বিদেশে লুকিয়ে রয়েছেন আফগানিস্তানের নির্বাচন কমিশনের প্রথম মহিলা প্রধান হাওয়া আলম নুরিস্তানি৷ ইচ্ছা থাকলেও দেশে ফিরতে পারছেন না তিনি৷ পরিবারের সদস্যরা তাঁকে দেশে ফিরতে বারণ করেছেন৷ বিদেশে থেকেও আফগানিস্তানের জন্য মন কাঁদছে পঞ্চাশোর্ধ্ব এই মহিলার৷ দেশের পরিস্থিতি নিয়ে ফোনে কথা বলতে গিয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত দেখাচ্ছিল আফগানিস্তানের এই নির্বাচন কমিশনারকে৷ গোপন আস্তানা থেকে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে বললেন, ‘‘গত ২০ বছর ধরে যে উন্নয়ন হয়েছিল তার সব শেষ হয়ে গেল৷’’
চলতি মাসের ৮ তারিখে কাবুল থেকে একটি বৈঠকে যোগ দিতে বেরাটে পৌঁছোন আফগানিস্তানের নির্বাচন কমিশনার হাওয়া আলম নুরিস্তানি৷ সপ্তাহখানেক সেখানে থাকার পর দেশে ফেরার বিমান ধরবেন বলে নুরিস্তানি ও তাঁর সহকর্মীরা দুবাই বিমানবন্দরে গিয়ে পৌঁছোন৷ বিমানবন্দরে থাকাকালীন কাবুল থেকে পরিবারের লোকজন ফোন করেন নুরিস্তানিকে৷ ততক্ষণে গোটা কাবুল দখল করে নিয়েছে তালিবানিরা৷ হাওয়া আলম দেশে ফিরলে তালিবানিরা তাঁর উপরেও হামলা চালাতে পারে বলে ফোনে তাঁকে জানান বাড়ির লোকজন৷ পরিবারের সদস্যদের সেই আশঙ্কার কথা শুনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন ওই মহিলা৷ আপাতত দেশে ফেরার সিদ্ধান্ত বদল করে বর্তমানে অন্য একটি দেশে গিয়ে আশ্রয় নিয়েছেন তিনি৷
বিদেশে আটকে থাকা নুরিস্তানি আফগানিস্তানের স্বাধীন নির্বাচন কমিশনের প্রথম মহিলা প্রধান৷ তিনিই ২০১৯ সালে আশরফ গণির বিজয়-পত্রে সই করেছিলেন৷ ভারতে জাতীয় নির্বাচন কমিশনে তিনজন কমিশনার থাকলেও আফগানিস্তানের ক্ষেত্রে এই পদে থাকেন আটজন৷ নুরিস্তানি এবছরেই আফগানিস্তান নির্বাচন কমিশনের চেয়ারপার্সন পদে তাঁর মেয়াদ শেষ করেছেন৷ তার বদলে এখন দায়িত্বে রয়েছেন ঔরঙ্গজেব৷ বর্তমানে তিনিও নুরিস্তানির সঙ্গেই তালিবানের ভয়ে বিদেশে আটকে রয়েছেন৷
আরও পড়ুন- প্রবল বর্ষণের সতর্কতা উত্তরবঙ্গে, বৃষ্টির সম্ভাবনা কলকাতাতেও
বর্তমানে তালিবানিদের ভয়ে হাওয়া আলম নুরিস্তানি-সহ আফগান প্রশাসনের বেশ কয়েকজন কর্তা বিদেশে একটি ভাড়াবাড়িতে থাকছেন৷ তাঁদের ঠিকানা জনসমক্ষে যাতে না আসে সেব্যাপারে দ্য ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে অনুরোধ জানিয়েছিলেন নুরিস্তানি৷ সংস্থার তরফেও তাঁর সেই অনুরোধকে মর্যাদা দিয়ে তাঁদের ঠিকানা প্রকাশ্যে আনা হচ্ছে না৷ ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসকে ফোনে নুরিস্তানি বলেন, ‘‘যখন শুনলাম তালিবানিরা কাবুল শহর দখল করে নিয়েছে, তখন আমার মনের অবস্থা যে ঠিক কী ছিল, তা বলে বোঝাতে পারব না৷ এই পরিস্থিতির জন্য আমরা তৈরি ছিলাম না৷ দেশের পরবর্তী নির্বাচন নিয়ে আলোচনার জন্য আমরা লেবাননে ছিলাম। গণতন্ত্রকে একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে আমরা পরিকল্পনা করছিলাম৷’’
দুবাই বিমানবন্দরে গিয়ে পরিবারের সদস্যদের ফোন পান নুরিস্তানি৷ কাবুলের পরিস্থিতি জেনে আঁতকে উঠেছিলেন৷ দেশে ফিরতে পারবেন না ভেবেই উদভ্রান্ত হয়ে পড়েন প্রত্যেকে৷ এপ্রসঙ্গে নুরিস্তানি বলেন, ‘‘অনিশ্চিত একটি ভবিষ্যতের দিকে তাকিয়ে ছিলাম। এখান থেকে আমাদের কোথায় যাওয়া উচিত তা আমরা জানতাম না। আমরা কোথায় যাব এবং কোথায় থাকব? এটা হঠাৎ করেই ঘটেছিল৷’’
Read full story in English
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন