তালিবান আগ্রাসনে জর্জরিত আফগানিস্তান! আফগান যোদ্ধা থেকে সাধারণ নাগরিক, দূর্বিসহ পরিস্থিতির শিকার সকলেই! বোমাবর্ষণ, রক্তাক্ত পরিবেশ সঙ্গে আতঙ্ক জীবনযাত্রার ভোল পাল্টে দিয়েছে কয়েক দিনেই। সম্ভবত, ১ আগস্টের মধ্যে মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেনের আফগানিস্তান থেকে সেনা প্রত্যাহারের নির্দেশের ফলস্বরূপ তালিবান বাড়বাড়ন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে বলে আশঙ্কা।
তবে, আন্তর্জাতিক স্তরে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভারতের সঙ্গে কৌশলগত অংশীদারিত্ব কোনওভাবেই মেনে নিতে পারছেন না পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। মার্কিন প্রেসিডেন্টের উদ্দেশে কটাক্ষ করে তিনি বলেন, আমেরিকার নজরে পাকিস্তান কেবলমাত্র আফগানিস্তানের দরকারে কাজে লাগতে পারে। ২০ বছর যুদ্ধের পর আফগানিস্তানে যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়েছে তা সমাধানের দায়িত্বই যেন পাকিস্তানের।
শুধু এখানেই থামেননি তিনি! কৌশলগত অংশীদারিত্বের সিদ্ধান্ত ভারতের সঙ্গে নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তিনি। ইসলামাবাদের বাড়িতে তিনি সাংবাদিকদের জানান, ভারতের সঙ্গে বৈঠকের পর থেকেই ওয়াশিংটন পাকিস্তানের সঙ্গে অন্যরকম আচরণ করছে। এমনকি এই বছরের প্রথম দিকেই বাডেন মার্কিন রাষ্ট্রপতির পদ অধিগ্রহণের পরেও কোনওরকম সৌজন্যমূলক বার্তালাপ তাঁর সঙ্গে হয়নি বলেই জানিয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী।
পাকিস্তানের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা মঈদ ইউসুফ সম্প্রতি আফগানিস্তানের মতো কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ইসলামাবাদকে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হিসেবে বিবেচনা করার পরেও প্রেসিডেন্ট বাইডেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে আলোচনায় অনীহা প্রকাশ করায় যথেষ্ট হতাশ হয়েছেন। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এভাবেই যদি দেশের নেতৃত্বকে অবহেলা করতে থাকে তবে ইসলামাবাদের অন্য বিকল্প আছে বলে জানিয়ে দেন উপদেষ্টা।
যদিও বা মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর অবশ্য ইসলামাবাদকে আশ্বস্ত করেছিল, ওয়াশিংটন আফগানিস্তানে শান্তি ফিরিয়ে আনার ক্ষেত্রে পাকিস্তানের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা স্বীকার করে এবং তারা চায় ইসলামাবাদ সেই ভূমিকা পালন করুক। জানা গেছে, মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব লয়েড অস্টিন এই সপ্তাহে পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল কামার জাভেদ বাজওয়ার সঙ্গে ফোনে কথা বলেছেন এবং আফগানিস্তানের বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন।
সূত্র অনুযায়ী, আফগান-পাকিস্তান সীমান্তে তালিবান জঙ্গিদের নিরাপদ আস্তানা বন্ধ করার প্রয়োজনীয়তা নিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পাকিস্তানি নেতৃত্বের সঙ্গে কথোপকথন এর ফলস্বরূপ আফগানিস্তানের ভিতরে আরও নিরাপত্তাহীনতা ও অস্থিতিশীলতার উৎস তৈরি করছে। উল্লেখ্য, এর আগে আফগানিস্তান এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তরফ থেকে পাক সরকারের প্রতি তালিবানদের প্রবেশের অনুমতি, তাদের নিরাপদ আশ্রয় এমনকি চিকিৎসা প্রদানের অভিযোগের উপর কটাক্ষ করা হয়েছিল।
আরও পড়ুন তালিবান গ্রাসে আফগানিস্তান, প্রাক্তন প্রেসিডেন্টের ছেলেকে অপহরণ জঙ্গিদের
বিদেশি সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠকে পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জানান, আফগান সমস্যার রাজনৈতিক সমাধান করা কঠিন কারণ কাবুল সরকারে যতদিন আশরাফ গনি রাষ্ট্রপতি হিসেবে থাকবেন, ততদিন তালিবানরা কোনও সমঝোতায় আসতে রাজি নয়। খান আফগানিস্তান থেকে মার্কিন সৈন্যদের তাড়াতাড়ি প্রত্যাহারের ব্যাপারে কঠোর অবস্থান জারি করেছেন, যা দেশকে বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির মধ্যে ফেলে দিয়েছে। তিনি এও পুনরাবৃত্তি করেছিলেন যে, পাকিস্তান মার্কিন বাহিনীকে ঘাঁটির কোনও সুযোগ দেবে না। যদিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আনুষ্ঠানিকভাবে সুবিধাটি চেয়েছিল কিনা তা স্পষ্ট নয়। পাকিস্তান সরকার সূত্রে জানা গেছে, সঙ্কটের রাজনৈতিক সমাধান খুঁজতে যুক্তরাষ্ট্র ও আফগান সরকারের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে বিদ্রোহীদের চাপ দিতেই তালিবানদের প্রভাবকে কাজে লাগানো হয়েছে।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন