জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি কাজাখস্তানে। গত কয়েকদিন ধরে প্রতিবাদ-বিক্ষোভে উত্তাল এই সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অঙ্গরাজ্য। স্বাধীনতার পর এমন জনরোষ আছড়ে পড়ল প্রথম। দেশের সবচেয়ে বড় শহর আলমাটিতে বিক্ষোভ এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে রাষ্ট্রপতি চরম সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলেন। প্রতিবাদী দেখলেই গুলি করার ফরমান প্রেসিডেন্টের।
জানা গিয়েছে, শুক্রবার প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমার্ট তোকায়েভ সাংবিধানিক ফরমান জারি করেছেন। অগ্নিগর্ভ পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে প্রতিবাদীদের উপর গুলি চালানোর নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। দেশে লাগামহীন দুর্নীতি এবং জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধির প্রতিবাদে পথে নেমেছেন সাধারণ মানুষ। দফায় দফায় সর্বত্র পুলিশ-নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষ হচ্ছে উন্মত্ত জনতার। যার জেরে বহু নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্য এবং সাধারণ মানুষের মৃত্যু হয়েছে গত কয়েকদিনে।
শুক্রবার জাতীয় সংবাদমাধ্যমের সাহায্যে টেলিভিশনে ফরমান জারি করেছেন তোকায়েভ। নিরাপত্তা বাহিনীকে নির্দেশ দিয়েছেন, সরাসরি গুলি চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে। এই প্রসঙ্গে প্রেসিডেন্ট উল্লেখ করেছেন, অন্তত ২০ হাজার দুষ্কৃতী দেশের সবচেয়ে বড় শহর আলমাটিতে হামলা চালিয়ে সরকারি সম্পত্তি নষ্ট-লুঠপাট চালিয়েছে।
এর আগে কাজাখস্তানের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক বিবৃতি জারি করে জানায়, অন্তত ২৬ জন দাগী অপরাধীকে নিকেশ করেছে নিরাপত্তা বাহিনী এবং ১৮ জন গুরুতর জখম। কর্তৃপক্ষ আরও জানিয়েছে, অন্তত তিন হাজার শান্তিভঙ্গকারীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত ১৮ জন নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যের মৃত্যু হয়েছে সংঘর্ষে। এই সংখ্যা আরও বাড়ছে।
আরও পড়ুন দুর্ভিক্ষে জর্জরিত আফগানিস্তান, খাবারের জন্য সন্তানদের বিক্রি করে দিচ্ছেন মা-বাবারা
এদিকে, তোকায়েভ নিরুপায় হয়ে রাশিয়ার সাহায্য চান। যার ফলে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সেনা পাঠিয়েছেন কাজাখস্তানে। শান্তিরক্ষা বাহিনী পাঠানোর জন্য পুতিনকে অনেক ধন্যবাদ জানিয়েছেন তোকায়েভ। রাশিয়ার সংবাদ সংস্থা ইন্টারফ্যাক্সের রিপোর্ট, রুশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রক জানিয়েছে, সেনা কাজাখস্তান উড়ে গিয়েছে, এবং সেখানে আলমাটি বিমানবন্দর প্রতিবাদীদের হাত থেকে দখলমুক্ত করেছে। সেখানে ঘড়ির কাঁটা ধরে নিরাপত্তায় মোতায়েন রয়েছে রুশ সেনা।
কাজাখ সরকারের দাবি, প্রতিবেশি দেশের শান্তিরক্ষা বাহিনী সন্ত্রাসীদের খতম করতেই এসেছে। মস্কো চলতি সপ্তাহে ঘোষণা করেছে, আড়াই হাজার সেনা পাঠানো হবে। তোকায়েভের কাছ থেকে অনুরোধ পেয়েই রুশ সেনা কাজাখস্তানে যেতে শুরু করেছে। শুধু রাশিয়া নয়, সাংগঠনিক বাহিনীতে রয়েছে বেলারুশ, আর্মেনিয়া, তাজিকিস্তান এবং কিরঘিজস্তানের সেনা।