প্রতিবেশী হিসেবে চিন বরাবরই পাকিস্তানকে অগ্রাধিকারের তালিকায় রেখেছে। পাকিস্তানের অগ্রগতির ক্ষেত্রেও সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে। এটা গোটা বিশ্ব বারবার দেখেছে। এবার সেটা আরও স্পষ্ট করে দিলেন চিনের প্রধানমন্ত্রী লি কে-চাঙ। তিনি চিন সফরে আসা পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। সেই বৈঠকে পাকিস্তান সম্পর্কে চিনের মনোভাব স্পষ্ট করে দিয়েছেন চিনের প্রধানমন্ত্রী।
পালটা, ইমরানও আশ্বাস দিয়েছেন যে পাকিস্তানে চিনের নাগরিকদের কোনও অমর্যাদা হবে না। তাঁদের নিরাপত্তার যাবতীয় দায়িত্ব ইসলামাবাদের। বেজিঙের ' গ্রেট হল অফ পিপল'-এ উভয় রাষ্ট্রনেতার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠক হয়েছে। সেখানেই পরস্পরের পাশে থাকার আশ্বাস দিয়েছেন দুই রাষ্ট্রনেতা।
লি শুধু চিনের প্রধানমন্ত্রীই নন। তিনি চিনের শাসকদল, 'কমিউনিস্ট পার্টি অফ চায়না'র দ্বিতীয় শীর্ষ নেতাও। তাই তাঁর বক্তব্য আসলে যে চিনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিঙেরই বক্তব্য, তা নিয়ে কোনও সন্দেহ নেই। ইতিমধ্যেই পাকিস্তানের সঙ্গে অক্ষ তৈরি করে চিন বহুদিন ধরেই ভারতকে চাপে ফেলার চেষ্টা করছে।
শুধু তাই না, সাম্প্রতিক সময়ে রাশিয়ার সঙ্গে চিনের সম্পর্কেরও বিশেষ উন্নতি হয়েছে। বিশেষ করে ইউক্রেন নিয়ে ইউরোপে বেশ চাপে রয়েছে রাশিয়া। সেক্ষেত্রে তারা পাশে পেয়েছে চিনকে। এমনিতে আমেরিকার পাশাপাশি রাশিয়ার সঙ্গেও ভারতের সম্পর্ক বরাবরই ভাল। এই ভাল থাকার অন্যতম কারণ, রাশিয়া থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্রসম্ভার কিনে থাকে নয়াদিল্লি।
আরও পড়ুন ইউক্রেন ইস্যুতে চিন্তা বাড়ছে, তড়িঘড়ি মস্কোর পথে ফ্রান্স-জার্মানির শীর্ষ নেতৃত্ব
এই পরিস্থিতিতে আমেরিকার পাশাপাশি, রাশিয়ার জন্যও ভারতের বিরুদ্ধে পুরোদস্তুর লড়াইয়ে নামতে পারে না চিন। তবে, তার মধ্যেই বিরূপ প্রতিবেশীর মতো তারা ভারতের বিরুদ্ধে সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে চায়। ডোকলাম-সহ বিভিন্ন সীমান্তে চিনের সঙ্গে ভারতের সীমান্ত উত্তাপ গোটা বিশ্বের কাছে ওপেন সিক্রেট। এই পরিস্থিতিতে অপর এক বিরূপ প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গেও সম্পর্ক দৃঢ় করে দীর্ঘদিন ধরেই নয়াদিল্লিকে চাপে রাখার চেষ্টা চালাচ্ছে বেজিং। এই পরিস্থিতিতে চিনের শীতকালীন অলিম্পিকের আসর এড়িয়েছে ভারত। আর, সেই আসরেই ডাক পেয়ে বেজিঙে হাজির হয়েছেন ইমরান।
চিনের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে ইমরান জানিয়েছেন, গোটা উপমহাদেশে শান্তি এবং স্থিতাবস্থার স্বার্থে কাজ করে চলেছে চিন এবং পাকিস্তান। দুই রাষ্ট্রের কৌশলগত বন্ধন মৌলিক স্বার্থ চরিতার্থ করছে। সেই মৌলিক স্বার্থ যে আসলে ভারতের সঙ্গে শত্রুতা, তা অবশ্য বুঝতে কারও অসুবিধা হয়নি। কারণ, চিন এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে জম্মু-কাশ্মীর প্রসঙ্গ উঠেছে। জম্মু-কাশ্মীরের পরিস্থিতি 'গুরুতর' বলে মেনে নিয়েছেন উভয় রাষ্ট্রনেতাই। তবে, সেটা অবশ্য পাকিস্তানের দাবি। কারণ, চিনের সরকারি সংবাদ সংস্থা দুই রাষ্ট্রনেতার বৈঠকে জম্মু-কাশ্মীরের বিষয়টি থাকার কথা এড়িয়ে গিয়েছে।
আরও পড়ুন বেজিংয়ে জিনপিংয়ের সঙ্গে পুতিনের বৈঠক ঘিরে বিশ্ব রাজনীতিতে জল্পনা
ভারতের ব্যাপারে আলোচনার পাশাপাশি, চিন এবং পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে উঠেছে শিল্পের প্রসঙ্গও। পাকিস্তান থেকে আরও বেশি পরিমাণ কাঁচামাল আমদানিতে রাজি হয়েছে চিন। পাশাপাশি, পাকিস্তানের অর্থনীতিকে আরও বেশি চিননির্ভর করতে সেখানে রফতানি বাড়ানোর কথাও বলেছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে আমেরিকার চেয়েও মাত্রাতিরিক্ত চিননির্ভর পাকিস্তান। সেকথা মাথায় রেখে ইমরানও জানিয়ে দিয়েছেন, তাঁর সরকার পাকিস্তানে চিনের সংস্থাগুলোর সুযোগ-সুবিধার বিষয়গুলো দেখবে। চিনের সংস্থাগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করবে।
ইমরানের এই আশ্বাসের কারণ, গত কয়েক বছর ধরেই পাকিস্তানে চিনের নাগরিকদের ওপর ধারাবাহিক হামলা হচ্ছে। চিনের নাগরিকরা পাকিস্তানে প্রভুর মতো আচরণ করেন। এমনকী, পাকিস্তানের নারীকে বিয়ে করে চিনে নিয়ে গিয়ে তাঁদের উপযুক্ত মর্যাদাও দেওয়া হচ্ছে না। এমন অভিযোগও বারবার উঠেছে। আর, তারই প্রেক্ষিতে বারবার পাকিস্তানের জনগণের রোষ আছড়ে পড়ছে চিনের নাগরিকদের ওপর।
আরও পড়ুন পাকিস্তান-চিনের জোট নিয়ে রাহুলের মন্তব্যকে সমর্থনে নারাজ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
গতবছর শুধুমাত্র একটা হামলাতেই পাকিস্তানে ৯ জন চিনা নাগরিক প্রাণ হারিয়েছেন। বর্তমানে পাকিস্তানের মাটিতে চিনের বেশ কয়েকটি প্রকল্পের কাজ চলছে। তার মধ্যে কেবল একটা প্রকল্পেই প্রায় হাজারখানেক চিনের নাগরিক পাকিস্তানে কাজ করছেন। তাই পাকিস্তানে কর্মসূত্রে বসবাসকারী তাঁদের নাগরিকদের নিয়ে রীতিমতো চিন্তিত বেজিং। সেকথা মাথায় রেখেই বেজিঙের বৈঠকে পাকিস্তানে বসবাসকারী চিনের নাগরিকদের নিরাপত্তার আশ্বাস দিয়েছেন ইমরান।