সীমান্তে দুই দেশের তীব্র শত্রুতা। তবে, তার আঁচ পড়ল না রাষ্ট্রসংঘে। বরং, আঞ্চলিক অখণ্ডতা নিয়ে একই সুর বিশ্ব রাজনীতিতে ভারত এবং চিনকে বসাল পাশাপাশি আসনে। দুই দেশই একই ধাঁচে আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষার আহ্বান জানাল। পাশাপাশি, রাষ্ট্রসংঘের সনদের কথাও উল্লেখ করল বক্তব্যে।
একইসঙ্গে নিরাপত্তার স্বার্থের কথা উল্লেখ করে দুই দেশই নিন্দাপ্রস্তাবে ভোটদানে বিরত থেকে কার্যত সামান্য হলেও ঝোল টানল রাশিয়ার পক্ষে। বর্তমান কূটনৈতিক অবস্থান এবং দেশের স্বার্থ রক্ষা করতে কেনিয়া এবং গ্যাবনের কায়দায় যতটা সম্ভব নিরপেক্ষ অবস্থান তুলে ধরার চেষ্টা চালাল।
ইউক্রেন যখন ক্রমশ বারুদের গন্ধে ভরছে, সেই সময় দ্বিমেরু বিশ্বে নিরপেক্ষ অবস্থান ফের তুলে ধরাই ভারতের কাছে চ্যালেঞ্জ হয়ে উঠেছে। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি এবং সেদেশের বর্তমান সরকারের বারে বারে সমর্থনের আবদার। এই অবস্থায় আন্তর্জাতিক মঞ্চে নিরপেক্ষতা বা মার্কিন ও রাশিয়ান ব্লকের প্রতি কীভাবে সাম্যতা রক্ষা সম্ভব, সেটাই বড় চিন্তার বিষয় হয়ে উঠেছে ভারতের কাছে। অবস্থান ঠিক করতে বারবার নয়াদিল্লিতে বৈঠক করেছেন দেশের নিরাপত্তা বিভাগের শীর্ষ আধিকারিকরা।
একই সমস্যায় যে চিনও, তা স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে তাদের আচরণে। রাষ্ট্রসংঘে চিনের স্থায়ী প্রতিনিধি ঝাং জুন সেকথা মাথায় রেখেই সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষার ওপর জোর দিয়েছেন। তিনি জানিয়েছেন, সব দেশেরই পরস্পরের আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্বকে সম্মান করা উচিত। রাষ্ট্রসংঘের সনদের নীতি এবং বিষয়কে সম্মান করা উচিত। এক দেশের নিরাপত্তা বিঘ্নিত করে কখনও অন্য দেশের নিরাপত্তা আসতে পারে না। ইউক্রেনকে পূর্ব এবং পশ্চিমের সেতু হিসেবে ব্যবহার করা উচিত।
রাষ্ট্রসংঘে ভারতের প্রতিনিধি টিএস তিরুমূর্তি বলেন, 'রাষ্ট্রসংঘের সনদের ভিত্তিতে সমসাময়িক বিশ্ব চলছে। তার ভিত্তিতেই তৈরি হয়েছে আন্তর্জাতিক আইন, সার্বভৌমত্ব এবং দেশগুলোর আঞ্চলিক অখণ্ডতা। সব সদস্য দেশেরই গঠনমূলক পথ খুঁজতে রাষ্ট্রসংঘের নীতির প্রতি সম্মান করা উচিত।' মজার কথা হল, চিন এবং ভারত, দুই দেশই যখন রাষ্ট্রসংঘে আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্বের হয়ে গলা ফাটাচ্ছে, সেই সময় কিন্তু, প্রতিবেশী হিসেবে তাদের সম্পর্ক তলানিতে ঠেকেছে।
'লাইন অফ অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল' বা প্রকৃত নিয়ন্ত্রণরেখায় চিনের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বারবার সরব হয়েছে ভারত। ২০২০ সালের মে থেকে বেজিংয়ের বিরুদ্ধে নয়াদিল্লির আঞ্চলিক অখণ্ডতা এবং সার্বভৌমত্বে আঘাতের অভিযোগ অনেকটাই বেড়েছে। সেই পরিস্থিতি থেকে ইউক্রেনই যেন দুই দেশকে হাত ধরে টেনে এনে বসাল পাশাপাশি অবস্থানগত আসনে।
Read story in English