কোনওভাবেই আর প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারলেন না পাকিস্তানের ইমরান খান। প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি গুলজার আহমেদকে তিনি তদারকি সরকারের প্রধানমন্ত্রী মনোনীত করলেন। যার মাধ্যমে আপাতত হলেও অবসান ঘটল পাকিস্তানের রাজনৈতিক অচলাবস্থার। এর আগে ইমরান জানিয়েছিলেন তিনি আর বড়জোর ১৫ দিন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী থাকবেন। কিন্তু, তদারকি সরকারের প্রধানমন্ত্রী কে থাকবেন, সেনিয়ে উচ্চবাচ্য করেননি। বিভিন্ন মহল তখনই আশঙ্কা প্রকাশ করেছিল, নির্বাচন পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীর কুর্সি দখলে রাখতেই ইমরান ফন্দি এঁটেছেন। তিনি নিজেই তদারকি সরকারের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করতে চান।
কিন্তু, সোমবার সকালেই ইমরান বুঝে যান, ব্যাপারটা অত সহজ না। কারণ পাকিস্তানের বিরোধী নেতারা তাঁকে সহজে ছেড়ে দেবেন না। তদারকি সরকারের প্রধান হিসেবে ইমরান নিজের মতো করে ভোট পরিচালনা করবেন, এটা বিরোধীরা হতে দিতে চান না। সোমবার সকালেই সাংবাদিক বৈঠক করেন পাকিস্তানের অন্যতম বিরোধী দলনেতা শাহবাজ শরিফ। তিনি সাংবাদিক বৈঠকে ইমরানের তীব্র সমালোচনা করেন।
ইমরান এর আগের সাংবাদিক বৈঠকে সব বিরোধীদের কার্যত ' দেশদ্রোহী' তকমা দিয়েছেন। তারই পালটা শাহবাজ জানান, ইমরানের বিরুদ্ধে তাঁদের বলার মতো অনেক কিছুই আছে। কিন্তু, তাঁরা ভদ্রতার খাতিরে এবং পাকিস্তানের সম্মানের কথা ভেবেই মুখ খুলছেন না। তাঁরা ইমরানকে ' দেশদ্রোহী' বলতেই পারতেন। কিন্তু, ইমরান খান এখনও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। তাই পাকিস্তানের সম্মানের কথা ভেবে মুখ খোলেননি। কিন্তু, ভোটপ্রচারে ইমরানকে তাঁরা ছেড়ে কথা বলবেন না। পাকিস্তানের প্রতিটি অলিগলিতে ইমরানের বিশ্বাসঘাতকতা নিয়ে মুখ খুলবেন। ইমরান কীভাবে চিনের ভরসায় নিজের গদি এতদিন টিকিয়ে রেখেছিলেন, তা ফাঁস করে দেবেন। শুধু তাই নয়, পাকিস্তানের সংবিধান ভেঙে ইমরান যেভাবে সরকারের কর্তৃত্ব হাতে রাখার চেষ্টা করছেন, তার বিরুদ্ধে আদালতেও যাবেন।
শুধু এতেই থেমে থাকেননি শাহবাজ। তিনি তদারকি সরকারের প্রধানমন্ত্রী কে হবেন, তা নিয়ে বিভিন্ন মহলের কাছে পরামর্শ চান। নিয়মমাফিক চিঠি দেন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টকেও। এরপরই পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভি চিঠি দেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে। তারপরই দেখা গেল নাটকীয় পটপরিবর্তন। পাকিস্তানের শাসক দল তেহরিক-ই-ইনসাফের প্রবীণ নেতা তথা প্রাক্তন তথ্যমন্ত্রী ফাওয়াদ চৌধুরি জানিয়ে দেন, দলের কোর কমিটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। ইমরান খান প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে পদত্যাগ করবেন।
প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভিকেও চিঠি দিয়ে তাঁর পদত্যাগের কথা জানিয়ে দেন ইমরান। একইসঙ্গে প্রাক্তন প্রধান বিচারপতি গুলজার আহমেদকে তদারকি সরকারের প্রধানমন্ত্রী মনোনীত করার কথাও তিনি চিঠিতে জানান। প্রাক্তন বিচারপতি গুলজারের সঙ্গে ইমরানের সম্পর্ক বেশ ভালো। গুলজার পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের ২৭তম প্রধান বিচারপতি নিযুক্ত হওয়ার অনুষ্ঠানে প্রথামতো প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ইমরান খান সেখানে উপস্থিত ছিলেন।
Read story in English