সাংবিধানিক নিয়ম-নীতির বালাই নেই। দলেরই লোক ডেপুটি স্পিকার কাসিম খান সুরিকে দিয়ে অনাস্থা প্রস্তাব বাতিল করিয়ে দিয়েছিলেন। চাল চেলে মুলতুবি করিয়ে দিয়েছিলেন পার্লামেন্ট। জাতীয়তাবাদের আবেগ উসকে চেনা ২২ গজের মতোই চালনা করতে চেয়েছিলেন পাকিস্তানের রাজনীতিও। স্রেফ নিজের ভূমিকাকে বড় করে দেখাতে আর্থিক দিক দিয়ে বিপর্যস্ত পাকিস্তানকে নির্বাচনের মুখে ঠেলে দিতেও কসুর করেননি ইমরান খান। প্রাক্তন বিচারপতিকে তদারকি প্রধানমন্ত্রীর কুর্সি পর্যন্ত পাইয়ে দিয়েছেন এজন্য। তখনই প্রতিবাদ করেছিলেন বিরোধী নেতা শাহবাজ শরিফের মতো পোড়খাওয়া নেতারা। আইনের চৌহদ্দিতে জবাব দেওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছিলেন ইমরানকে।
এবার পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে কিং আর কিং মেকার হওয়া, দুটো স্বপ্নই ভেঙে গেল পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর। রাজনীতিটা যে ক্রিকেট দুনিয়ার ২২ গজ না, সেটা কার্যত স্পষ্ট করে পাকিস্তান সুপ্রিম কোর্ট বৃহস্পতিবার জানাল, পার্লামেন্ট মুলতুবির সিদ্ধান্তটাই বাতিল। ফলে, প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানকে আদালতের নির্দেশে শনিবার, ৯ এপ্রিল আস্থাভোটের মুখে পড়তে হবে। যা কার্যত বড় বিপর্যয়ই ইমরানের কাছে। কারণ, তাঁর প্রতিষ্ঠিত দল তেহরিক-ই-ইনসাফ ইতিমধ্যেই পাকিস্তানের আইনসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারিয়েছে।
বৃহস্পতিবার, তাঁর ঐতিহাসিক নির্দেশে পাকিস্তানের প্রধান বিচারপতি উমর আতা বান্দিয়াল স্পষ্ট জানান, পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী সংবিধানের নির্দেশ মানতে বাধ্য। তিনি পাকিস্তানের প্রেসিডেন্টকে পার্লামেন্ট ভেঙে দেওয়ার পরামর্শই দিতে পারেন না। ইমরান ঘনিষ্ঠ পাকিস্তানের পার্লামেন্টের ডেপুটি স্পিকার সুরি যেভাবে অনাস্থা প্রস্তাব বাতিল করেছেন, তা 'ভ্রান্তিপূর্ণ' বলেও কড়া সমালোচনা করেছেন প্রধান বিচারপতি। শুধু 'ভ্রান্তিপূর্ণ'ই না। সুরির নির্দেশ, পাকিস্তানের সংবিধানের ৯৫ নম্বর ধারা লঙ্ঘন করেছে বলেও স্পষ্ট জানিয়েছেন বিচারপতি বান্দিয়াল।
প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চে বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ন'টায় মামলাটি ওঠে। সেখানে কড়া সমালোচনার মুখে পড়তে হয় প্রেসিডেন্ট আরিফ আলভির আইনজীবী জনপ্রতিনিধি আলি জাফরকে। তাঁকে আদালত প্রশ্ন করে, প্রধানমন্ত্রী কি জনপ্রতিনিধি ছিলেন না? পার্লামেন্ট কি সংবিধানের রক্ষাকর্তা ছিল না? সবকিছুই যদি আইনমাফিক চলে, তবে কীভাবে সাংবিধানিক সংকট তৈরি হতে পারত বলে আশঙ্কা করছিলেন প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান? প্রধান বিচারপতির আরও প্রশ্ন, পাকিস্তানে সরকার গঠন কি পার্লামেন্টের অভ্যন্তরীণ বিষয় ছিল?
Read story in English