এ যেন গোদের উপর বিশ-ফোড়া। সংকট-বিধ্বস্ত শ্রীলঙ্কা মঙ্গলবার পেট্রোলের দাম সর্বকালীন রেকর্ড স্পর্শ করেছে। পেট্রোলের দাম ২৪.৩ শতাংশ এবং ডিজেলের ৩৮.৪ শতাংশ বেড়েছে। গত কয়েক মাস ধরে আর্থিক সংকটে জর্জরিত দ্বীপ রাষ্ট্র। বৈদেশিক মুদ্রা ভাণ্ডার কার্যত ফাঁকা। ফলে বিদেশ থেকে অপরিশোধিত তেল কিনতে পারছে না শ্রীলঙ্কা সরকার। এই অবস্থায় আরও বাড়ল জ্বালানির দাম।
গত ১৯ এপ্রিল থেকে দ্বিতীয়বার জ্বালানির দাম বৃদ্ধি পেল। সবচেয়ে বেশি ব্যবহৃত অকটেন ৯২ পেট্রোলের দাম হবে প্রতি লিটারে ৪২০ টাকা (১.১৭ মার্কিন ডলার) এবং ডিজেল ৪০০ টাকা (১.১১ মার্কিন ডলার) যা সর্বকালের সর্বোচ্চ।
অকটেন ৯২ পেট্রোলের দাম ২৪.৩ শতাংশ বা ৮২ টাকা এবং ডিজেল ৩৮.৪ শতাংশ বা ১১১ টাকা প্রতি লিটার বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রায়ত্ত্ব তেল সংস্থা সিলন পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন বা সিপিসি।
এ দিন সকালে শ্রীলঙ্কার বিদ্যুৎ ও জ্বালানি মন্ত্রী কাঞ্চনা উইজেসেকারা টুইটারে লিখেছেন, “আজ ভোর ৩টে থেকে জ্বালানির দাম সংশোধন করা হল। জ্বালানির মূল্য মন্ত্রিসভা দ্বারা অনুমোদিত, যা প্রয়োগ করা হল। এই সংশোধিত মূল্যের সঙ্গে তেলের জ্বালানি তেলের আমদানি, আনলোড, স্টেশনে বিতরণ এবং ট্যাক্সের সমস্ত খরচ অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।”
পাশাপাশি বলা হয়েছে যে, প্রতি পাক্ষিক বা মাসিক হারে জ্বালানি তেলের দাম সংশোধন করা হবে।”
শ্রীলঙ্কায় ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত্ব তেল সংস্থা ইন্ডিয়ান অয়েল কর্পোরেশনের সহযোগী সংস্থা লঙ্কা আইওসিও জ্বালানির খুচরা দাম বাড়িয়েছে। শ্রীলঙ্কা আইওসি আইওসি-র সিইও মনোজ গুপ্তা পিটিআই-কে বলেন, “আমরা সিপিসি-এর সঙ্গে সাদুর্য রেখে দাম বাড়িয়েছি।"
এদিকে, অটোরিকশা অপারেটরদের তরফে বলা হয়েছে যে, তারা প্রথম ১ কিলোমিটারের জন্য ৯০ টাকা এবং তারপর প্রতি কিলোমিটারের জন্য ৪০ টাকা করে শুল্ক বাড়ানো হবে।
খরচ কমাতেও পদক্ষেপ করেছে সরকার। শ্রীলঙ্কা সরকার ঘোষণা করেছে যে, যেসব প্রতিষ্ঠানে কর্মচারীদের শারীরিকভাবে উপস্থিতি অপরিহার্য সেখানে তাঁদের যেতেই হবে। বাকিদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বাড়ি থেকে কাজের নির্দেশ দিতে পারে।
পাম্পগুলিতে জ্বালানি বজায় রাখতে বিকল্পের কথা ভাবছে শ্রীলঙ্কা সরকার। কারণ জ্বালানি বিদেশ থেকে আমদানির ক্ষেত্রে বৈদেশিক অর্থ অপ্তুলতার জেরে গুরুতর সংকটের মুখোমুখি শ্রীলঙ্কা।
১৯৪৮ সালে ব্রিটেনের থেকে স্বাধীনতা লাভের পর এই প্রশ্ম শ্রীলঙ্কার অবস্থা সবচেয়ে খারাপ। আমদানির জন্য যথেষ্ট ডলারের অভাব রয়েছে। সব জিনিসেক দাম ব্যাপকহারে বেড়েছে। নাজেহাল অবস্থা সাধারণ মানুষের।
অর্থনৈতিক সংকট শ্রীলঙ্কায় রাজনৈতিক সংকটেরও সূত্রপাত করেছে এবং রাষ্ট্রপতি গোটাবায়া রাজাপক্ষের পদত্যাগের দাবি উঠেছে। এই সংকটের দরুন ইতিমধ্যেই রাষ্ট্রপতির বড় ভাই তথা সেদেশের প্রধানমন্ত্রী পদ থেকে ৯ মে ইস্তফা দিতে বাধ্য হয়েছেন মাহিন্দা রাজাপক্ষে।
Read in English