Advertisment

দুর্ভিক্ষে জর্জরিত আফগানিস্তান, খাবারের জন্য সন্তানদের বিক্রি করে দিচ্ছেন মা-বাবারা

তালিবান জমানায় আফগানিস্তান অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে যাচ্ছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Taliban release decree saying women must consent to marriage

আফগানিস্তানের মহিলাদের বিয়ে নিয়ে নয়া ফতোয়া জারি করেছে তালিবান।

একা খরায় রক্ষে নেই, তায় যুদ্ধ দোসর! মহামারী, খরা, দুর্ভিক্ষ, দীর্ঘ যুদ্ধে বিধ্বস্ত আফগানিস্তান। দেশের পশ্চিম ভাগের অবস্থা দিন দিন শোচনীয় হচ্ছে। না খেতে পেয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছেন অনেকে। এই পরিস্থিতিতে পরিবারের মুখে অন্ন তুলে দিতে নাবালিকা কন্যাদের বিক্রি করে দিতে বাধ্য হচ্ছেন অভিভাবকরা। সেইরকম এক ঘটনায় শিউরে উঠেছে পশ্চিমী দুনিয়া।

Advertisment

আজিজ গুল নামে এক মহিলা তাঁর ১০ বছরের কন্যাকে ফিরে পাওয়ার জন্য প্রাণ বাজি রেখে লড়াই করছেন। কারণ তাঁর স্বামী তাঁকে না জানিয়েই বিয়ের জন্য মেয়েকে বিক্রি করে দিয়েছেন। কিন্তু স্ত্রীকে জানিয়েছেন ধার করে পাঁচ সন্তানের মুখে খাবার তুলে দিয়েছেন তিনি। যদি স্ত্রীকে সত্যিটা জানাতেন, তাহলে হয়তো আজিজ তাঁকে বাধা দিতেন। ক্ষুধা নিবারণে এক সন্তানের বলিদান দিয়েছেন তিনি।

তালিবান জমানায় আফগানিস্তান অন্ধকার ভবিষ্যতের দিকে যাচ্ছে। ক্রমশ অর্থনীতি ভেঙে পড়েছে সে দেশের। প্রান্তিক মানুষ দুর্ভিক্ষের সম্মুখীন। একেই খরার জেরে গ্রাম কে গ্রামে খাবার নেই, তার উপর দীর্ঘ যুদ্ধের ফলে মরার উপর খাঁড়ার ঘা দিয়েছে। বাধ্য হয়ে এমন চরম সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন আফগানরা।

মূলত আন্তর্জাতিক মহলের দানের উপর অর্থনীতি নির্ভর করছে আফগানিস্তানের। কিন্তু তালিবান ক্ষমতায় আসার পর সেই আর্থিক অনুদান বন্ধ করে দিয়েছে অনেক পশ্চিমী দেশ। আন্তর্জাতিক মহল তাদের সম্পত্তি ফ্রিজ করে দিয়েছে, অনুদান বন্ধ করে দিয়েছে। তালিবান সরকারও পড়েছে মহা ফ্যাসাদে। বিশ বছর আগের নৃশংস স্বভাবের জন্য আর ভুলেও তালিবানের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে চাইছে না কোনও দেশ।

যুদ্ধের ক্ষত বয়ে বেড়াচ্ছেন আফগানরা। আবার খরা এবং অতিমারী তো আছেই। সরকারি কর্মচারীরা দীর্ঘদিন বেতন পাননি। অপুষ্টির জেরে শিশুদের অবস্থা শোচনীয়। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার মতে, দেশের অর্ধেক জনসংখ্যা খাবারের অভাবে ভুগছে। দিন দিন পরিস্থিতি আরও খারাপ হচ্ছে। শিশুরা সবচেয়ে বেশি ভুক্তভোগী। ওয়ার্ল্ড ভিশন এইড সংস্থার জাতীয় অধিকর্তা অসুন্থা চার্লস জানিয়েছেন, খুবই হৃদয়বিদারক ঘটনা যে মা-বাবার পরিবারের মুখে খাবার তুলে দিতে কন্যাসন্তানকে বিক্রি করে দিচ্ছেন।

আরও পড়ুন মাঝ সমুদ্রে নৌকাডুবি, মৃত অন্তত ১৩ জন শরণার্থী

উল্লেখ্য, এই দেশে খুব কম বয়সে মেয়েদের বিয়ে হয়ে যায়। ছেলের পরিবার টাকা দিয়ে বিয়ের চুক্তি করে। ১৫ বছর পর্যন্ত মা-বাবার সঙ্গে থাকে মেয়ে। তারপর চলে যায় বরের বাড়িতে। মেয়ের বিয়েতে পাওয়া টাকা দিয়ে পরিবারের মুখে অন্ন তুলে দেন মা-বাবা। এমনকী ধনী পরিবারের কাছে ছেলেকেও বিক্রি করে দেন বিয়ের জন্য।

আজিজ এমনই এক হতভাগ্য মা। তাঁরও বিয়ে হয়েছিল ১৫ বছর বয়সে। তিনি বলেছেন, তাঁর মেয়ে কান্দি গুলকে যদি ছেলের বাড়ি থেকে নিয়ে যেতে চায় তাহলে নিজেকে শেষ করে দেবে। সংবাদমাধ্যমকে তিনি বলেছেন, "স্বামীর মুখ থেকে জানতে পেরে আমার মন ভেঙে যায়। মনে হচ্ছিল, মরে যাই। হয়তো ভগবানও চায় না আমি মরে যাই।"

আরও পড়ুন ওমিক্রন নিয়ে এবার সতর্ক করলেন ধনকুবের বিল গেটস

তবে আজিজের স্বামীর দাবি, বাকি পাঁচ সন্তানকে বাঁচাতেই একজন বিক্রি করতে বাধ্য হন তিনি। নাহলে সবাই না খেয়ে মরত। যা পরিস্থিতি তাতে মরে গেলেই ভাল হয়, বলছেন আজিজ।

Afghanistan Taliban Government
Advertisment