একমাসেরও বেশি সময় ধরে চলছে যুদ্ধ। গৃহহীন হয়েছেন প্রায় ৭০ লক্ষ মানুষ। সেই সঙ্গে দেশ ছেড়েছেন প্রায় ৩৫ লক্ষের বেশি মানুষ। অন্যদিকে ইউক্রেন জানিয়েছে যুদ্ধের কারণে সেদেশে এখনও পর্যন্ত ১৩৬ টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। হতাহতের সংখ্যা বহু। রাষ্ট্রসংঘের তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে একমাস সময়কালেই দেশ ছেড়েছেন অর্ধেকের বেশি শিশু। বিপন্ন স্বাস্থ্য পরিষেবা। হাসপাতালগুলিতে অক্সিজেন সংকট।
অর্ধেকের বেশি ওষুধের দোকান বন্ধ। জল নেই, নেই বিদ্যুৎ। ইউক্রেন জুড়ে যেন শুধুই মৃত্যু মিছিল। তার মাঝেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার সাবধানবানী, যুদ্ধের কারণে ইউক্রেনে বাড়তে পারে কোভিড ১৯ সংক্রমণ। সেই সঙ্গে বাড়তে পারে কলেরা, ডাইরিয়া, যক্ষ্মার মত রোগ। অন্যদিকে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে ইউক্রেনে বেড়েই চলেছ মানুষের মধ্যে উদ্বেগের ঘটনা।
ইউক্রেন প্রশাসন সূত্রে খবর ১৭ থেকে ২৩ মার্চ ইউক্রেনে করোনা সংক্রমিত হয়েছেন ২৭ হাজার ৬৭১ জন । মৃত্যু হয়েছে ৩৮৪ জনের। যুদ্ধের কারণে দেশে কমেছে টিকাদানের সংখ্যা। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা ইতিমধ্যেই দেশকে পরীক্ষা বাড়ানো এবং টিকাদান জারী রাখার কথা বলেছে। একই সঙ্গে যুদ্ধের কারণে সংকটের মধ্যে প্রায় ৮০ হাজার সন্তান সম্ভবা মহিলা। প্রসবের আগে এবং পরের জটিলতা সংক্রান্ত ঝুঁকি তাদের মধ্যে বাড়িয়ে তুলেছে মানসিক উদ্বেগ। একের পর প্রসূতি হাসপাতালের ওপর রুশ হামলা নিয়েও আতঙ্কের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন তারা।
আরো পড়ুন: আরও দামী পেট্রোল-ডিজেল, গত ৬ দিনে ৫ বার দাম-বৃদ্ধি
WHO জানিয়েছে যুদ্ধ বিধ্বস্ত ইউক্রেনে পরিস্রুত পানীয় জলের ব্যাপক ঘাটতি লক্ষ্য করা গিয়েছে। যার ফলে কলেরা ডায়রিয়ার মত রোগ দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। একই সঙ্গে বাড়ছে যৌনরোগে আক্রান্তের সংখ্যা। যুদ্ধের কারণে খাবার এবং জলের দূষণের কারণে বাড়ছে খাদ্য বাহিত এবং জল বাহিত নানান অসুখ।
করোনার দোসর হিসাবে কলেরা ডাইরিয়া দ্রুত ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। শরণার্থী শিবিরে একই সঙ্গে অনেকে আশ্রয় নেওয়ার কারণে বাড়ছে নানান সংক্রামক রোগ। সেই সঙ্গে ট্রমা, মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর ব্যাপক আঘাত এনেছে এই যুদ্ধ। এমনটাই জানিয়েছে বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা। গত ২২ মার্চ ইউক্রেনীয় শরণার্থীদের মধ্যে হামের তিনটি সন্দেহজনক ঘটনা রিপোর্ট করা হয়েছে বলে সংস্থার তরফে জানান হয়েছে। ক্রমেই জটিল হয়ে উঠেছে পরিস্থিতি।
বিশ্ব-স্বাস্থ্য সংস্থা সূত্রে খবর ২৪ ফেরুয়ারি থেকে ২১ মার্চ পর্যন্ত সময়কালে, ইউক্রেনে স্বাস্থ্য পরিষেবা ক্ষেত্রে ৬৪টি আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে। যার ফলে ১৫ জন নিহত এবং ৩৭ জন গুরুতর ভাবে আহত হয়েছেন। এর আগেও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা জানিয়েছে রাশিয়া ইউক্রেনের স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর একাধিক হামলা চালিয়েছে। সেই সব হামলার বিরুদ্ধে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা।
সেই সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা উল্লেখ করেছে ২৪ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৫ মার্চের মধ্যে করোনা টিকা পেয়েছেন ১ লক্ষ ৭৫ হাজার মানুষ। যেখানে যুদ্ধের আগে প্রতিদিন টিকা পেতেন ৫০ হাজার মানুষ। ইউরোপীয় সেন্টার ফর ডিজিজ প্রিভেনশন অ্যান্ড কন্ট্রোল গত সপ্তাহে এক বিবৃতিতে বলেছে ইউক্রেন থেকে আসা শরণার্থীদের কোভিড টিকার দুটি ডোজ প্রয়োজনে বুস্টার ডোজ দেওয়ার কাজ দ্রুত সম্পন্ন করা প্রয়োজন।
Read story in English