ক্ষুদ্র একটা ভাইরাস, যার জেরে মৃত্যুমিছিল! হাজারো অসুস্থতার সঙ্গে আর্থিক অবনতি। ২০১৯-এর ডিসেম্বর থেকেই চিনের ইউহান প্রদেশ থেকেই মারণ রোগের আকার নেয় করোনা ভাইরাস। গতবছর শেষের দিকে পৃথিবীর কিছু কিছু দেশ সুস্থতায় ফিরতে থাকে। তাদের মধ্যে চিন অন্যতম। সামাজিক অবস্থা ফের আগের রূপ নেয়। মানুষের জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হতে থাকে।
তবে, অতিমারীর যেন সাধ মেটেনি। যোগাযোগ ব্যবস্থা পুনরায় চালু করার পর বেশ কিছুদিন ঠিক থাকলেও গত ২০ জুলাই কমপক্ষে ২০০টির বেশি কোভিড কেসের হদিশ মিলেছে বলেই জানা যাচ্ছে। সূত্র অনুযায়ী, নানজিংয়ের স্বাস্থ্য আধিকারিক বলেন, এই সকল রোগীরা রাশিয়া থেকে আগত একটি ফ্লাইটে কাজে নিযুক্ত ছিল। ১০ জুলাই সেটি বিমানবন্দরে নামে এবং পরের দশ দিনের মধ্যেই সংক্রমণের হার ক্রমশ বৃদ্ধি পেতে থাকে। বিমানের সেই সকল কর্মচারীরা, কোভিড প্রোটোকল সঠিক ভাবে মানেননি বলেই অভিযোগ স্বাস্থ্য আধিকারিকের। ১১ আগস্ট পর্যন্ত সমস্ত স্তরে বিমান পরিষেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে গণপরিসরে কোভিড টেস্ট করানোর প্রক্রিয়া গ্রহণ করা হয়েছে। পরিস্থিতি বিগত বছরের তুলনায় যথেষ্ট জটিল এবং শোচনীয় বলে জানা যাচ্ছে।
সংক্রমণের হার যেহেতু ক্রমশই ঊর্ধ্বমুখী আংশিক লকডাউন আরোপ করা হয়েছে। বাসিন্দাদের প্রবেশ ও প্রস্থান নিয়ন্ত্রণের জন্য চেকপয়েন্ট স্থাপন করা হয়েছে এবং কিছু গণপরিবহন স্থগিত করা হয়েছে। হঠাৎ এমন প্রাদুর্ভাবের জন্য সঠিকভাবে প্রস্তুত না হওয়ায় কর্তৃপক্ষ ব্যাপক সমালোচনার সম্মুখীন। সংক্রমণ প্রতিরোধের বেশ কয়েকটি ব্যবস্থা সঠিকভাবে কার্যকর হয়নি। অতিমারীর এই স্তরে সংক্রমণের আশঙ্কা থেকেই যায় এবং বিমান পরিষেবায় নিযুক্ত কর্মচারীদের কোভিডবিধি লঙ্ঘন করা একদমই উচিত নয়! বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ, আন্তর্জাতিক বিমান সাফাইকর্মীদের থেকে অন্তর্দেশীয় বিমান পরিষেবার কর্মীদের দায়িত্ব আলাদা করেনি এবং তত্ত্বাবধানের গুরুতর অভাব ছিল বলেই জানা যায়। তারপর থেকে, ডেল্টা কোভিড স্ট্রেন আনহুই, গুয়াংডং, হুনান এবং সিচুয়ান-সহ চিনের বিভিন্ন শহর এবং প্রদেশে ছড়িয়ে পড়েছে।
চিনা কমিউনিস্ট পার্টির সিনিয়র ডিসিপ্লিনারি বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষকে কটাক্ষ করে বলেছে, এটি তদারকির অভাব এবং অব্যবস্থাপনা জনিত সমস্যা। সঠিক পরিসরে নজরদারি এবং তৎপরতা থাকলে কখনওই এটি সম্ভব নয়।
আরও পড়ুন ভ্যাকসিন বিভ্রান্তি! কতদিনের মধ্যে নেওয়া উচিত দ্বিতীয় ডোজ? জানুন চিকিৎসকদের পরামর্শ
যে হারে সংক্রমণ ক্রমশ বাড়ছে তাতে প্রশ্ন উঠছে চিনের টিকাকরণ প্রক্রিয়া নিয়ে। আদৌ সেইসব বিমান কর্মীদের টিকা দেওয়া হয়েছিল কিনা সেই নিয়ে আতঙ্কে এখন চিনের মানুষজন। ডেলটা ভ্যারিয়েন্টের প্রভাবেই চিনের এই নতুন সংক্রমণ মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। সূত্র অনুযায়ী, হুনান প্রদেশের ঝাংজিয়াজি জাতীয় উদ্যানের একটি জনপ্রিয় লাইভ অনুষ্ঠান নিয়েও সংক্রমণের উদ্বেগ বাড়ছে। ডালিয়ান শহরে করোনা আক্রান্ত তিনজন ব্যক্তি লাইভ প্রোগ্রামের জন্য জাতীয় উদ্যান ভ্রমণের আগে নানজিং বিমানবন্দরে গিয়েছিলেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অনুষ্ঠানটি ৩০০০ জন মানুষ লাইভ উপভোগ করে। তাদের কারওর মধ্যে দূরত্ব বজায় ছিল না বললেই চলে। তবে বেশ কিছুদিন পার হয়ে যাওয়ার পরেও সংক্রমণের কোনও খবর নেই বলেই জানা যাচ্ছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন