হাজারো চেষ্টা করেছিলেন কুর্সি বাঁচাতে। কিন্তু, কিছুতেই কিছু হল না। পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তেই হল ইমরান খানকে। মুখোমুখি হতে হল ভোটাভুটিতে। সেখানেও হারতে হল। তবে, ইমরানের এই অপসারণ সহজে হয়নি। অপসারণ ঘিরে থাকল চূড়ান্ত নাটকীয়তা। যা চলল শনিবার দিনভর, পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের অধিবেশন চার দফা মুলতুবি হওয়ার মধ্যে দিয়ে।
মধ্যরাতে সেই নাটকের যবনিকা পতনের আগে ইমরান খান, স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকারের গ্রেফতারের দাবি উঠল। সরকার সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মানছে না-বলে আদালতে নালিশ জানাল পাকিস্তান বার অ্যাসোসিয়েশন। মধ্যরাতে আদালতে গেলেন পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি। পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের বাইরে মোতায়েন করা হল পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর জওয়ানদের। মধ্যরাতে খুলল পাকিস্তান নির্বাচন কমিশনের দফতর।
নেতা-মন্ত্রী-আমলারা যাতে দেশ ছেড়ে পালাতে না-পারেন, সেজন্য হাই অ্যালার্ট জারি করা হল পাকিস্তানের সব বিমানবন্দরে। সমস্ত হাসপাতালে জারি করা হল জরুরি অবস্থা। পদত্যাগ করলেন পাকিস্তান জাতীয় সংসদের স্পিকার আসাদ কাইজার, ডেপুটি স্পিকার কাসিম সুরি। ইমরানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফ এর সদস্যরা জাতীয় সংসদ ভবন ত্যাগ করলেন। প্রধানমন্ত্রীর আবাসন ছাড়লেন ইমরান। ভোটাভুটি পরিচালনা করলেন নওয়াজ শরিফের পাকিস্তান মুসলিম লিগ দলের আইয়াজ সাদিক। জাতীয় পরিষদের ৩৪২ জন সদস্যের মধ্যে ১৭৪ জন বিরোধী সদস্য অনাস্থা প্রকাশ করে ভোট দিলেন। পাকিস্তানের ইতিহাসে এই প্রথমবার একজন প্রধানমন্ত্রীকে অনাস্থা ভোটে পরাজিত হয়ে ক্ষমতা ছাড়তে হল।
আর তারপরই, বিরোধী নেতা শাহবাজ শরিফ টুইটে বললেন, 'অবশেষে গভীর সংকট থেকে মুক্তি পেল পাকিস্তান। পাকিস্তানের নতুন প্রভাতের লগ্নকে অভিনন্দন।' বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারি বললেন, 'পুরনো পাকিস্তানে স্বাগত। আমি পাকিস্তানের সবাইকে অভিনন্দন জানাতে চাই। পাকিস্তানের যুবকদের আমি এই বার্তা দিতে চাই, কখনও স্বপ্ন দেখা ছেড়ে দেবে না। কোনও কিছুই অসম্ভব নয়।' তাঁরা এসব বলতেই পারেন। কারণ, জিতে গিয়েছেন। কিন্তু, যিনি হেরে গিয়েছেন, সেই ইমরান আর তাঁর দলের কাছেও কি পাকিস্তান নতুন সূর্য আনছে?
বোধহয় না। সোমবার ফের বসবে পাকিস্তানের জাতীয় সংসদ। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার দৌড়ে এগিয়ে মুসলিম লিগ নওয়াজ দলের নেতা শাহবাজ শরিফ। রবিবারই দুপুরে তাঁর নাম আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা হওয়ার কথা। তিনি অবশ্য বদলার রাজনীতিতে বিশ্বাসী নন বলে জানিয়েছেন। তবুও ইতিমধ্যে পাকিস্তান তেহরিক-ই-ইনসাফের দলীয় মুখপাত্র আরসালান খালিদের বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়েছে। পিটিআই নেতার পরিবারের সকলের মোবাইল ফোনও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
বিরোধীদের অভিযোগ, ইমরান সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। জোর করে ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করছিলেন। তাই আগামী দিনে ইমরান ও তাঁর দলের লোকজন ঠিক কতটা স্বস্তিতে থাকবেন, তা বলা কঠিন। কারণ, ২০২৩-এ পাকিস্তানে নির্বাচন। মার্কিন ষড়যন্ত্রে তাঁর অপসারণের যে গল্প ইমরান ছড়িয়েছেন, তা ইতিমধ্যে গিলে ফেলেছেন পাকিস্তানের বহু মানুষই। সেই বাড়তি জনসমর্থনের জন্যই কি নতুন শাসকদের রোষানলে পড়তে হবে ইমরান ও তাঁর দলের লোকজনকে? যার উত্তর দিতে পারে একমাত্র সময়।
Read story in English