হরিদ্বারের 'ধর্মসভা'য় বিদ্বেশমূলক মন্তব্যকে হাতিয়ার আন্তর্জাতিকস্তরে ভারতকে কোণঠাসা করার মরিয়া চেষ্টা শুরু করল প্রকিস্তান। আসরে নেমেছেন সেদেশের খোদ প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান। দাবি করেছেন, এ দেশের শাসক দলের নেতাদের উপস্থিতিতে সংখ্যালঘু মুসলিমদের নিশানা করে প্রবোধানন্দ গিরি যা বলেছেন তা আঞ্চলিক শান্তি রক্ষায় বড় বাধা।
ভারতে সংখ্যালঘুরা বিপন্ন। এই অভিযোগ আগেও তুলেছিলেন ইমরান খান। এবার হরিদ্বারের ঘটনাকে তুলে ধরে তাঁর অভইযোগ, ভারতে সংখ্যালঘুদের চরমপন্থীদের দিয়ে নিশানা করা হচ্ছে। টুইটে ইমরান লিখেছেন যে, 'ভারতে সংখ্যালঘুদের, বিশেষ করে ২০ লক্ষ মুসলিম সম্প্রদায়কে নিশ্বেষ করার ডাক দিয়েছে চরমপন্থী এক হিন্দু সংগঠন। এরপরও নীরব মোদী সরকার। তাদের এই নীরবতা গণহত্যার ওই আহ্বানকে সমর্থন করে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। আন্তর্জাতিক মহলের উপযুক্ত পদক্ষেপের এটাই সেরা সময়।'
অন্য আরেকটি টুইটে ইমরান লিখেছেন, 'বিজেপি নেতৃত্বাধীন ভারতের সরকার সংখ্যালঘুদের নিশানা করেছে। এই চরমপন্থা বর্তমানে প্রকৃত অর্থেই আঞ্চলিক শান্তি বিঘ্নিত করার ক্ষেত্রে প্ররোচনাদায়ক। '
গত মাসে, পাকিস্তানের পররাষ্ট্র দফতর ভারতের সংশ্লিষ্ট আধিকারিককে তলব করে হরিদ্বারের ধর্মসভার বিদ্বেষমূলক মন্তব্যের প্রেক্ষিতে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। জানানো হয়, সুশীল সমাজ ওই ঘৃণ্য বক্তব্য নিয়ে ভীষণ চিন্তিত।
গত ১৭ থেকে ১৯ ডিসেম্বর হরিদ্বারে একটি রুদ্ধদ্বার ধর্মসংসদের আয়োজন করা হয়। যার মূল আয়োজক ছিলেন বিতর্কিত ধর্মগুরু যতি নরসিংহনন্দ। বিতর্কিত সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন হিন্দু রক্ষা সেনার প্রবোধানন্দ গিরি, বিজেপির মহিলা মোর্চার নেত্রী উদিতা ত্যাগী এবং বিজেপি নেতা অশ্বিনী উপাধ্যায়। ভাইরাল একটি ক্লিপে দেখা যায় প্রবোধানন্দ গিরি বলছেন, 'মায়ানমারের মতো আমাদের পুলিশ, সেনা, রাজনীতিবিদ এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের সমস্ত মানুষকে হাতে অস্ত্র তুলে নিতে হবে। সাফাই অভিযান চালাতে হবে।' অন্য একটি ক্লিপে পূজা শাকুন পান্ডে বলেন, 'যদি ওদের সমূলে ধ্বংস করতে চান, তাহলে ওদের হত্যা করুন। আমরা এমন ১০০ জন যোদ্ধাকে চাই, যারা ওদের ২০ লাখ লোককে হত্যা করবে।' আরও বেশ কয়েকজন ধর্মগুরু ওই সমাবেশ থেকে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে বিভিন্নরকম উসকানিমূলক মন্তব্য করেছেন।
এই বিদ্ভেষমূলক মন্তব্য ঘিরে ভারতে শোরগোল পড়ে যায়। ১৫ জনের বিরুদ্ধে এইআইআর হয়েছে। তালিকায় নাম রয়েছে, জিতেন্দ্র নারায়ণ ত্যাগী, যতি নরসিংহনন্দ ও গাজিয়াবাদের দশনা মন্দিরের প্রধান পুরোহিত।
ঘটনার তদন্তে পাঁচ সদস্যের সিট গঠন হয়েছে। দেশের শীর্ষ আদালতের ৭৬ জন সিনিয়ার আইনজীবী এই ঘটনায় অভিযুক্তদের বিচারের জন্য সুপ্রিম কোর্টের কাছে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা রুজুর আবেদন করেন। সোমবার সুপ্রিম কোর্টে হরিদ্বারের ঘৃণ্য মন্তব্যের ক্ষেত্রে জনস্বার্থ মামলার শুনানিতে রাজি হয়েছে।
Read in English