Advertisment

আমস্টারডামে 'আলোর বেণু', অতিমারী সারিয়ে ডাচ দেশে জমজমাট দুর্গাপুজোর আয়োজন

প্রবাসে পুজো স্পেশ্যাল: কেমন হয় ডাচ দেশে মা দুর্গার আরাধনা? পড়ে নিন।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
Durga Puja 2021, Netherland, Amsterdam, নেদারল্যান্ড, আমস্টারডামের দুর্গাপুজো, bengali news today

নেদারল্যান্ডের দুর্গাপুজো

পৃথা ভট্টাচার্য, আমস্টারডাম, নেদারল্যান্ড: ভারতবর্ষ থেকে ৭১০৬ কিলোমিটার দূরে নেদারল্যান্ডের আমস্টারডামের প্রবাসীরা অন্যবারের মতো এইবারও অসুরদলনীর আরাধনায় মেতে উঠেছেন। গতবছর অর্থাৎ ২০২০ সালে করোনা নামক অতিমারীর কারণে বহু প্রবাসের পুজো বন্ধ ছিল। কিন্তু এইবারের পরিস্থিতি এই ডাচ রাষ্ট্রে অনেকটাই স্বাভাবিক। সবার টীকাকরণ সম্পূর্ণ হয়েছে। তাই এখন বাঙালির শ্রেষ্ঠ মহোৎসব দুর্গাপুজোয় মেতে উঠতে প্রবাসীদের সেই অর্থে বাঁধা নেই। কিন্তু করোনাকালীন যে সমস্ত স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা আবশ্যিক, সেইসব বিধিনিষেধ মানতে বদ্ধপরিকর আমস্টারডামের দুর্গাপুজো আয়োজকরা সবাই। যদিও বদ্ধপরিসরে তথা পরিবহনকালীন মাস্ক পরিধান একান্তভাবেই বাধ্যতামূলক এদেশে, কিন্তু উন্মুক্তস্থানে তুলনামূলক কম জনবহুল স্থানে মাস্ক পরায় ছাড় দিয়েছে এদেশের ডাচ পৌরসংস্থা।

Advertisment

আমাদের দেশে অর্থাৎ ভারতবর্ষে তথা পশ্চিমবঙ্গে দুর্গাপুজো করাটা যতটা সহজ, এদেশে বা আমি মনে করি প্রবাসে পুজো করাটা ততটা সহজ নয়। এদেশে আমাদের পশ্চিমবঙ্গের মতো কোনও ক্লাব প্রাঙ্গণ নেই যে সেখানে পুজো হবে, এখানে প্রেক্ষাগৃহ চাই সমস্ত পুজো আয়োজনের জন্য। তাই প্রাথমিকভাবে সব আয়োজকদেরই একটু কালঘাম ছোটাতে হয়েছিল বটে! পরবর্তীতে ডাচ পৌরসংস্থা অনুমোদন দেয়। এবং আমস্টারডামে শুরু হয় দেবী মহামায়ার আরাধনা। আনন্দধারা-ই আমস্টারডামে সর্বপ্রথম পুজোর উদ্যোগ নেয়। বলা বাহুল্য, কোনও দিক থেকেই এদেশের পুজো কলকাতা বা শহরতলীর পুজোর থেকে কম নয়। বরং, কোনও কোনও ক্ষেত্রে অপেক্ষাকৃত ভালই। যেটা সবথেকে বেশি নজর দেওয়া হয় এদেশে সেটা হল নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলাপরায়ণতা অর্থাৎ সবকিছুই একটা সময় অনুসারে হয়। দিনের নির্দিষ্ট সময়ের জন্য সকাল থেকে রাত অবধি, প্রেক্ষাগৃহ খোলা থাকে সকল দর্শনার্থীদের জন্য। উচ্ছ্বাস তো থাকবেই। কিন্তু সেটা কখনোই যেন বাধন ছাড়া না হয়, সেটার প্রতি সদা তৎপর থাকেন নেদারল্যান্ডের প্রবাসী বাঙালি ও গোটা ডাচ সম্প্রদায়। এদেশে পুজোয় দেশি-বিদেশি সবাই সাদরে স্বাগত, কিন্তু করোনার সম্পূর্ণ টীকাকরণ বাধ্যতামূলক। এবং সম্পূর্ণ টীকাকরণের উপযুক্ত শংসাপত্র ছাড়া এখানে মন্ডপে প্রবেশাধিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে আয়োজকদের তরফে থেকে। 'কল্লোল', 'হইচই', 'আনন্দধারা'-এই তিনটে সংগঠন পুজোর আয়োজন করে।

