Advertisment

হাজার হাজার টন কোভিড বর্জ্য পৃথিবীর বুকে ডেকে আনতে পারে ভয়ানক বিপদ : WHO

এমনিতেই এশিয়ার দেশগুলি বর্জ্য পদার্থ নিয়ন্ত্রণে হিমসিম খাচ্ছে। তার উপর কোভিড বর্জ্য সেই সমস্যা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

কোভিড বর্জ্যে জর্জরিত বিশ্ব

গবেষণায় উঠে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য! কোভিড-১৯ (Covid 19) এখনও পর্যন্ত পৃথিবীতে মোট আট কোটি টন প্ল্যাস্টিক বর্জ্য ছড়িয়েছে। যার মধ্যে ২৫ হাজার টন প্ল্যাস্টিক বর্জ্য ইতিমধ্যেই সমুদ্রগর্ভে প্রবেশ করেছে। যা পরিবেশ এবং সেই সঙ্গে স্বাস্থ্য ব্যবস্থাকেও হুমকির মুখে ফেলবে। জেনেভায় সাংবাদিকদের সঙ্গে এক আলোচনায় বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার প্রধান, টেড্রোস আধানম ঘেব্রেয়েসাস বলেছেন, আগামী তিন থেকে চার বছরের মধ্যে এই বিপুল পরিমাণ কোভিড প্ল্যাস্টিক বর্জ্য আর্কটিক সাগরে বর্জ্যের ঢিপি তৈরি করে ফেলবে। যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক বলেই মনে করছেন গবেষকরা। আর এই বর্জ্যের কারণ মূলত মাস্ক, গ্লাভস, ফেস শিল্ড। এর ফলে পৃথিবী আগামী দিনে সংকটের সম্মুখীন হবে”।  এই ব্যাপারে সাধারন মানুষের উদাসীনতাকেই দায়ী করেছেন তিনি। তিনি বলেন, কোভিড বর্জ্য ফেলার ব্যাপারে জনসাধারণকে আরও বেশি সতর্কতা মেনে চলা দরকার।

Advertisment

ইতিমধ্যেই বিশ্বজুড়ে প্ল্যাস্টিক বর্জ্য জলবায়ু পরিবর্তনের একটি বড় দুশ্চিন্তার কারণ। তার মধ্যে কোভিড পরবর্তী সময়ে প্ল্যাস্টিকের ব্যবহার ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ায়, পৃথিবীতে প্ল্যাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা ক্রমশ চিন্তার ভাঁজ ফেলছে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে। চিনের নানজিং বিশ্ববিদ্যালয় এবং সান দিয়াগোর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা সমুদ্রগর্ভে জমতে থাকা প্ল্যাস্টিক বর্জ্য চিহ্নিতকরণে একটি নতুন পদ্ধতির ব্যবহার শুরু করেছেন। এই বর্জ্যের ঠিক কতটা প্রভাব পড়ছে তা জানার জন্য এই ব্যবস্থা বলে জানিয়েছেন তাঁরা। ২০২০ সালে মহামারী পর্ব শুরু থেকে ২০২১ সালের অগাস্ট মাস পর্যন্ত এই বর্জ্যের পরিমাণ যাচাই করতে গিয়ে দেখা গিয়েছে, বেশিরভাগ বর্জ্য তৈরি হয়েছে এশিয়া মহাদেশ থেকেই।

গবেষকদের অনুমান, মূলত হাসপাতাল থেকেই এই বর্জ্য উৎপাদিত হচ্ছে। গবেষকরা দেখেছেন মার্চ ২০২০ থেকে নভেম্বর ২০২১ সালের মধ্যে প্রায় ৮৭ হাজার টন কোভিড বর্জ্য তৈরি হয়েছে সেই সঙ্গে ১৪০ মিলিয়ন টেস্ট কিট বর্জ্য হিসাবে পাওয়া গেছে। সব মিলিয়ে বিশ্বব্যাপী প্রায় ১৪৪ হাজার টন কোভিড বর্জ্য আগামীদিনে পৃথিবীকে মারাত্মক ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। WHO-এর স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ কমিটির প্রধান ডাঃ মাইকেল রায়ানের কথায়, ‘এই ধরণের কোভিড বর্জ্য সেলার আগে আমাদের আরও বেশি সতর্ক থাকা উচিত ছিল। এটা আমাদের স্বাস্থ্য এবং পরিবেশের জন্য এক ভয়ানক বিপদ ডেকে আনতে পারে’।

সান দিয়াগোর ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপক গবেষকের কথায়, 'বর্জ্য পরিমাপ করতে গিয়ে এর মোট পরিমাণ দেখে আমরা চমকে উঠেছিলাম। এই বর্জ্যের বেশিরভাগ এসেছে এশিয়ার নানা দেশ থেকে। যদিও এশিয়ার সমস্ত দেশে কোভিডের বাড়বাড়ন্ত ছিল না। বরং ইউরোপ তার থেকে বেশি ভুগেছে।' তাঁর আরও সংযোজন, 'বেশিরভাগ বর্জ্য উৎপাদিত হয়েছে হাসপাতাল এলাকা থেকে। এমনিতেই এশিয়ার দেশগুলি বর্জ্য পদার্থ নিয়ন্ত্রণে হিমসিম খাচ্ছে। তার উপর কোভিড বর্জ্য সেই সমস্যা আরও বাড়িয়ে তুলেছে।'

প্ল্যাস্টিক মডেল নিয়ে কর্মরত চিনা বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ইয়াংসু ঝাং বলেন, 'এই মডেলের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পেরেছি কী ভাবে হাওয়ার মাধ্যমে বর্জ্যগুলি সমুদ্রের জলে গিয়ে পড়ছে। তারপর কী ভাবে সেগুলি সমুদ্রের জলে ভাসতে ভাসতে সূর্যের আলোতে শুকিয়ে যাচ্ছে এবং পরবর্তীতে সমুদ্রের জলে বর্জ্যের ঢিপি তৈরি করছে। নদী থেকে এই বর্জ্যগুলি সমুদ্রে বেশি আসছে।' জানা গিয়েছে, এশিয়ার দেশগুলিতে থেকে সমুদ্রে মিশেছে ৭৩ শতাংশ বর্জ্য। ইউরোপের দেশগুলিতে থেকে মিশেছে ১১ শতাংশ। ডাব্লুএইচও-র পরিবেশ, জলবায়ু পরিবর্তন এবং স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রধান মারিয়া নেইরা বলেছেন, যেভাবে কোভিড বর্জ্য উৎপন্ন হয়েছে তার প্রভাব আগামীদিনে পৃথিবীতে পড়তে বাধ্য’।

দ্রুত আবহাওয়ার পরিবর্তনের জেরে এমনিতেই আর্কটিক অঞ্চলে জলবায়ু পরিবর্তিত হয়েছে। তার উপর সমুদ্রপৃষ্ঠে মিশে যাওয়া বর্জ্যের জেরে ইকোসিস্টেম সম্পূর্ণরূপে বদলে যেতে পারে মত বিশেষজ্ঞদের। WHO জানিয়েছে, কোভিড ১৯ এর প্রাদুর্ভাবের প্রায় দুবছর পরেও পৃথিবীতে ৩ কোটির বেশি কোভিড আক্রান্তের সন্ধান মিলেছে মৃত্যু হয়েছে ৫.৬ লক্ষের বেশি।

WHO COVID-19 Healthcare waste
Advertisment