চিনের ওপর নির্ভর করেই মার্কিন এবং ন্যাটো জোটের আর্থিক নিষেধাজ্ঞার অস্ত্র ভোঁতা করে দিতে চায় রাশিয়া। কিন্তু, সেই চিনও এবার রাশিয়া থেকে মুখ ফেরাল। চিন তাদের কাঁচামাল কেনে রাশিয়া থেকে। কিন্তু, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ রাশিয়ার ব্যাংকগুলোর ওপর আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। বাধ্য হয়েই মস্কো থেকে এবার কাঁচামাল আমদানি কমানোর কথা ঘোষণা করল বেজিং।
গত বছর চিন-রাশিয়ার ব্যবসার পরিমাণ বেড়ে হয়েছিল ১৪,৬৯০ কোটি মার্কিন ডলার। কিন্তু, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চিনের ব্যবসার পরিমাণ ছিল ১৬০,০০০ কোটি মার্কিন ডলার। অর্থাত্, মার্কিন এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে চিনের ব্যবসার তুলনায় চিন-রাশিয়ার ব্যবসা ছিল দশ ভাগেরও এক ভাগ কম।
সেকথা মাথায় রেখেই চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং দিনকয়েক আগে থেকেই রাশিয়ার সঙ্গে দূরত্ব তৈরির চেষ্টা করেছেন। রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যখন দাবি করেছেন, ইউক্রেন আক্রমণ ছাড়া তাঁর কাছে বিকল্প ছিল না। সেই সময় চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিংও মুখ খোলেন। কিন্তু, পুতিনের উলটো সুরে গিয়ে জিনপিং, ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠার কথা বলেন।
এর একটা কারণ যদি হয়, ইউরোপ এবং আমেরিকার বাজারের ক্ষতি হোক, এটা চিন চায় না। অপর কারণ, অবশ্যই রাশিয়ার ব্যাংকগুলোর ওপর জারি হওয়া আর্থিক নিষেধাজ্ঞা। বর্তমানে চিনের তেল এবং প্রাকৃতিক গ্যাস দুটোরই বেশ দরকার। রাশিয়া থেকে সেসব আমদানি করতে পারলে তাদের ভালোই হত।
কিন্তু, রাশিয়ার ব্যাংকগুলোর সঙ্গে এক্ষেত্রে লেনদেন করতে গেলে চিনকে আর্থিক সমস্যায় পড়তে হবে। কারণ, রাশিয়ার থেকে অর্থ আসবে কীভাবে? যদি ক্রিপ্টোকারেন্সির মাধ্যমেও আসে, তো সেটাই বা কতটা? সবচেয়ে বড় কথা, এক্ষেত্রেও চিনের মাধ্যমে রাশিয়ার কাছে অর্থ পৌঁছনো মেনে নেবে না ইউরোপ এবং আমেরিকা।
ফলে, কার্যত নিষেধাজ্ঞা এবং শাস্তির খাঁড়া নেমে আসবে চিনের ঘাড়েও। এমনিতেই করোনা পরিস্থিতি তৈরি হওয়ায় গোটা বিশ্বে একঘরে হয়ে পড়েছিল লাল ফৌজের দেশ। সেই অস্বস্তি যে তারা আর বাড়াতে চায় না, সেটা বলাই বাহুল্য। আর, সেই কারণেই যে রাশিয়ার সঙ্গে তাঁরা দূরত্ব বজায় রাখছে, সেকথা কার্যত বুঝিয়েই দিয়েছেন চিনের আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ লি শিন।
তিনি বলেছেন, 'চিন এবং রাশিয়ার সম্পর্ক বর্তমানে বিশ্বে সবচেয়ে ভালো জায়গায় আছে। কিন্তু, দুই দেশ জোটসঙ্গী নয়।' রাশিয়ার সঙ্গে এই দূরত্ব বজায় রেখে চলার নীতি শুধু লি শিয়ের নিজের মনগড়া কথা না। এটা আসলে তাঁর দেশেরই কথা। স্পষ্ট করে বললে, বেজিং প্রশাসনের বক্তব্য।
Read story in English