সরকার টেকানোর স্বপ্ন ভেঙে খানখান হয়ে গিয়েছে। তবুও পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান চোলিস্তান মরুভূমিতে মরুদ্যানের মতো সমাধানের খোঁজ চালাচ্ছেন। রবিবার পর্যন্ত পাকিস্তানের পার্লামেন্টের অধিবেশন মুলতুবি করে দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যেই পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী ইমরান খান জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দিলেন। ভাষণে জানালেন, রবিবার আস্থাভোট হবে। পাকিস্তানের ভাগ্য নির্ধারণ হবে। ক্রিকেট ময়দানে তিনি শেষ বল পর্যন্ত অপেক্ষা করেছেন। রাজনীতিতেও শেষ দেখে ছাড়বেন। পাকিস্তানের বিরোধীদের মিরজাফর, মির সাদিকের সঙ্গে তুলনা টানলেন। অভিযোগ করলেন, বিরোধীরা প্রত্যেকেই বিদেশি শক্তির সঙ্গে হাত মিলিয়ে বসে আছেন। পাকিস্তানের সঙ্গে বিরোধীরা বিশ্বাসঘাতকতা করছে বলেও অভিযোগ করলেন। বিরোধীদের নেতাদের বিরুদ্ধে বিপুল অভিযোগ। পাকিস্তানের আদালতে তারা দোষী সাব্যস্ত হয়েছেন। তবুও তারা ষড়যন্ত্র করছেন। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর সঙ্গে গোপনে দেখা করেছেন নওয়াজ শরিফ।
৪০ মিনিটের ভাষণে ইমরান অভিযোগ করলেন, তাঁর পরিবারের কেউ রাজনীতিতে নেই। তিনি নিজের ক্ষমতায় আজ এতবড় পজিশনে উঠে এসেছেন। বিরোধী নেতাদের মতো, ক্ষমতায় থাকার সুবাদে নিজের ব্যবসা বাড়াননি। ইমরানের অভিযোগ, ভারত, আমেরিকা এবং রাশিয়ার কথা না-শোনার কারণেই তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হচ্ছে। পাকিস্তানের সব বিরোধী রাজনৈতিক নেতারা ভারত, আমেরিকা এবং রাশিয়ার সঙ্গে হাত মিলিয়ে বসে আছে বলেও কার্যত অভিযোগ করলেন পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী।
আগেই জল্পনা বাড়িয়ে ইমরানের ভাষণের কথা জানিয়ে টুইট করেছিলেন পাক তথ্য-সম্প্রচারমন্ত্রী ফাওয়াদ হুসেন। তাঁর টুইট অনুসরণ করে সন্ধে ৭টা ১৫ নাগাদ সেই ভাষণ দেওয়ার কথা বলেই প্রচারও করে দেয় পাকিস্তানের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম। এর আগে পাকিস্তানের বিদেশমন্ত্রী শাহ মেহমুদ কুরেশির সঙ্গে দীর্ঘক্ষণ বৈঠক করেন ইমরান। অভিযোগ করেন, বিদেশি শক্তি তাঁকে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত করতে চাইছে। সেই সংক্রান্ত চিঠিও দলের মন্ত্রীদের মধ্যে তিনি বিলি করেছেন। যদিও বিরোধী থেকে পাকিস্তানের পার্লামেন্টের বাকি কারও কাছে তেমন কোনও চিঠি দেখাতে পারেননি পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী। তবে, পদও ছাড়েননি। আবার পার্লামেন্টের অধিবেশন রবিবার পর্যন্ত পিছিয়ে সময় কেনার চেষ্টা করেছেন। যদিও তাতে বিশেষ লাভ হয়নি। পাকিস্তান সরকারে ইমরানের দল তেহরিক-ই-ইনসাফের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছে দুই শরিক দল মুত্তাহিদা কউমি মুভমেন্ট বা এমকিউএম এবং বালোচিস্তান আওয়ামি পার্টি বা বিএপি।
৩৪২ আসনের পাকিস্তান পার্লামেন্টে এখন ইমরানের দল সংখ্যালঘু। বিরোধী দল পাকিস্তান মুসলিম লিগ (নওয়াজ)-এর প্রধান শাহবাজ শরিফ ইমরানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনেন। তারপর থেকেই অধিবেশন এড়াতে বারাবর পার্লামেন্ট মুলতুবির রাস্তায় হাঁটছে ইমরানের দল। শেষবার এনিয়ে অধিবেশন শুরু হতেই ইমরানের বিশেষ সহযোগী তথা জনপ্রতিনিধি বাবর আওয়ান সভায় মুলতুবি প্রস্তাব আনেন। কারণ, পার্লামেন্টের কক্ষ পাকিস্তানের নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকের জন্য জরুরি প্রয়োজন, এই যুক্তিতে। আর, সেই যুক্তি দেখিয়েই রবিবার সকাল সাড়ে এগারোটা পর্যন্ত মুলতুবি হয়ে যায় পাকিস্তান পার্লামেন্টের অধিবেশন।
Read story in English