আজ আর কয়েক ঘন্টার মধ্যেই পাক ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে আস্থা ভোট হবে। তার আগেই অবশ্য দেওালের লিখন স্পষ্ট। অলৌকিক কিছু না ঘটলে প্রধানমন্ত্রীর কুর্সি ছাড়তে হবে ইমরান খানকে। মুখে শেষ দেখেছাড়ার কথা বললেও যা কার্যত মেনেও নিয়েছেন তিনি। শুক্রবার রাতে জাতীর উদ্দেশে ভাষণে প্রধানমন্ত্রীর কথাতেই তা স্পষ্ট। তবে, পদ খোয়ানোর আগে বিদেশি শক্তির ষড়যন্ত্রের তত্ত্ব আওড়ে দেশবাসীর মধ্যে জাতীয়তাবোধ চাগিয়ে তোলার কসুর করলেন না ইমরান খান। আর সেই কাজ করতে গিয়ে ভারতের উদাহরণ টানলেন তিনি। রীতিমতো প্রশংসার সুরে বললেন, 'ভারত আত্মমর্যাদাবোধ সম্পন্ন রাষ্ট্র। ওদের থেকে শেখা উচিত। সার্বভৌম রাষ্ট্র হওয়ায় ওদের উপর কোনও বিশ্ব-শক্তি ছড়ি ঘোরাতে পারে না।'
ইউক্রেনের উপর রাশিয়ার আগ্রাসনের শুরুতেই মস্কোয় গিয়েছিলেন ইমরান খান। যার বিরুদ্ধে সরব ছিল আমেরিকা সহ পশ্চিমী দুনিয়া। তারপর থেকেই ইসলামাবাদ ওয়াশিংটনের কু-নজরে পড়েছিল বলে দাবি করেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী। নির্বাচিত একটি সরকার ফেলতে আমেরিকাকে আগেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছিলেন তিনি। সেই প্রসঙ্গ টেনেই শুক্রবার ইমরান বলেন, 'তিইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধিরা রাশিয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান না নেওয়ায় ইসলামাবাদের সমালোচনা করেছিলেন। কিন্তু ভারত সার্বভৌম রাষ্ট্র হওয়ায় সেই সাহস তাঁরা দেখাতে পারেননি।'
এক মার্কিন কূটনীতিক আগেই পাকিস্তানের শাসক বদলের হুঁশিয়ারি দিয়েছিল বলে দাবি করেছেন ইমরান খান। যা পাকিস্তানের ২২০ মিলিয়ান মানুষের জন্য খুবই 'লজ্জাজনক' বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। দেশবাসীর উদ্দেশে তাঁর জিজ্ঞাস্য, 'আমাদের যদি এভাবেই বাঁচতে হয়, তাহলে ব্রিটিশদের থেকে আমরা কেন স্বাধীনতা পেলাম।' পাক বিদেশনীতিকে সার্বভৌম করার দাবি তুলেছেন ইমরান খান।
দুর্নীতি, অরাজগতার অভিযোগে পাক ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে ইমরান খান সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব পেশ করেছিল বিরোধী শিবির। যার ভিত্ততে গত রবিবার ছিল আস্থা ভোট। কিন্তু, সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগে সেই ভোটাভুটি বাতিল করে দিয়েছিলেন ডেপুটি স্পিকার। প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই প্রধানমন্ত্রীও অ্যাসেম্বলি ভেঙে দতে প্রেসিডেন্টের কাছে আর্জি জানান। জানিয়েছিলেন যে, আগামী তিন মাসের মধ্যেই পাকিস্তানে নির্বাচন হবে। মনে করা হচ্ছিল যে, এই সময়কালে নয়া কৌশলপ্রয়োগে করে ফের মসনদে ফিরতে পারেন ইমরান। কিন্তু, ডেপুটি স্পিকারের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে যান বিরোধীরা। গত বৃহস্পতিবার পাক সুপ্রিম কোর্ট ভোটাভুটি বাতিলের সিদ্ধান্ত খারিজ করে দিয়েছে। এবং ইমরানকে পদে পুনর্বহাল করে শনিবার ফের ভোটাভুটির নির্দেশ দেয়।
সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের পরই বেকায়দায় পড়ে যান ইমরান খান। ভোটাভুটি হলে সংখ্য়াতত্ত্বের নিরিখে পাক অ্যাসেম্বলিতে তাঁর দলের হার নিশ্চিৎ। ফলে, আদালতের রায়ে এ দিন হতাশা প্রকাশ করতে দেখা যায় তাঁকে। কাপ্তানের কথায়, 'আমি আমদানি করা কোনও সরকারকে মেনে নেব না। প্রয়োজনে আমি রাস্তায় নামব। দেশজুড়ে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ হবে। শুধুমাত্র জনগণই আমাকে ক্ষমতায় আনতে পারে এবং আমি জনগণের সহায়তায় ফিরে আসবই।' দেশবাসীর প্রতি তাঁর আর্জি, ' বিদেশি ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ান। আপনি না প্রতিবাদ করলে কেউ আপনাকে বাঁচাতে আসবে না'
পাকিস্তান ন্যাশনাল অ্যাসেম্বলিতে মোট আসম সংখ্যা ৩৪২। ম্যাজিক সংখ্যা ১৭২। কিন্তু বর্তমানে জোট সরকারে ইমরানের দলের ১৫৫ জন সাংসদ রয়েছেন। শরিক দলগুলি ইতিমধ্যেই ইমরানের সঙ্গ ত্যাগ করেছেন। নাম লিখিয়েছে বিরোধী জোটে। এমনকী নিজের দলের লোকেরাও ইমরানের উপর অসন্তুষ্ট। ফলে ভোাভুটিতে পরাজয় নিশ্চিত। মনে করা হচ্ছে, পরিনাম বুঝেই ভারতের প্রসঙ্গ টেনে বিদেশি শক্তিকে দমনে দেশবাসীর আবেগে ধাক্কা দিতে চেয়েছেন পাক প্রধানমন্ত্রী।
Read in English