Advertisment

যমে-মানুষে লড়াইয়ের ইতি, টানা ৬ মাস চিকিৎসার পর সুস্থ হলেন করোনা আক্রান্ত যুবক

এ যেন এক মিরাকেল.......বলছেন দায়িত্বে থাকা চিকিৎসকরা

author-image
IE Bangla Web Desk
New Update
NULL

টানা ৬ মাস চিকিৎসার পর সুস্থ হলেন করোনা আক্রান্ত যুবক

এ যেন চিত্রনাট্যকেও হার মানাবে। টানা ৬ মাস করোনার বিরুদ্ধে একটানা লড়াই চালিয়ে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন, বছর ৩৮ এর অরুণকুমার এম নায়ার। কেরালার বাসিন্দা নায়ার পেশায় একজন ওটি টেকনিশিয়ান। কাজ করতেই আবুধাবির একটি হাসপাতালে আসা। তার স্ত্রী নিজেও একজন স্বাস্থ্যকর্মী। করোনাকালে প্রথম সারির যোদ্ধা হিসাবে বহু মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছেন তিনি। হটাত করেই একদিন ডিউটি সেরে বাড়ি ফেরেন। ধুম জ্বর। বাড়িতে স্ত্রী আর ছোট্ট সন্তান ছাড়া কেউ নেই। করা হয় করোনা পরীক্ষা, রিপোর্ট পজিটিভ। প্রথমে আইসোলেশনে ছিলেন তিনি।

Advertisment

তারপর ধীরে ধীরে অবস্থার অবনতি হয়। ভর্তি করতে হয় হাসপাতালে। সেই থেকে টানা ৬ মাস যমে-মানুষে হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পর আজ অবশেষে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেন তিনি। এ যেন এক অলৌকিক কাহিনী। করোনায় ফুসফুসকে গুরুতরভাবে ক্ষতিগ্রস্ত করে টানা ৬ মাস তিনি কোমায় ছিলেন। তাকে ইকমো সাপোর্টে রাখা হয়। "সেই দিনগুলো কীভাবে যে লড়াই করতে হয়েছে তা বলে বোঝানো যাবে না, একা আমি আর আমার ছোট্ট সন্তান"….. জানালেন স্ত্রী।

করোনার চিকিৎসা চলাকালীন সময়ে কার্ডিয়াক অ্যারেস্ট সহ একাধিক জটিলতা দেখা দেয় তার শরীরে, প্রাণ বাঁচাতে ট্র্যাকিওস্টমি এবং ব্রঙ্কোস্কোপির মত বেশ কয়েকটি পদ্ধতির আশ্রয় নিতে হয় চিকিৎসকদের। তাও হাল ছাড়েননি চিকিৎসকরা। মাস খানেক আগে তার হাসপাতালের জেনারেল ওয়ার্ডে স্থানান্তরিত করা হয়। তার আগের ৫ মাস আইসিইউতে মৃত্যুর সঙ্গে লড়াই চালিয়েছেন।

হাসপাতালের তরফে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘এ এক অলৌকিক ঘটনা’…. এদিকে দীর্ঘ চিকিৎসার ব্যয়ভার সামলাতে নাজেহাল অবস্থা স্ত্রী’র। মিলেছে একাধিক সাহায্য। জাতির প্রতি তার সেবা এবং তার লড়াইকে কুর্নিশ জানিয়ে ভিপিএস হেলথকেয়ার, একটি বহুজাতিক স্বাস্থ্য পরিষেবা সংস্থা তাকে ৫০ লক্ষ টাকা(ভারতীয় মুদ্রায়)আর্থিক সাহায্য করেন। সেই সঙ্গে স্ত্রীকে একটি চাকরী দেওয়ারও কথাও জানানো হয়েছে। সন্তানের লেখাপড়ার ব্যয়ভার বহনের কথাও জানিয়েছে তারা। বৃহস্পতিবার আবুধাবির বুর্জিল হাসপাতালে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানে সংযুক্ত আরব আমীরশাহীতে তার সহকর্মীরা তাঁর হাতে  আর্থিক সাহায্য তুলে দেন।

এতদিন পর নতুন করে জীবন ফিরে পেয়ে কী বলছেন, অরুণকুমার, তিনি জানিয়েছেন "আমার কিছু মনে নেই! আমি জানি আমি সবেমাত্র মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি,”। "আমার পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং অন্যান্য শত শত মানুষের প্রার্থনার শক্তি যে আমি আজ বেঁচে আছি,"

আদতে কেরলের বাসিন্দা অরুণকুমার আবুধাবির এলএলএইচ হাসপাতালে কোভিড-১৯ টাস্ক ফোর্সের অংশ হিসেবে কাজ করার সময় নায়ার ২০২১ সালের জুলাইয়ের মাঝামাঝি সময়ে কোভিড-১৯-এ আক্রান্ত হন। বিবৃতিতে বলা হয়েছে, তিনি ২০১৩ সাল থেকে হাসপাতালে একজন ওটি টেকনিশিয়ান হিসেবে কাজ করছেন।

স্ত্রী জেনি জর্জ জানিয়েছেন, “খবরটি পেয়ে প্রথমে খুব ভেঙ্গে পড়েছিলাম, পরে নিজেকে শক্ত করে লড়াইয়ে সামিল হই। খবরটি অরুণের বাবা-মা এবং আমার জন্য একটি বড় ধাক্কা ছিল” আমরা তার সুস্বাস্থ্য এবং দ্রুত সুস্থতার জন্য প্রার্থনা করেছিলাম,”

বুর্জিল হাসপাতালের কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগের প্রধান ডাঃ তারিগ আলী মোহাম্মদ এলহাসান, যিনি শুরু থেকে নায়ারের চিকিৎসা করেছেন, বলেছেন প্রথম দিন থেকেই তার অবস্থা সংকটজনক ছিল।তাকে বাঁচানো মুশকিল হয়ে গিয়েছিল, আমরা হাল ছাড়িনি। “তার ফুসফুস কাজ করা প্রায় বন্ধ করে দিয়েছিল।কৃত্রিম ভাবে তার শ্বাস-প্রশ্বাস চালু রাখা হয়েছিল। এবং এটি প্রায় ১১৮ দিন ধরে চলতে থাকে। তাঁকে বাঁচানো অসম্ভব ছিল। এই কারণেই অরুণের বেঁচে ফিরে আসা আমাদের সকলের কাছে একটি অলৌকিক ঘটনা”। এদিকে লড়াই শেষে অরুণ জানান, বাবা, মার সঙ্গে একবার দেখা করতে চান তিনি, সেই সঙ্গে তিনি জানান, আগামী মাস থেকেই আবার কাজে ফিরতে চান”। অরুণের অদম্য ইচ্ছাশক্তিকে কুর্নিশ জানিয়েছেন লাখ মানুষ। 

Advertisment