Advertisment

নিজের এবং ইউরোপের বিপর্যয় সামলাতে রাশিয়া সফরে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট

ইউক্রেন নিয়ে ইউরোপে অশান্তি এখন তুঙ্গে। পশ্চিমী দেশগুলোর আশঙ্কা রাশিয়া যে কোনও মুহূর্তে ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
France’s Emmanuel Macron flies to Moscow in high-risk diplomatic mission

ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমান্যুয়েল ম্যাক্রোঁ।

অতি গুরুত্বপূর্ণ কূটনৈতিক কর্মসূচি নিয়ে মস্কো গেলেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমান্যুয়েল ম্যাক্রোঁ। ইউক্রেন নিয়ে ইউরোপে অশান্তি এখন তুঙ্গে। পশ্চিমী দেশগুলোর আশঙ্কা রাশিয়া যে কোনও মুহূর্তে ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারে। সেই পরিস্থিতি যাতে তৈরি না-হয়, তা নিশ্চিত করতেই ম্যাক্রোঁর এই সফর। যেখানে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করবেন। পাশাপাশি, যাবেন ইউক্রেনেও।

Advertisment

এই সফরের আগে ন্যাটোভুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গে লাগাতার টেলিফোনে বৈঠক সেরেছেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। পাশাপাশি, ন্যাটো বহির্ভূত ইউরোপের অন্য দেশগুলোর সঙ্গেও তিনি কথা বলেছেন। শুধু তাই নয়, পুতিন এবং ইউক্রেনের রাষ্ট্রনেতাদের সঙ্গেও তাঁর ফোনে বৈঠক হয়েছে। গত একসপ্তাহ ধরে সেই বৈঠকের পরও পরিস্থিতির যে বিরাট উন্নতি হয়েছে, তেমনটা না।

তবে, চেষ্টা ছাড়েননি তিনি। কারণ ন্যাটোর দেশগুলোর তরফে তাঁকেই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে ইউক্রেন পরিস্থিতি সামলানোর। সেই কারণে একদিনের রাশিয়া সফর সেরে মঙ্গলবারই ইউক্রেনে উড়ে যাবেন ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট। এই পরিস্থিতিতে তাঁকে খালি হাতে ফিরতে হলে, বড় কঠিন পরিস্থিতির মুখে পড়তে হবে ইউরোপকে। যার অন্যতম হল, ইউক্রেনকে রক্ষা করতে রাশিয়ার বিরুদ্ধে যুদ্ধে পর্যন্ত নামতে হতে পারে ন্যাটো বাহিনীকে।

ন্যাটো লড়াইয়ে জড়ালে, তার সঙ্গী হিসেবে আমেরিকাকেও সেই যুদ্ধের শরিক হতে হবে। এমন কঠিন পরিস্থিতি যাতে তৈরি না-হয়, তা নিশ্চিত করাই এখন ম্যাক্রোঁর কাজ। তাঁর সঙ্গে এমনিতে পুতিনের সম্পর্ক বেশ ভালোই। অতীতে উভয়ের মধ্যে বহু বৈঠকও হয়েছে। তবে, পরিস্থিতির চাপ এবং রাশিয়ার লক্ষ্যপূরণে ক্রেমলিন কী সিদ্ধান্ত নেয়, তা এখনও নিশ্চিত নয়। কারণ, আমেরিকার কাছে খবর আছে যে রাশিয়া শীঘ্রই ইউক্রেনে হামলা চালাতে পারে।

তবে, সেকথা মস্কো স্বীকার না-করলেও, পুতিনের সাম্প্রতিক চিন সফরকে বিশেষভাবে মাথায় রাখছেন ইউরোপের রাষ্ট্রপ্রধানরা। শুধুমাত্র বাণিজ্যিক স্বার্থে পুতিনের ওই চিন সফর ছিল না-বলেই ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর ধারণা। এর প্রধান কারণ, চিনে পাইপলাইনের মাধ্যমে গ্যাস সরবরাহ করে থাকে রাশিয়া। এই পাইপলাইন গ্যাস সরবরাহে রাশিয়ায় যিনি একচেটিয়া কারবার করেন, সেই শিল্পপতিই ছিলেন না পুতিনের সফরসঙ্গীদের দলে।

