এ যেন, 'ভূতের মুখে রামনাম!' বৈরী ভারতের প্রশংসায় পঞ্চমুখ পাক প্রধানমন্ত্রী ইমরান। ভারত-পাকিস্তানের মধ্যে শত্রুতার কথা গোটা বিশ্ব জানে। এই পরিস্থিতিতে ইমরান খানের ভারত-বন্দনায় চোখ কপালে উঠেছে গোটা বিশ্বের। ঠিক কী বলেছেন ইমরান? বিষয়টি হল, ইউক্রেন যুদ্ধের প্রেক্ষিতে সম্প্রতি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং বিশ্বের বিভিন্ন দেশ রাশিয়ার বিরুদ্ধে আর্থিক নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। একইসঙ্গে, আমেরিকা হুঁশিয়ারি দিয়েছে, রাশিয়ার সঙ্গে আর্থিক যোগাযোগ যে দেশ রাখবে, তাদের বিরুদ্ধেও কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাতেও, নয়াদিল্লি টলেনি। জানিয়ে দিয়েছে, রাশিয়ার থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি জারি থাকবে।
ভারতের এই স্বাধীন বিদেশনীতিরই প্রশংসা করেছেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। তবে, ভারতের প্রশংসা নাকি আমেরিকার কাটা ঘায়ে নুনের ছিটে দিতে চেয়েছেন ইমরান খান, তা নিয়ে জোর জল্পনা বিশেষজ্ঞ মহলে। সারা বিশ্বে আমেরিকার কাছাকাছি শক্তির মেরুকরণে উঠে এসেছে চিন। এই মুহূর্তে অর্থনৈতিক বিচারে পাকিস্তান অনেকটাই চিনের ওপর নির্ভরশীল। স্বাভাবিক ভাবেই আমেরিকার সঙ্গে সম্পর্ক শীতল হয়েছে পাকিস্তানের। এই অবস্থায় ভারতের প্রশংসা করে আসলে আমেরিকাকেই ইমরান নিশানা করতে চেয়েছেন বলে মনে করছেন কেউ কেউ।
যুদ্ধ শুরুর পর পরই রাশিয়ায় গিয়েছিলেন পাক প্রধানমন্ত্রী। পাকিস্তানের জন্য আর্থিক সাহায্যের আবেদনও করেছিলেন তিনি। কিন্তু, বর্তমান পরিস্থিতিতে ইউক্রেন নিয়ে ব্যস্ত রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ভারতের বিরূপ প্রতিবেশী দেশের প্রধানমন্ত্রী ইমরানকে মোটেও গুরুত্ব দেননি। কার্যত খালি হাতেই মস্কো থেকে ফিরতে হয়েছে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে। এই অবস্থায় ফের আমেরিকাকে অতীতের মতো পাশে পেতে চাইছে পাকিস্তান। আর, সেই কারণেই ভারতের বিরুদ্ধে আমেরিকাকে খেপিয়ে তুলতে চাইছেন ইমরান। ভারতের ওপর ক্ষোভ বাড়লে আমেরিকা আবার পাকিস্তানের কাছাকাছি চলে আসবে, এমনটাই আশা ইমরানের।
তবে, বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে বর্তমানে পাকিস্তানে ইমরান বেশ চাপে আছেন। পাকিস্তানের সেনাবাহিনী তাঁর ওপর ক্ষুব্ধ। কারণ, ইমরানের আমলে পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর দিকে তেমন একটা নজর দেওয়া হয়নি। তার ওপর পাকিস্তানের অতিরিক্ত চিন নির্ভরতা নিয়েও ইমরানের ওপর ক্ষুব্ধ পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতাদের একাংশ। কারণ, চিনের বিরুদ্ধে পাকিস্তানে নিম্নমানের পণ্য সরবরাহ, পাকিস্তানের শ্রমিকদের ন্যূনতম শ্রমিকের মর্যাদা না-দেওয়া, পাকিস্তানের মহিলাদের বিয়ে করে চিনে নিয়ে গিয়ে দুর্ব্যবহারের মতো নানা অভিযোগ রয়েছে। পরিস্থিতি এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনা হয়েছে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে। এই পরিস্থিতিতেই মুখ খুলেছেন পাক প্রধানমন্ত্রী। তাঁর দল তেহরিক-ই-ইনসাফের শক্তঘাঁটি বলে পরিচিত খাইবার পাখতুনখাওয়ায় ইমরান পাকিস্তানের স্বাধীন বিদেশনীতির পক্ষে সওয়াল করছেন।
আরও পড়ুন- ইউক্রেন যুদ্ধে অবস্থান ঠিক করতে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক মোদীর
অতীতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের বিদেশনীতি নিয়ন্ত্রণ করত বলে বারবার অভিযোগ উঠেছে। আর বর্তমানে চিন, সেটা নিয়ন্ত্রণ করে বলেই অভিযোগ। পাখতুনখাওয়ায় সমর্থকদের কাছে বলতে গিয়ে, এনিয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করতে দেখা যায় পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীকে। তিনি বলেন, 'আমরা আফগানিস্তানের যুদ্ধে আমেরিকার সঙ্গী হয়েছিলাম। ৮০ হাজার জওয়ান খুইয়েছি। এক লক্ষ কোটি মার্কিন ডলারও নষ্ট হয়েছে। আমি পাকিস্তানের মানুষের স্বার্থে কাজ করে যাব। আমি কারও কাছেই মাথানত করব না। দেশকেও কারও কাছে মাথানত করতে দেব না।'
পাশাপাশি, নিজের রাশিয়াপ্রীতি প্রমাণ করতে গিয়ে ইমরান অভিযোগ করেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি তাঁর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। রাশিয়ার বিরুদ্ধে ইউক্রেনকে সমর্থন করার জন্য তাঁকে বলেছেন। এটা করে ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি প্রোটোকল ভঙ্গ করেছেন বলেই অভিযোগ ইমরানের। তবে, এসব বলেও যেন তাঁর মনোবাসনা পূর্তি হয়নি। কার্যত, এই ভঙ্গীতেই ভারতের তেল আমদানির প্রসঙ্গ টেনেছেন ইমরান। আর, ভারতের স্বাধীন বিদেশনীতির প্রশংসা করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষোভের আগুন কার্যত বাড়িয়ে তুলতে চেয়েছেন।
Read story in English