দিনটা ছিল ১০ এপ্রিল, ১৯৭৩। পাকিস্তানের সংসদে সেদেশের সংবিধান স্বীকৃতি পেয়েছিল। ছয় দশক পূর্ণ হওয়ার ঠিক একবছর আগে পাকিস্তানের সংবিধান যেন এই প্রথম বোঝাল সে সাবালক হয়েছে। মধ্যরাত পেরিয়ে গিয়েছিল। তাই, ইংরেজি মতে ১০ এপ্রিল ধরা উচিত। ৩৪২ আসনের জাতীয় সংসদে ১৭৪ জন জনপ্রতিনিধির অনাস্থা প্রকাশে টলে গেল প্রধানমন্ত্রী ইমরান খানের গদি। ভারতের বিরূপ প্রতিবেশী এই দেশ বারবার সেনা অভ্যুত্থান দেখেছে। নির্বাচিত সরকারের অপসারণ দেখেছে। কিন্তু, এই প্রথম অনাস্থা ভোটে একজন প্রধানমন্ত্রীর অপসারণ দেখল।
সম্প্রতি ইমরান খান, পাকিস্তানবাসীর উদ্দেশ্যে তাঁর বক্তব্যে বারবার ভারতের প্রশংসা করছিলেন। সেই জন্য ইমরানের সমালোচকরা কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। তাঁরা বলতে শুরু করেছিলেন, 'এমন করতে তো ইমরানকে এবার মোদীই বলবেন, পাকিস্তানে আর দরকার কী? বরং, ভারতেই চলে আসুন।' শুধু তাই নয়, ইমরানকে পদত্যাগে উত্সাহিত করতে অটলবিহারী বাজপেয়ীর উদাহরণও দিয়েছেন পাকিস্তানের অনেক বিদ্বজ্জনই। ১৯৯৮ সালে কেন্দ্রে ক্ষমতায় আসার ১৩ মাস পর ১৯৯৯ সালের এপ্রিলে অটলবিহারীর সরকারের ওপর থেকে জয়ললিতা সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন। আস্থা প্রমাণ করতে গিয়ে মাত্র একভোটের ব্যবধানে হেরে বাজপেয়ীর সরকারকে পদত্যাগ করতে হয়। সেই সময় রাষ্ট্রপতির কাছে পদত্যাগপত্র পেশ করতে যাওয়ার আগে সংসদে বাজপেয়ী তাঁর ভাষণে বলেছিলেন, তিনি পরাজয় স্বীকার করে নিচ্ছেন। দেশসেবা করতে প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসেছিলেন। এবার বিরোধী হিসেবে দেশসেবা করবেন। এই বক্তব্য এবং মানসিকতা, বাজপেয়ীর মর্যাদা কয়েকগুণ বাড়িয়েছিল বলে ইমরানকে বোঝানোর চেষ্টা করেছেন পাকিস্তানের বিদ্বজ্জনদের একাংশ।
আরও পড়ুন- নাটকীয়তায় ভরা ইমরানের অপসারণ, সাজা থেকে বাঁচবেন কি?
অনেকে আবার টেনে এনেছেন কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্তের প্রসঙ্গও। আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্তে আউট হয়ে গিয়েছিলেন কৃষ্ণমাচারি শ্রীকান্ত। সেকথা জানতে পেরে তাঁকে ক্রিজে ফিরিয়ে এনেছিলেন ইমরান খান। যদিও ফের আউট হয়ে যান শ্রীকান্ত। সেই ইমরান কেন প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়তে এত গড়িমসি করলেন, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলছেন পাকিস্তানের ক্রীড়াদুনিয়ার অনেকেই।
তবে, ইমরানের সমর্থকও নেহাত কম নেই। তাঁরা বলতে শুরু করেছেন, ইমরান পাকিস্তানের ভালোর জন্যই সব করছিলেন। তাঁর সরকারের বিরুদ্ধে দুর্নীতির কোনও অভিযোগ নেই। তিনি পাকিস্তানকে বাঁচাতেই 'উজির-এ-আজম'-এর পদ ছাড়তে চাইছিলেন না। ষড়যন্ত্র করে ইমরানের এই লক্ষ্য সফল হতে দিল না আমেরিকা। এই ইমরান সমর্থকদের দলে আছেন পাকিস্তান ক্রিকেট দলে তাঁর একদা ঘনিষ্ঠ জাভেদ মিয়াঁদাদও। আর, এই সব কারণেই পাকিস্তানের মার্কিন দূতাবাসের নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
Read story in English