গতবছরের যাবতীয় বিভীষিকা ভুলেই আমস্টারডামের বাঙালিরা এইবছর একবুক আশা নিয়ে মাতৃবন্দনায় সামিল হবেন। তবে যে শুধু পুজোর ওই কটা দিন পুজোই হবে, তা কিন্তু নয়। রয়েছে নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান সমস্ত আয়োজকদের তরফ থেকেই তাদের নিজস্ব ক্ষেত্রে। উল্লেখযোগ্য- বসে আঁকো প্রতিযোগীতা, নাচ-গান এবং সবথেকে আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকবে আমার মতে আনন্দধারা আয়োজিত সেল্ফি কনটেস্ট। আনন্দধারা সভ্যবৃন্দরা এই সেল্ফি কনটেস্টের নাম দিয়েছেন 'পুজোর তিলোত্তমা'। বঙ্গরমণীদের নিজেকে সেরা প্রমাণ করার অন্যতম সেরা মঞ্চ এই প্রতিযোগীতা। ভারতবর্ষ থেকে বিভিন্ন নামি শিল্পীরাও প্রতিবছর এসে থাকেন তিনটি আয়োজক সংগঠনের পুজোয়।

এইবার আসি, পুজোয় খাওয়াদাওয়ায়। আচ্ছা চা-সিঙাড়া, পোলাও-কষা মাংস ছাড়া কোনও বাঙালির পুজো সম্পূর্ণ হয়েছে কোনওদিন? আর হ্যাঁ, ফুচকা-চাট, ঘুঘনি এইসবই থাকছে হল্যান্ডের দুর্গাপুজোয়। তবে এটা ঠিক যে নির্দিষ্ট অর্থের বিনিময়ে এই লোভনীয় খাবারদাবারের স্বাদ আস্বাদন করা যাবে। অর্থাৎ বিনামূল্যে নয়।

পুজোর চারদিনে বিভিন্নরকমের মেনু রয়েছে। হল্যান্ডে যার মধ্যে বিশেষ উল্লেখযোগ্য হল হইচই আয়োজিত দর্শনাথীদের জন্য চিল মাছের মুইঠ্যা। বলাবাহুল্য, এরকম বিদেশ-বিভুঁইয়ে চিতল মাছ পাওয়া যথেষ্ট দুষ্কর। কিন্তু হইচই-এর আয়োজরবৃন্দ এদেশের সকল বাঙালির কথা বিশেষভাবে মাথায় রেখে চিতল মাছের মুইঠ্যার এলাহি আয়োজন করেছেন।

তাহলে, এত কথার মধ্যে এটা স্পষ্ট কোনওরকম খামতি রাখতে নারাজ নেদারল্যান্ডের প্রবাসী বাঙালিরা তাঁদের সবচেয়ে বড় উৎসব ঘিরে। মন্ডপসজ্জা, খাওয়া-দাওয়া সবেতেই তাঁরা যথেষ্ট সচেতন। নাহলে কলকাতার কুমোরটুলি থেকে প্রতিমা আনয়ন, প্রতিবছর প্রতিমার পরিচর্যা এসব একদমই সুষ্ঠভাবে হবেই বা কেন? যাতে কোনও প্রবাসী বাঙালি নিজের দেশ নিজের শহরের পুজো কোনওভাবেই মিস না করে, সেদিকে যথেষ্ট খেয়াল রেখে চলেছেন আয়োজকরা। আলোর বেণু বেজেই গিয়েছে নেদারল্যান্ডের মাটিতে। এবার আমস্টারডামের ভুবন মাতিয়ে তোলার পালা। ঢাকিরাও চলে এসেছেন নিজেদের তালে সবাইকে করোনা নামক অতিমারীর প্রকোপ থেকে কিছুটা হলেও ভুলিয়ে রাখবেন এই আশায়।

মা জগজ্জননী আমাদের সমস্ত বিপদ, আপদ, অতিমারী থেকে রক্ষা করবেন এই আশা নিয়ে তৈরি হচ্ছে আমস্টারডামবাসী বঙ্গসন্তানগণ। প্রসঙ্গত বলে রাখি, আমার এবার প্রথম প্রবাসে পুজো কাটানো। আমিও বেজায় আশাবাদী আমার প্রথম বিদেশে পুজো নিয়ে। দেখা যাক, কী অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করতে পারি। যতটুকু মনে হচ্ছে, আমাকে নিরাশ করবেন না নেদারল্যান্ডের বাঙালিরা।

ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন

durga puja 2021 Netherlands
Advertisment