২ বছরের বেশি সময় কেটে গিয়েছে। কিন্তু, এখনও গোটা বিশ্বেই দাপিয়ে বেড়াচ্ছে করোনা । মানুষ যখনই একটু ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে, ঠিক তখনই করোনার একের পর এক ঢেউ এসে আবার সব স্তব্ধ করে দিচ্ছে। ফলে মানুষের জীবনের স্বাভাবিক ছন্দই যেন কোথাও হারিয়ে গিয়েছে। আর এই পরিস্থিতিতেই এক অভিনব সিদ্ধান্ত নিল ব্রিটেন সরকার । বলা হয়েছে, করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পর এখন থেকে আর কাউকে আইসোলেশনে থাকতে হবে না। আগামী সপ্তাহ থেকেই এই নির্দেশিকা কার্যকর হয়ে যাবে।
প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, "করোনা সংক্রমণ সংক্রান্ত যাবতীয় বিধিনিষেধ শিথিল করা হচ্ছে। কারণ মানুষকে করোনার সঙ্গে বাঁচতে শিখতে হবে। নিজেদের স্বাধীনতাকে ব্যাঘাত না ঘটিয়ে কীভাবে নিজেদের রক্ষার করার কৌশল জানতে হবে সাধারণ মানুষকে। তার মানে আমি এটা বলছি না যে সব সতর্কতাকে হাওয়ায় ভাসিয়ে দিতে। এটাই সবার আত্মবিশ্বাস ফিরে পাওয়ার সঠিক সময়। কিছু নির্দিষ্ট বিষয়কে নিষিদ্ধ করে না রেখে, এখন ভালো থাকার সবাইকে দায়িত্ব নিতে হবে। তার মাধ্যমেই পরিস্থিতির উন্নতি হবে। পাশাপাশি মানুষের মধ্যে আত্মবিশ্বাসও ফিরে আসবে।"
তবে ব্রিটেন সরকারের এই সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করেছেন কয়েকজন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ। কারণ তাঁদের মতে, বিধিনিষেধ তুলে দেওয়া ও আইসোলেশনে না থাকার সিদ্ধান্ত অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। এর ফলে সংক্রমিতের সংখ্যা আরও বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। পাশাপাশি আরও ভয়াবহ কোনও স্ট্রেনের দেখা মিলতে পারে। কয়েকজনের মতে, 'বরিস জনসন যুদ্ধ শেষ হওয়ার আগেই জয়ী ঘোষণা করে দিচ্ছেন।'
ব্রিটেনে করোনা সংক্রান্ত একাধিক বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়েছিল জানুয়ারিতেই। ২৭ জানুয়ারি থেকেই ব্রিটেনে মাস্ক পরা, ওয়ার্ক ফ্রম হোম আর বাধ্যতামূলক নয় বলে ঘোষণা করা হয়েছিল। এমনকী, সামাজিক জমায়েত বা বার–রেস্তরাঁ কিংবা নাইট ক্লাবে যেতে হলে আর করোনা শংসাপত্রেরও কোনও প্রয়োজন নেই বলে জানানো হয়। পাশাপাশি কাজের জন্য বা বিনোদনের জন্য বাড়ির বাইরে বেরনোর উপর থেকেই বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া হয়েছিল। তবে এতদিন করোনায় আক্রান্ত হলে ৫ দিন আইসোলেশনে থাকতে হত ব্রিটেনে। তারপর পঞ্চম ও ষষ্ঠ দিন র্যাপিড টেস্টের নেগেটিভ রিপোর্ট প্রয়োজন হত। কিন্তু, এখন থেকে সেই বিধিনিষেধও শিথিল করে দিতে চলেছে ব্রিটেন সরকার।
এরই মধ্যে আবার সেখানে রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের করোনায় আক্রান্ত হওয়ার খবর সামনে এসেছে। রবিবার এই তথ্য প্রকাশ করেছে বাকিংহাম প্যালেস । জানানো হয়েছে করোনা আক্রান্ত হয়েছেন ব্রিটেনের ৯৫ বছর বয়েসী দ্বিতীয় এলিজাবেথ। রবিবারই তাঁর করোনার রিপোর্ট পজিটিভ এসেছে। তবে তাঁর করোনার উপসর্গ বেশ মৃদু বলেই জানানো হয়েছে। কয়েকদিন আইসোলেশনে থাকবেন তিনি।
এদিকে এসবের মাঝেই বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার সতর্কবানী, এটাই করোনা ছড়িয়ে পড়ার আদর্শ সময়। সেই সঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার আঞ্চলিক প্রধান আরও বলেন, “কোভিডের দাপট কমাতে হলে এখনই বিধিনিষেধ তুলে নেওয়া যাবে না।” দেশগুলির টিকাকরণ অভিযান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “বসনিয়া, বুলগেরিয়া, কিরঘিজস্তান, ইউক্রেন ও উজবেকিস্তানের মতো দেশে ৬০ বা তার চেয়ে বেশি বয়সিদের মাত্র ৪০ শতাংশ এখনও পর্যন্ত টিকার দু’ টি ডোজ পেয়েছেন। এটা হতাশাজনক।”এর মাঝেও সাহসী পদক্ষেপের পথে হাঁটল ব্রিটেন। ২০২২-এর শেষে উন্নতি হবে করোনা পরিস্থিতি, জানালেন WHO-এর প্রধান বিজ্ঞানী।