বিগত দুটি বছর নানান সময়ে নানান বয়সের মানুষ আক্রান্ত হয়েছেন ভাইরাস দ্বারা। দ্বিতীয় ঢেউ বেশি মাত্রায় সংক্রমণ ছড়ায় অল্পবয়সীদের মধ্যে। এরই মাঝে ভারতে তৃতীয় ঢেউ আছড়ে পড়ার আশঙ্কা সকলের মধ্যেই এবং পৃথিবীর অনেক দেশেই এর সূত্রপাত ঘটেছে। ভাইরাসের ছোবল ছাড়েনি শিশুদেরও। এবার বেশিরভাগ স্থানেই ৫ থেকে ১২ বছরের শিশুরা করোনা আক্রান্ত।
সাধারণত শিশুদের মধ্যে বেশিরভাগ তাড়াতাড়ি ভাইরাসের আক্রমণ থেকে সুস্থ হয়ে উঠছে। তবে নতুন সমীক্ষা অনুযায়ী, ১৭০০ ব্রিটিশ শিশু দীর্ঘ সময়ের জন্য সংক্রমণের আওতায় ছিল। তুলনামূকভাবে ৪.৪% শিশুরা কমপক্ষে চার সপ্তাহের মধ্যেই সুস্থ হয়ে গেলেও ১.৮% শিশুদের সম্পূর্ণ সেরে উঠতে আট সপ্তাহের বেশিই লাগছে। পূর্ববর্তী একটি গবেষণায় জানা যায়, কোভিডের এই দীর্ঘ সময়ের সংক্রমণ যাকে চিকিৎসা শাস্ত্রে "লং কোভিড" বলে সেটি বয়স্কদের শরীরেরই বেশি লক্ষ্য করা গেছে।
কিংস কলেজ লন্ডনের এন্ডোক্রিনোলজিস্ট এবং গবেষণার প্রধান লেখক ডা. এমা ডানকান বলেন, যদিও বা অল্প সংখ্যক শিশু কোভিডের সঙ্গে দীর্ঘ অসুস্থতার সম্মুখীন হয় তবে অনেকক্ষেত্রে গবেষণায় দেখা গেছে, শিশুদের এই সংক্রমণ তাদের পরিবারের অভিজ্ঞতার সঙ্গে সম্পর্কিত। তাদের অনেকেও লং কোভিডে আক্রান্ত হন। দ্য ল্যানসেট চাইল্ড অ্যান্ড অ্যাডোলসেন্ট হেলথ জার্নালে মঙ্গলবার প্রকাশিত এই গবেষণাটি কোভিড সিম্পটম স্টাডি স্মার্টফোন অ্যাপ দ্বারা সংগৃহীত তথ্যের বিশ্লেষণের উপর ভিত্তি করেই সিদ্ধান্তে আসা হয়। বাবা মায়েরা তাদের শিশুদের শারীরিক উপসর্গ সম্বন্ধে সেই অ্যাপটিতে জানান। গবেষণাটি ৫ থেকে ১৭ বছর পর্যন্ত শিশুদের নিয়ে করা হয়। বেশিরভাগ শিশুদের ক্ষেত্রে, অসুস্থতা হাল্কা এবং সংক্ষিপ্ত ছিল। শিশুরা গড়ে ছয় দিন অসুস্থ ছিল এবং গড়ে তিনটি উপসর্গ ছিল লক্ষ্যণীয়। সাধারণ লক্ষণগুলির মধ্যে মাথা ব্যাথা এবং ক্লান্তি সঙ্গে হালকা সর্দি কাশি। তবে, কিছু সংখ্যক শিশুদের মধ্যে সাধারণ উপসর্গগুলোর সঙ্গে নাক বন্ধ, ঘ্রাণশক্তি চলে যাওয়া এবং স্বাদ না পাওয়া এই ধরনের লক্ষ্যণগুলিও দেখা গেছে। ১২ থেকে ১৭ বছর বয়সীরা এই দীর্ঘ সংক্রমণের আওতায় ছিল।
আরও পড়ুন চিনে ফের সংক্রমণের বাড়বাড়ন্ত, ভয় ধরাচ্ছে ডেল্টার ছোবল
গবেষণার ধাপে, দেখা যায় যেসব শিশুরা উপসর্গ সম্পর্কে ওই অ্যাপে জানায় পরীক্ষার পর তদের রিপোর্ট নেগেটিভ আসে। চিকিৎসকদের পরামর্শ অনুযায়ী, সেই সব শিশুদের সাধারণ ভাইরাল ফিভার, সর্দি এবং কাশি হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এবং তাদের মধ্যে লক্ষণ বেশিদিন স্থায়ী হয় না। বাকি শিশুদের মধ্যে যারা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয় তাদের প্রত্যেকেই কমপক্ষে ৪ সপ্তাহ অসুস্থ ছিল।
শিশুদের শরীর সম্পর্কে চিকিৎসকরা বাবা-মায়েদের সবসময়ই ওয়াকিবহাল থাকতে অনুরোধ করেন। উপসর্গ মৃদু থাক কিংবা বেশি প্রথম থেকেই যেন সঠিক চিকিত্সার অধীনে থাকা হয় সেই বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেছেন তারা।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস বাংলা এখন টেলিগ্রামে, পড়তে থাকুন