সূত্রের খবর, ম্যাক্রোঁ নিজেও তাঁর সফর কতটা সফল হবে, সেই ব্যাপারে নিশ্চিত নন। কারণ, ইতিমধ্যেই ইউক্রেন সীমান্তে রাশিয়া এক লক্ষ সেনা মোতায়েন করেছে। ইউক্রেন যাতে ন্যাটোভুক্ত হতে না-পারে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং ন্যাটোর দেশগুলোর কাছে সেই নিশ্চয়তাও চেয়েছে রাশিয়া। এই পরিস্থিতিতে ম্যাক্রোঁ চাইছেন, যাতে যুদ্ধকে কিছুদিনের জন্য হলেও ঠেকানো সম্ভব হয়। অন্তত এপ্রিল পর্যন্ত। কারণ, এপ্রিলে হাঙ্গেরি, স্লোভানিয়ার পাশাপাশি ফ্রান্সেও নির্বাচন। সেই নির্বাচনে জিততে হলে, ম্যাক্রোঁর সফল বিদেশনীতি অন্যতম হাতিয়ার হতে পারে।

আরও পড়ুন- বালুচিস্তানের স্বাধীনতা সংগ্রামীদের হত্যা পাক সেনার

২০১৭ সালে ক্ষমতায় আসার পর থেকে ম্যাক্রোঁর বিদেশনীতি রীতিমতো প্রশংসা পেয়েছে ফ্রান্সে। কারণ, নরমে-গরমে তিনি বারবার পুতিনকে প্রাক্তন সোভিয়েতভুক্ত দেশগুলোর ওপর হামলা থেকে বিরত রেখেছেন। একদিকে তাঁকে প্রকাশ্যে রাশিয়ার আগ্রাসনের নিন্দা করতে দেখা গিয়েছে। আবার, নির্বাচনে জেতার পর ভার্সাইয়ের প্রাসাদে পুতিনকে লাল কার্পেট পেতে স্বাগত জানাতেও দেখা গিয়েছে। তার দু'বছর পর ফরাসি প্রেসিডেন্টের বাসভবনে ম্যাক্রোঁ ও পুতিনের বৈঠকও হয়েছে।

তাই বলে ম্যাক্রোঁ যে সম্পূর্ণ সফল হয়েছেন, তেমনটা না। আফ্রিকায় ফ্রান্স প্রভাবিত মালিতে গতবছর রাশিয়া মদতপুষ্ট বাহিনী ক্ষমতা দখল করেছে। আর, এজন্য ম্যাক্রোঁকে কম কটাক্ষ শুনতে হয়নি। বিশেষ করে পূর্ব ইউরোপের যে দেশগুলো দীর্ঘদিন সেভিয়েতভুক্ত ছিল, তারা ফরাসি প্রেসিডেন্টের সমালোচনায় মুখর হয়েছে। ম্যাক্রোঁর বিরুদ্ধে দুর্বল রাশিয়া-নীতির অভিযোগ এনেছে পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো। বিশেষ করে ইউরোপের জন্য 'নতুন নিরাপত্তা' নীতি নিয়ে রাশিয়ার সঙ্গে ফ্রান্সের আলোচনা, ভালো চোখে দেখেনি অতীতে সেভিয়েতভুক্ত পূর্ব ইউরোপের দেশগুলো।

শুধু তাই না। সোমবারের রাশিয়া সফরের আগেও ফরাসি প্রেসিডেন্টকে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে। বিশেষ করে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন এবং মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন তাঁর কড়া সমালোচনা করেছেন। এই পরিস্থিতিতে ম্যাক্রোঁ তাঁর রাশিয়া এবং ইউক্রেন সফরে কতটা জাদু দেখাতে পারেন, এখন সেদিকেই তাকিয়ে ইউরোপের দেশগুলো এবং তাঁর নিজের রাজনৈতিক ভাগ্যও।

Read story in English

france russia Emmanuel Macron
Advertisment