্মণ্যম। সেই বৈঠকে হঠাৎই সাকটেঙ্গ অভয়ারণ্যকে বিতর্কিত এলাকা বলে দাবি করেন চিনের প্রতিনিধি। বেজিংয়ের দাবি, ওই এলাকা নিয়ে বিবাদ রয়েছে৷ ফলে তা নিজেদের বলে দাবি করতে পারে না ভুটান৷ সাকটেঙ্গকে বিতর্কিত এলাকা প্রমাণ করে আর্থিক সাহায্য আটকে দেওয়াই ছিল চিনের আসল উদ্দেশ্য।
তবে, বেজিংয়ের উদ্দেশ্য সফল হয়নি। চিনের আপত্তি সত্ত্বেও সাকটেঙ্গ অভয়ারণ্য উন্নয়নে ভুটানের জন্য বরাদ্দ অনুমদিত হয়। তবে, আন্তর্জাতিক মঞ্চে চিন ও ভূটানের দাবি কার্যবিবরণীতে স্থান পেয়েছে।
গত ২-৩ জুন কাউন্সিল বৈঠকের কার্যবিবরণী অনুযাই চিনা প্রতিনিধি বলেন, 'চিন-ভুটানের বিতর্কিত এলাকা হল সাকটেঙ্গ অভয়অরণ্য়। চিন-ভুটান সীমান্ত আলোচনার অন্যতম ইস্যু ছিল এই বিষয়টি। তাই এই অভয়ারণ্যের জন্য ভুটানের দাবির প্রতিবাদ করছে চিন। কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের সঙ্গে চিন সহমত নয়।' কাউন্সিলে ভুটান, বাংলাদেশ, মলদ্বীপ, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার হয়ে প্রতিনিধি জানান, 'কাউন্সিলে চিনের প্রতিনিধির দাবি উড়িয়ে দিয়েছে ভুটান। সাকটেঙ্গ অভয়ারণ্য ভূটানের অখণ্ড ও সার্বভৌম এলাকা। সীমান্ত বৈঠকে কোনও সময়ই বিতর্কিত এই এলাকা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে কথা হয়নি।'
জানা গিয়েছে যে, নয়াদিল্লিতে অবস্থিত চিনা দূতাবাসকে ভুটানের তরফে কড়া বার্তা দিয়ে জানানো হয়েছে সাকটেঙ্গ অভয়ারণ্যর গোটাটাই তাদের ভূখণ্ডের অবিচ্ছেদ্য অংশ৷ একে অপরের দেশে কোনও দূতাবাস না থাকায় ভুটান ও চিন দিল্লিতে অবস্থিত চিনা দূতাবাসের মাধ্যমেই কাজ করে থাকে।
ভুটান-চিন ২৪ রাউন্ড সীমান্ত বৈঠক করেছে। আগামী বৈঠকে বেজিং সাকটেঙ্গ অভয়ারণ্যের দাবি জানালে থিম্পু তার প্রতিবাদ করবে ও পাল্টা যুক্তি পেশ করবে বলে সূত্রের খবর। উল্লেখ্য ভুটানের পূর্বদিকে অবস্থিত এই অভয়ারণ্যের জমি তাদের বলে এর আগে কখনও দাবি করেনি চিন।
গত শনিবার চিনা বিদেশমন্ত্রকের তরফে হিন্দুস্তান টাইমকে জানানো হয় যে, চীন এবং ভুটানের সীমানা কখনই সীমাবদ্ধ হয়নি। বহু দিন ধরেই পূর্ব, মধ্য ও পশ্চিমের সীমান্ত নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। এই অংশ নিয়ে নতুন করে তাই বিতর্ক উঠে আসছে না। চিন-ভুটান সীমান্ত সমস্যা মেটাতে বেজিং সবসময় অপোস-সমাধানের পক্ষেই কথা বলেছে। চিননা বিদেশমন্ত্রকের এই মন্তব্যেই সমস্যা আরও জটিল হয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।
একই সঙ্গে বলা হয়েছে, এক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ মানা হবে না। যা ভারতের প্রতি বেজিংয়ের বার্তা বলে ধরা হচ্ছে। পুরো বিষয়ের উপর নজর রেখেছে দিল্লি। ভারতীয় কূটনীতিকদের বেশিরভাগই মনে করছেন, কোভিড পরিস্থিতিতে চিনের বিস্তারবাদের এটা একটা উদাহরণ।
চিনে নিযুক্ত প্রাক্তন ভারতীয় দূত অশোক কে কান্থা জানিয়েছেন, 'ভুটানের ভূকণ্ড দাবি কতরছে চিন। এই এলাকা নিয়ে কোনও বিতর্ক নেই। যৌথ সমীক্ষাতেই তা স্পষ্ট করা হয়েছিল।' প্রতিবেশীদের জমি দখলের যে চেষ্টা তারই এক উদাহরণ এই দাবি বলে মনে করেন কান্থা। ভুটানে নিযুক্ত প্রাক্তন ভারতীয় রাষ্ট্রদূত ভি পি হরান ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বলেছেন, 'এটা নতুন দাবি। পূর্ব ভূটানের সাকটেঙ্গ অভয়ারণ্য নিয়ে কোনও বিরোধ নেই। চিনের সীমান্ত থেকে এটা কিছুটা দূরে অবস্থিত। ২০১৩-১৫ ভারত-চিন যৌথ সমীক্ষা অনুসারে উত্তরে পাসামলুঙ্গ ও জাকারলুঙ্গ এবং পশ্চিমে ডোকলাম ও সংলগ্ন কিছু এলাকা ছাড়া দুই দেশের কোনও সীমান্ত বিরোধ নেই।'
Read in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন